লগইন করুন
মানুষের সাধারণ সূক্ষ্ম একটি দোষ হলো, আল্লাহ বান্দাকে কোন নি‘আমত দান করলে এবং সেটি তার জন্য তিনি পছন্দ করলে সে উক্ত নি‘আমতে বিরক্ত হয়ে সে যেটি ভালো মনে করে (তার অজ্ঞতার কারণে) ও তার জন্য কল্যাণকর ভাবে সেটিতে পরিবর্তন করতে আশা করে। অথচ তার রব তাকে সে নি‘আমত থেকে বঞ্চিত না করে তার অজ্ঞতা ও নিজের জন্য নিকৃষ্ট পছন্দের জন্য তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন; এমনকি বান্দা যখন উক্ত নি‘আমতকে তার জন্য সংকীর্ণতা মনে করে, এটির ওপর রাগান্বিত হয়, এর থেকে নিষ্কৃতি চায় ও নিজে বিরক্ত হয় তখন আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে উক্ত নি‘আমত ছিনিয়ে নেন। বান্দা যখন তার প্রত্যাশিত ও পছন্দনীয় বিষয় ও তার পূর্বের অবস্থার মধ্যে পার্থক্য দেখতে পায় তখন তার অস্থিরতা, অনুশোচনা ও পূর্বের নি‘আমত আবার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা চরমভাবে বেড়ে যায়। আল্লাহ কোন বান্দার কল্যাণ ও হিদায়াত দান করতে চাইলে যে জিনিসে তাঁর নি‘আমত ও সন্তুষ্টি আছে তা তাকে দেখান এবং তাকে উক্ত জিনিসের শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান করেন। যখন সে উক্ত নি‘আমত পরিবর্তনের কথা ভাবেন তখন সে আল্লাহর সাথে ইসতিখারা (আল্লাহর পছন্দ কামনা করেন) করেন, যেহেতু কোনটি তার জন্য কল্যাণকর তা বুঝতে সে অজ্ঞ ও অক্ষম, তখন সে বিষয়টি আল্লাহর ওপর সোপর্দ করেন এবং তার জন্য যেটি উত্তম সেটি তাঁর (আল্লাহর) কাছে কামনা করেন।
আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতের ওপর বিরক্ত হওয়ার চেয়ে বান্দার জন্য ক্ষতিকর কিছুই হতে পারে না। কেননা সে উক্ত নি‘আমতকে নি‘আমতই মনে করে না এবং এজন্য উক্ত নি‘আমতের কারণে শুকরিয়াও আদায় করে না ও আনন্দিতও হয় না; বরং সে এর ওপর ক্রোধান্বিত হয়, এ কারণে অভিযোগ করে ও এ নি‘আমতকে মুসিবত মনে করে। অথচ এটি তার ওপর আল্লাহর বিরাট নি‘আমত। অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতের শত্রু, তাদের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতকে অনুধাবনও করে না; বরং তারা তাদের অজ্ঞতা ও যুলুমের কারণে সে নি‘আমত প্রতিহদ ও দূর করতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। কত নি‘আমত তার কাছে এসেছে আর সে তা অস্বীকার করে প্রতিহত করতে চেষ্টা করছে! আবার কত নি‘আমত তার কাছে এসেছে; কিন্তু সে তার যুলুম ও অজ্ঞতার কারণে তা দূরীভূত করতে প্রচেষ্টা করেছে! আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ لَمۡ يَكُ مُغَيِّرٗا نِّعۡمَةً أَنۡعَمَهَا عَلَىٰ قَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡ٥٣﴾ [الانفال: ٥٣]
“তা এ জন্য যে, আল্লাহ কোন নিআমতের পরিবর্তনকারী নন, যা তিনি কোন কাওমকে দিয়েছেন, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজদের মধ্যে যা আছে।” [সূরা আল- আনফাল, আয়াত: ৫৩]
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ١١﴾ [الرعد: ١١]
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]
নিজের চেয়ে অন্য কেউ তার নি‘আমতের শত্রু নেই। সে স্বীয় নি‘আমতের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও নিজেই আবার এর সাহায্যকারী। সুতরাং তার শত্রুতা তার নি‘আমতের মাঝে আগুন নিক্ষেপ করে এবং সে এতে ফুঁ দেয়। আবার তার শত্রুতা তাকে আগুন নিক্ষেপ করাতে সক্ষম করে এবং এতে ফুঁৎকার দিতে সাহায্য করে। যখন অগ্নিশিখা মারাত্মকরূপ ধারণ করে তখন সে অগ্নিনির্বাপক সাহায্যকারী দলের সাহায্য প্রার্থনা করে। অথচ তার উদ্দেশ্য খারাপ ও নিকৃষ্ট ছিল।
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম ব্যক্তি সুযোগ হাতছাড়াকারী, যখন ব্যাপারটি হাতছাড়া হয়ে যায় তখন সে তাকদীরকে দোষারোপ করে।