লগইন করুন
জাবালু ‘আরাফা বা ‘আরাফার পাহাড় একটি প্রসিদ্ধ পাহাড়। যা ‘আরাফার পূর্ব উত্তর দিকে অবস্থিত একটা উঁচু টিলা।
আর তাকে ‘জাবালুদ্ দো‘আ’ বা দো‘আর পাহাড় বলা হয়, আর বর্তমান সময়ের মানুষ তাকে ‘জাবালুর রাহমা’ বা ‘রহমতের পাহাড়’ নামে অভিহিত করে; বস্তুত তা এ পাহাড়ের একটি পুরাতন নাম।[1]
কিছু সংখ্যক হাজী সাহেবের মনে এ পাহাড়টির একটা বিশেষ প্রভাব রয়েছে, এ জন্য আমরা তাদেরকে দেখতে পাই যে, তারা ‘আরাফার দিনে তাতে আরোহণ করার চেষ্টা করে অথচ এ দিনের আবশ্যকীয় কাজ হলো ‘আরাফাতে অবস্থান করা; কারণ, আরাফাতে অবস্থান করাটা এমন এক রুকন, যা ব্যতীত সর্বসম্মতিক্রমে হজ পরিপূর্ণ হয় না[2]। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الْحَجُّ عَرَفَةُ».
“হজ হলো ‘আরাফাতে অবস্থানের নাম।”[3] আর এটা ‘আরাফাত’-এর সীমানার অভ্যন্তরে যে কোনো ভূ-খণ্ডে অবস্থান করার দ্বারাই বাস্তবায়িত হয়ে যায়, কোনো স্থানকে বাদ দিয়ে অপর কোনো স্থানকে নির্ধারণ ও সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَقَفْتُ هَا هُنَا، وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ».
“আমি এখানে অবস্থান করলাম, আর ‘আরাফাতের সবটাই অবস্থান করার জায়গা।”[4]
জনগণ কর্তৃক এ পাহাড়ে আরোহণ করার মত কষ্টকর কাজটি শরী‘আতের দলীল-প্রমাণ বিহীন একটা কষ্টকর কাজ; অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خُذُوا عَنِّي مَنَاسِكَكُمْ».
“তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ আদায়ের পদ্ধতি গ্রহণ কর।”[5]
সম্মানিত শাইখ মুহাম্মাদ আল-‘উসাইমীন রহ. কে এ প্রশ্নটি করা হয়:
কিছু সংখ্যক হাজী সাহেব ‘জাবালে ‘আরাফা’ নামক এ পাহাড়টি হজের পূর্বে বা পরে যিয়ারত করাটাকে আবশ্যকীয় দায়িত্বরূপে গ্রহণ করে এবং তার ওপর সালাত আদায় করে। সুতরাং এ পাহাড়টি যিয়ারত করার এবং তাতে সালাত আদায় করার বিধান কী?
জবাব হিসেবে তিনি বলেন, (যেমনটি শরী‘আতের মূলনীতি থেকে জানা যায়, সে মতে তার বিধান হলো: এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই বিদ‘আতপন্থী বলে গণ্য হবে, যে ব্যক্তি এমন কোনো পন্থায় আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করল, যা আল্লাহ শরী‘আতের বিধিভুক্ত করেন নি। সুতরাং এর থেকে জানা গেল যে, এ পাহাড়ের উপরে বা তার নিকটস্থ স্থানে সালাত আদায় করার ইচ্ছা করা, তাকে স্পর্শ করা এবং এর অনুরূপ কোনো কাজ করাটা বিদ‘আত, যা কিছু সংখ্যক সাধারণ মানুষ করে থাকে। এ ধরণের কাজ যে করবে তার সমালোচনা করা হবে এবং তাকে বলা হবে: ‘এ পাহাড়ের কোনো বিশেষত্ব নেই; বরং সুন্নাত হলো: মানুষ ‘আরাফার দিনে প্রস্তরখণ্ডসমূহের নিকটে অবস্থান করবে, যেমনিভাবে সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তরখণ্ডসমূহের নিকটে অবস্থান করেছেন, আর তিনি বলেছেন:
«وَقَفْتُ هَا هُنَا، وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ» .
“আমি এখানে অবস্থান করলাম, আর ‘আরাফাতের সবটাই অবস্থান করার জায়গা”।আর এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়- মানুষের পক্ষে কখনও উচিৎ হবে না যে, ‘আরাফার দিনে ঐ পাহাড়ে যাওয়ার জন্য সে নিজে কষ্ট করবে, আবার কখনও কখনও সে তার দল থেকে হারিয়ে যাবে এবং তার পিছু লাগবে প্রচণ্ড গরম ও পানির তৃষ্ণা, আর এর কারণে সে পাপী হবে। কেননা সে নিজের জীবনের ওপর এমন কাজের কষ্টকে বাধ্যতামূল করে নিল, যে কাজটি আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর বাধ্যতামূলক করেন নি)।[6]
>[2] দেখুন: আল-ইজমা‘: (পৃ. ৬৪); আল-মুগনী: (৫/২৬৭); আল-মাজমূ‘উ শরহু ‘আল-মুহায্যাব’: (৮/১২৯)।
[3] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে ‘আবদুর রাহমান ইবন ইয়া‘মার আদ-দিলাইয়ে রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০১৫; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৯৪৯; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৮৮৯; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০১৬ ও ৩০৪৪।
[4] হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১২১৮-১৪৯ এবং হাদীসের শব্দগুলো তাঁর; আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ১৯০৭ ও ১৯৩৬; নাসাঈ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০১৫)।
হাদীসটি ‘মারফু’ সনদে আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন; ইবন মাজাহ, আস-সুনান, হাদীস নং ৩০১০; তিরমিযী, আস-সুনান, হাদীস নং ৮৮৫।
[5] তথ্যসূত্র পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও দেখুন: ইকতিযাউ আস-সিরাত আল-মুস্তাকীম: (২/১৫০; আল-ইবদা‘উ ফী মাদারিল ইবতিদা‘য়ে: (পৃ. ৩০৫)।
[6] ফিকহুল ‘ইবাদাত: (পৃ. ৩৩২-৩৩৩)।