লগইন করুন
মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ ইবন হিব্বানে আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَا أَصَابَ أَحَدًا قَطُّ هَمٌّ وَلَا حَزَنٌ، فَقَالَ: اللهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي، إِلَّا أَذْهَبَ اللهُ هَمَّهُ وَحُزْنَهُ، وَأَبْدَلَهُ مَكَانَهُ فَرَحًا، قَالَ: فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلَا نَتَعَلَّمُهَا؟ فَقَالَ: بَلَى، يَنْبَغِي لِمَنْ سَمِعَهَا أَنْ يَتَعَلَّمَهَا».
কোনো বান্দা দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় পতিত হলে নিম্নোক্ত দো‘আ বলবে, “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার বান্দা, আপনার এক বান্দার পুত্র এবং আপনার এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল আপনার হাতে (নিয়ন্ত্রণে), আমার ওপর আপনার হুকুম কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি আপনার কাছে আপনার প্রতিটি নামের উসিলায় প্রার্থনা করছি, যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজে রেখেছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টিজীবের কাউকে আপনি শিক্ষা দিয়েছেন অথবা আপনার নিজের কাছে নিজ গায়েবী জ্ঞানে গোপন রেখেছেন- আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের আলো, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং আমার দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা দূরকারী- তাহলে আল্লাহ তার দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং এর পরিবর্তে তিনি আনন্দ ও খুশি দান করেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি এটি শিখবো? তিনি বললেন, অবশ্যই শিখবে। যে ব্যক্তি এটি শুনবে তার ওপর অত্যাবশ্যকীয় হবে এটি শিখে নেওয়া।”[1]
উপরোক্ত এ গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটি আল্লাহর পরিচিতি, তাঁর তাওহীদ ও ‘উবুদিয়্যাতের যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
- দো‘আকারী তার প্রার্থনা এভাবে শুরু করেছে, (إِنِّي عبدُك ابنُ عبدِكَ ابنُ أَمتِكَ) এতে সে তার পূর্বপুরুষ পিতা, মাতা থেকে শুরু করে আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম পর্যন্ত সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এভাবে আল্লাহর সামনে তার তোষামোদ, নম্রতা[2] ও বিনয় প্রকাশ পায়। এতে রয়েছে তার স্বীকৃতি যে, সে তাঁর গোলাম, তার পূর্বপুরুষরাও তাঁর গোলাম। আর দয়া, ইহসানের ক্ষেত্রে মনিবের দরজা ছাড়া গোলামের কোনো উপায় নেই। তার মনিব যদি তাকে উপেক্ষা করে এবং তাকে ছেড়ে দেয় তবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তাকে সাহায্য করার কেউ থাকবে না, কেউ তাকে দয়া করবে না; বরং সে সর্বপ্রকারের ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।
- সে এ স্বীকৃতির মাধ্যমে এটা বলছে যে, আপনার সাহায্য ব্যতীত এক মূহুর্তের জন্যেও আমার কোনো উপায় নেই, আমার এমন কেউ নেই যার কাছে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করবো, আমি যার গোলাম তাকে ব্যতীত অন্যের কাছে আমি আশ্রয় চাইব কীভাবে?
