মুখতাসারুল ফাওয়ায়েদ (ইবনুল কাইয়্যেম রহ.-এর আল-ফাওয়ায়েদ অবলম্বনে) পরিচ্ছেদ: সাবধান! মিথ্যা থেকে দূরে থেকো ইসলামহাউজ.কম
পরিচ্ছেদ: সাবধান! মিথ্যা থেকে দূরে থেকো

মিথ্যা পরিহার করো। কেননা মিথ্যা তোমার বিদ্যমান জ্ঞানকে ধ্বংস করে দেয়। মিথ্যা তোমার জ্ঞানের প্রতিচ্ছবি ও মানুষকে দেওয়া শিক্ষাকে বিনষ্ট করে দেয়। কেননা মিথ্যাবাদী অস্তিত্বহীন বস্তুকে অস্তিত্বে বিদ্যমান মনে করে, আবার বিদ্যমান জিনিসকে অস্তিত্বহীন, সে হককে বাতিল, বাতিলকে হক, ভালোকে খারাপ, খারাপকে ভালো মনে করে। ফলে শাস্তিস্বরূপ তার ধারণা ও জ্ঞান তাকে বিনাশ করে।

এ কারণেই মিথ্যা সমস্ত পাপের মূল। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«َإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ»

“আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।”[1]

মিথ্যা প্রথম যখন অন্তর থেকে মুখে সংক্রমিত হয় তখন তা জবানকে নষ্ট করে দেয়, অতঃপর যখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সংক্রমিত হয় তখন তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ ধ্বংস করে দেয় যেভাবে জবানের কথা ধ্বংস করে দেয়। তখন মিথ্যা তার কথাবার্তায়, কাজে-কর্মে, চলা-ফেরায় সর্বত্র বিরাজ করে এবং তার ওপর ধ্বংস আধিপত্য লাভ করে। তখন এ ব্যাধি তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ যদি সত্যের ঔষধ দ্বারা তাকে সুস্থ না করেন তাহলে এ ব্যাধি তার মূল সত্ত্বাকে গ্রাস করে নেয় যা তাকে ধ্বংস করে দেয়।

এ জন্যই অন্তরের সব কাজের মূল হলো সত্যবাদীতা। সত্যবাদীতার বিপরীত হলো লৌকিকতা, আত্মভিমান, অহংকার, দম্ভ, ঔদ্ধত্য, অন্যায়, অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, লাঞ্ছনা ইত্যাদির মূল হলো মিথ্যাচার। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ভালো কাজের উৎস হলো সত্যবাদীতা এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব খারাপ কাজের উৎস হলো মিথ্যাবাদীতা। আল্লাহ মিথ্যাবাদীকে কল্যাণ ও উপকারী কাজ থেকে সরিয়ে রেখে তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। অন্যদিকে সত্যবাদীকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকর কাজের তাওফীক দান করে পুরস্কৃত করবেন। সত্যবাদীতার ন্যায় দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণকর গুণ নেই, আবার মিথ্যাবাদীতার মতো জঘন্য খারাপ ও ক্ষতিকর দোষও আর নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [التوبة: ١١٩]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,

﴿هَٰذَا يَوۡمُ يَنفَعُ ٱلصَّٰدِقِينَ صِدۡقُهُمۡ١١٩﴾ [المائ‍دة: ١١٩]

“এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১১৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,

﴿فَإِذَا عَزَمَ ٱلۡأَمۡرُ فَلَوۡ صَدَقُواْ ٱللَّهَ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ٢١﴾ [محمد : ٢١]

“অতঃপর যখন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তখন যদি তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করত, তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২১] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,

﴿وَجَآءَ ٱلۡمُعَذِّرُونَ مِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ لِيُؤۡذَنَ لَهُمۡ وَقَعَدَ ٱلَّذِينَ كَذَبُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥۚ سَيُصِيبُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ٩٠﴾ [التوبة: ٩٠]

“আর গ্রামবাসীদের থেকে ওযর পেশকারীরা আসল, যেন তাদের অনুমতি দেওয়া হয় এবং (জিহাদ না করে) বসে থাকল তারা, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছিল। তাদের মধ্য থেকে যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে অচিরেই যন্ত্রণাদায়ক আযাব আক্রান্ত করবে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৯০]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৭।