লগইন করুন
আল্লাহ তা‘আলা তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন: পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী স্তর, বারযাখের স্তর এবং পরকালীন স্থায়ী স্তর। প্রত্যেক স্তরের জন্য নির্দিষ্ট হুকুম ও বিধান তৈরি করেছেন। মানুষকে শরীর ও রূহের সমন্বয়ে গঠন করে এ তিন স্তরের প্রত্যেক স্তরে এদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র ও বিধান তৈরি করেছেন।
প্রথম স্তর পৃথিবীর জীবন
তা এমন একটি স্তর যাকে আত্মাসমূহ ভালোবেসে এর বুকে লালিত পালিত হয়েছে, এর ভালো-মন্দ এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কারণগুলো উপার্জন করেছে। পার্থিব জীবনের স্তরের হুকুম শরীরের জন্য প্রযোজ্য, রূহসমূহ এর অনুগত। আর এ জন্যেই আল্লাহ তা‘আলা শর‘ঈ হুকুম জিহ্বা ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বাহ্যিক কর্মের ওপর আরোপিত করেছেন যদিও আত্মাসমূহ এর বিপরীত করে।
ইহকালে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক একটি বিশেষ ও গভীর সম্পর্ক, আর এ সম্পর্ক শুধু মানুষের ঘুমের সময় এবং মাতৃগর্ভে ভ্রূণ অবস্থায় থাকে। কেননা এক দিক দিয়ে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক অন্য দিক দিয়ে তা থেকে বিচ্ছিন্ন।
দ্বিতীয় স্তর বারযাখী জীবন
তা পৃথিবীর স্তরের চেয়ে অনেক বড় এবং বিস্তৃত। বরং তা পৃথিবী অপেক্ষা এতই বড় বা বিস্তৃত যেমন মাতৃগর্ভ অপেক্ষা পৃথিবী বড় বা বিস্তৃত।
বারযাখী জীবনের হুকুম বা বিধান রূহের ওপর প্রযোজ্য হয়, শরীর এর অনুগত। পৃথিবীতে রূহ যেমন শরীরের সাথে মিলিত হলে এর দুঃখে দুঃখিত হয় এবং এর বিশ্রামে প্রশান্তি অনুভব করে, শরীরই ‘আযাব বা শান্তির কারণগুলো বয়ে আনে, তেমনিভাবে বারযাখে শরীরগুলো ‘আযাবে এবং শান্তিতে রূহের অনুগত হয় এবং রূহসমূহ তখন শান্তি বা শাস্তি বয়ে আনে। কেননা রূহসমূহ বারযাখে যদিও শরীর হতে বিচ্ছিন্ন এবং পৃথক থাকে; কিন্তু কোনো অস্তিত্ব বাকী না রেখে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না; বরং শরীরের সাথে এর একটি বিশেষ অবস্থায় সম্পর্ক বাকী থাকে। এর প্রমাণ হলো কোনো মুসলিম সালাম দেওয়ার সময় শরীরে রূহ ফিরিয়ে দেওয়া সম্বন্ধে যা এসেছে এবং তার থেকে তার সাথীদের ফিরে যাওয়ার সময় জুতার আওয়াজ শুনার হাদীস, এ ছাড়াও অন্যান্য প্রমাণাদি রয়েছে।
তৃতীয় স্তর পরকালিন স্থায়ী জীবন
আর তা হলো হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম। তারপরে আর কোনো স্তর নেই। আল্লাহ তা‘আলা স্তরে স্তরে ও ধাপে ধাপে রূহগুলো স্থানান্তর করে সেই স্তরে পৌঁছে দেন, যা এর জন্য উপযোগী এবং তা-ই তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা তাকে সে স্তরে পৌঁছে দেবে। এ স্তরে শরীরের সাথে রূহের সম্পর্কই পরিপূর্ণ সম্পর্ক। উল্লিখিত সম্পর্কগুলো এর তুলনা হয় না। সুতরাং তা এমন এক সম্পর্ক যেখানে শরীর মৃত্যু, ঘুম এবং অরাজকতা গ্রহণ করে না, কেননা ঘুম হলো মৃত্যুর ভাই।যে ব্যক্তি তা পরিপূর্ণভাবে জানতে পারে তার নিকট থেকে রূহ এবং এর সম্পর্কতার ব্যাপারে বহু উদ্ভাবিত প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা এর প্রস্তুতকারক ও সৃষ্টিকর্তা, মৃত্যু দানকারী এবং জীবন দাতা, এর সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য দানকারী, যিনি এর মাঝে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ভেদে বিভিন্ন স্তরে পার্থক্য রেখেছেন, যেমনভাবে পার্থক্য করেছেন এর উচ্চ স্তরে, আমলে, শক্তিতে এবং চরিত্রে। আর যে ব্যক্তি প্রয়োজন অনুপাতে তা জানল সে সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো অংশিদার নেই, তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব, সকল প্রশংসা, তাঁর হাতেই সকল মঙ্গল এবং প্রত্যেক কর্ম তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তার জন্য সকল সামর্থ এবং শক্তি, সম্মান এবং কলা কৌশল এবং সার্বিক দিক দিয়ে তার পূর্ণতা রয়েছে। সে নিজের সত্তাকে চেনার মাধ্যমে সকল নবী রাসূলের সত্যতা জানতে পারবে, তারা যা নিয়ে এসেছেন তা সত্য। সুষ্ঠ জ্ঞান এবং সঠিক দীন এর সাক্ষ্য দেয়, আর যা এর বিপরীত তা বাতিল।[1]