- এতে আরও অন্তর্ভুক্ত করে, ব্যক্তির এ স্বীকৃতি যে, সে তার রবের দ্বারা পরিচালিত, অধীনস্ত, তাঁর আদেশ পালনে আদিষ্ট ও নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য- তিনি তো তার ওপর দাস হিসেবে কর্তৃত্ব করেন, তার নিজের কোনো ইখতিয়ার (ইচ্ছা-স্বাধীনতা) সে চলতে পারে না। কেননা নিজের স্বাধীনতা থাকা দাসের অবস্থা নয়; বরং এটি মনিব ও স্বাধীনের অধিকার। দাসরা তো শুধু ‘উবুদিয়্যাত তথা দাসত্ব করবে। তারা আনুগত্যের দাস, আল্লাহর দিকেই সম্পৃক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ عِبَادِي لَيۡسَ لَكَ عَلَيۡهِمۡ سُلۡطَٰنٌ٤٢﴾ [الحجر: ٤٢]
“নিশ্চয় আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা নেই।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمۡشُونَ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ هَوۡنٗا٦٣﴾ [الفرقان: ٦٣]
“আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩]
আল্লাহর এসব বান্দা ছাড়া বাকীরা (ইচ্ছাকৃত দাস না হয়ে) পরাক্রম ও প্রভুত্বের অধিন হিসেবে দাসত্ব করে। আল্লাহর সাথে এসব লোকের সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন বিশ্বের যাবতীয় ঘর আল্লাহর মালিকানার দিকে সম্বন্ধ করা হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর সত্যিকার বান্দাদের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক ঠিক তেমন, যেমন বাইতুল্লাহিল হারাম কা‘বাকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে, (সালেহ আলাইহিস সালামের) উঁটকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। জান্নাতের গৃহকে তাঁর দিকে সম্বন্ধ করা হয়। তাঁর রাসূলের দাসত্বকে তাঁর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا٢٣﴾ [البقرة: ٢٣]
“আর আমরা আমাদের বান্দার ওপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِ١﴾ [الاسراء: ١]
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿ وَأَنَّهُۥ لَمَّا قَامَ عَبۡدُ ٱللَّهِ يَدۡعُوهُ١٩﴾ [الجن: ١٩]
“আর নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়াল।” [সূরা আল-জিন, আয়াত: ১৯]
আর হাদীসের বাণী (إنِّي عبدُك) আমি আপনার বান্দা বা দাস এটি যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার অর্থ দাঁড়াবে: তার চরম দাসত্ব আবশ্যক করে নেওয়া; তার কাছে নতজানু হওয়া, বিনয়ের সাথে তার দাসত্ব করা, তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা, তার আদেশ মান্য করা, নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তার কাছে সর্বদা প্রার্থনা করা, তার কাছে আশ্রয় চাওয়া, তার কাছে সাহায্য চাওয়া, তার ওপর তাওয়াক্বুল করা, তার কাছেই অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া, ভালোবাসা, ভয় ও প্রত্যাশায় অন্যের সাথে অন্তরকে মিশ্রিত না করা ইত্যাদি।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (ناصيتي بيدِك) আমার কপাল আপনার হাতে। বান্দা যখন এ সাক্ষ্য দিবে যে, তার কপাল আল্লাহর হাতে, অনুরূপ সকল বান্দার কপালও একমাত্র আল্লাহর হাতে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিবর্তন করেন, তখন তারা এ ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না, তিনি ব্যতীত কারো কাছে কিছু আশা করবে না, তারা নিজেদেরকে মনিবের স্তরে নিয়ে যাবে না; বরং তারা নিজেদেরকে দাসের স্তরে নিয়ে যাবে, যে দাস একজনের অধীনে সীমাবদ্ধ, অক্ষম, পরিচালিত, যিনি তাদেরকে পরিবর্তন ও পরিচালনা করেন।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের এ অবস্থানের সাক্ষ্য দিবে; তার অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন তার রবের কাছেই হওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যাবে। আর যখন কোনো লোক এ ধরনের সাক্ষ্য দিবে তখন সে আর মানুষের মুখাপেক্ষী হবে না, তাদের কাছে কোনো আশা-প্রত্যাশাও করবে না; আর এভাবেই তার তাওহীদ, তাওয়াক্কুল ও ‘উবুদিয়্যাত সঠিক হবে।
এ কারণেই হূদ আলাইহিস সালাম তাঁর জাতিকে বলেছিলেন,
﴿إِنِّي تَوَكَّلۡتُ عَلَى ٱللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمۚ مَّا مِن دَآبَّةٍ إِلَّا هُوَ ءَاخِذُۢ بِنَاصِيَتِهَآۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ٥٦﴾ [هود: ٥٦]
