লগইন করুন
‘হেরা গুহা’[1]:
‘হেরা গুহা’ হলো মক্কায় অবস্থিত ‘জাবালে নূর’[2]-এর একেবারে ওপরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গুহা, আর ‘জাবালে নূর’ একটি সুপ্রসিদ্ধ পাহাড়; আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়্যাতের আগে ও পরে এখানে এসেছিলেন।
‘সাওর গুহা’[3]:
‘সওর গুহা’ এমন এক গুহা, যা ‘সাওর পাহাড়’ -এ অবস্থিত, আর তা বিরাট এক পাহাড়, যার চূড়া ক্রমান্বয়ে ছুঁচালো; যা মক্কার দক্ষিণে অবস্থিত এবং ‘তান‘য়ীম’-এর দক্ষিণ থেকে তা দেখা যায়, আর গুহাটি দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
এ গুহার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে মক্কা থেকে মদীনা মুনাওয়্যারায় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরত প্রসঙ্গে; নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ কাফিরদের থেকে আত্মরক্ষার্থে আবূ বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে সাথে নিয়ে তাতে লুকিয়ে ছিলেন।
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এ দু’টি পাহাড়ে যাতায়াত করা এবং তাতে উঠা-বসা ও অবস্থান করার কারণে কোনো কোনো জাহিল বা অজ্ঞ মুসলিমের জন্য উভয়ের ব্যাপারে একটা আকীদা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, ফলে তারা বরকত হাসিলের জন্য পাহাড় দু’টি যিয়ারত করতে থাকে। আর কোনো কোনো হাজী সাহেবও তা যিয়ারত করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।
আর এ দু’টি পাহাড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, প্রথমটি সম্পর্কিত নবুওয়্যাতের সাথে, আর দ্বিতীয়টি সম্পর্কিত হিজরতের সাথে; কিন্তু এটা এ দু’টি পাহাড়ের কেনোটিকেই কোনো বিশেষ বিশেষত্ব দান করেনি এবং এটা কোনো দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হয় না। আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, ‘হাজরে আসওয়াদ’ সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়েছে শরী‘আতের বক্তব্যের মাধ্যমে, আর এটা সত্ত্বেও তাকে আমাদের চুম্বন ও স্পর্শ করাটা তার দ্বারা বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে নয়; বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে। আর আমাদের পক্ষে অবশ্যই দলীল হিসেবে ভূমিকা রাখবে ‘ওহুদ পাহাড়’ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিখ্যাত উক্তিটি, যেখানে তিনি বলেছেন:
«أُحُدٌ جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ».
“ওহুদ এমন এক পাহাড়, যে আমাদেরকে ভালোবাসে, আর আমরাও তাকে ভালোবাসি।”[4] এটা সত্ত্বেও তার দ্বারা বরকত হাসিলের জন্য তাতে আরোহণ করা বৈধ নয়। সুতরাং তা ভিন্ন অন্যান্য পাহাড় থেকে বরকত হাসিলের বিষয়টি কীভাবে বৈধ হতে পারে?! আর পূর্বে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে যে, জড়বস্তুকে সম্মান করা এবং তার দ্বারা বরকত হাসিলের চেষ্টা করা শির্কের বাহনস্বরূপ, আর জগৎসমূহের ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলার জন্য মানুষ কর্তৃক ইবাদত করার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য অবশ্যই ‘কুরআন’ অথবা ‘সহীহ সুন্নাহ’-এর দলীল লাগবে।
>[2] তাকে ‘জাবালে নূর’ নামে নামকরণের সম্ভাব্য কারণ হলো তাতে আল-কুরআনের প্রথম সূরা অবতীর্ণ হওয়ার কারণে, আর তা ছিল ‘নূর’ বা আলো। সুতরাং মনে হয় যেন তাঁরা বলছেন: (কুরআনের পাহাড়) অথবা (ইসলামের পাহাড়) অথবা (হিদায়াতের পাহাড়) এবং এর মতো করে আরও আরও। -দেখুন: প্রগুক্ত তথ্যসূত্র।
[3] দেখুন: আওদিয়াতু মাক্কা: (পৃ. ৯৯-১০০); মু‘জাম আল-মা‘আলেম আল-জুগরাফিয়্যা ফিস সীরাত আন-নবওয়িয়্যা: (পৃ. ৭২)।
[4] সহীহ বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৪১১ ও ৪১৬০; সহীহ মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ৩৪৩৭, ৩৪৩৮ ও ৩৪৩৯।