“আমি অবশ্যই তাওয়াক্কুল করেছি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ওপর, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৫৬]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, (ماضٍ فيّ حُكمُك عدلٌ فيَّ قضاؤك) “আমার ওপর আপনার হুকুম কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ।” রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে হুকুম ও কাযা বা ফয়সালার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। হুকুমের জন্য তিনি (المضَاءَ) কার্যকার এবং (القضاءِ) ফয়সালা এর জন্য (العدلَ) ব্যবহার করেছেন। কেননা আল্লাহর হুকুম দীনি ও শর‘ঈ এবং বৈশ্বিক ও নিয়তি উভয় ধরণের হুকুম অন্তর্ভুক্ত করে। বান্দার ব্যাপারে এ দুধরণের বিধানই বাস্তবায়িত হয়। তার ব্যাপারে এ দুধরণের হুকুম কার্যকর ও বাস্তবায়ন হয়; চাই তা তার ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত; কিন্তু সে বৈশ্বিক হুকুমের বিরোধিতা করতে পারে না। অন্যদিকে শরী‘আতের বিধানকে কখনো কখনো অমান্য করতে পারে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী (أَسألُك بكلِّ اسمٍ) “আমি আপনার কাছে আপনার প্রতিটি নামের উসিলায় প্রার্থনা করছি”, এখান থেকে শেষ পর্যন্ত..... তিনি আল্লাহর সমস্ত নামের উসিলায় প্রার্থনা করছেন। সেসব নাম বান্দা জানুক বা না জানুক। আল্লাহর নামের উসিলা দেওয়া তাঁর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কেননা এভাবে উসিলা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তাঁর সিফাত ও কাজের মাধ্যমে উসিলা দেওয়া; যা তাঁর নামসমূহের অন্তর্নিহিত চাহিদা।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী (أَنْ تجعلَ القرآنَ ربيعَ قلبي ونورَ صدري) “আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি (বৃষ্টি), আমার বক্ষের আলো”, এখানে (الرَّبيعُ) অর্থ জমিন উর্বরকারী বৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল-কুরআনকে উর্বরকারী বৃষ্টির সাথে তুলনা করেছেন। কেননা কুরআন মানুষের অন্তর জীবিত করে। এমনিভাবে আল্লাহ কুরআনকে বৃষ্টির সাথে তুলনা করেছেন। তিনি পানির সাথে তুলনা করেছেন যে পানি দ্বারা বস্তু জীবিত হয় এবং নূরের সাথে তুলনা করেছেন যে নূরের দ্বারা আলো ও উজ্জলতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ এ দু’টিকে আল-কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে একত্রিত করেছেন,
﴿أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَسَالَتۡ أَوۡدِيَةُۢ بِقَدَرِهَا فَٱحۡتَمَلَ ٱلسَّيۡلُ زَبَدٗا رَّابِيٗاۖ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيۡهِ فِي ٱلنَّارِ ٱبۡتِغَآءَ حِلۡيَةٍ أَوۡ مَتَٰعٖ زَبَدٞ مِّثۡلُهُ١٧﴾ [الرعد: ١٧]
“তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, এতে উপত্যকাগুলো তাদের পরিমাণ অনুসারে প্লাবিত হয়, ফলে প্লাবন ওপরস্থিত ফেনা বহন করে নিয়ে যায়। আর অলংকার ও তৈজসপত্র তৈরীর উদ্দেশ্যে তারা আগুনে যা কিছু উত্তপ্ত করে তাতেও অনুরূপ ফেনা হয়।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১৭]
সুতরাং উপরোক্ত দো‘আয় কুরআনের প্রশান্তির (উর্বরকারী বৃষ্টি) দ্বারা অন্তরকে উজ্জীবিত করা ও বক্ষকে আলোকিত করা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুতরাং এখানে জীবন ও আলো একত্রিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَا١٢٢﴾ [الانعام: ١٢٢]
“যে ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মতো যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না?” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]
বক্ষ যেহেতু অন্তরের চেয়ে প্রশস্ত সেহেতু বক্ষের অর্জিত আলো অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কেননা বড় জিনিস থেকে ছোট জিনিসের মধ্যে প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। আবার যেহেতু শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জীবন পুরোটাই অন্তরের জীবন, সেহেতু সেখান থেকে জীবন বক্ষে ছড়িয়ে পড়ে, অতঃপর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন জীবন প্রার্থনা করেছেন যে জীবনের রবী‘ তথা উর্বরকারী বৃষ্টি (প্রশান্তি) আছে, যে প্রশান্তিই জীবনের মূল।
অন্যদিকে দুঃখ, দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা যেহেতু অন্তরের জীবনকে প্রশান্তি দিতে ও একে আলোকিত করতে বাধা দেয়, তাই তিনি কুরআনের দ্বারা এসব দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে দো‘আ করেছেন। কেননা কুরআনের দ্বারা এসব দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দূর হলে সেগুলো আর ফিরে আসে না। আর কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা যেমন, সুস্বাস্থ্য, দুনিয়া, সুনাম-সুখ্যাতি ইত্যাদি দ্বারা সুখ লাভ করলে এগুলো চলে গেলে আবার তার দুঃখ, দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা ফিরে আসে। অন্তরে আপতিত অপছন্দনীয় বিষয়গুলো যদি অতীতের হয় তখন তাকে ‘হুযন’ তথা দুঃখ বলে, আর ভবিষ্যতের বিষন্নতাকে ‘হাম্ম’ এবং বর্তমানের দুশ্চিন্তাকে ‘গাম’ বলে।
>[2] استخذاءٌ অর্থ অবনত হওয়া, ভেঙ্গে পড়া।