লগইন করুন
১- হজের পরিচিতি:
হজ (حج) শব্দের আভিধানিক অর্থ: ইচ্ছা করা ও কোনো গন্তব্যের দিকে গমন করা। কোনো কাজ বারবার করা।
পারিভাষিক অর্থে: বিশেষ ইবাদত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ে মক্কা গমন করার ইচ্ছা করা।
২- ইসলামে হজের অবস্থান:
হজ ইসলামের পঞ্চ রুকনের মধ্যে পঞ্চম রুকন। নবম হিজরিতে হজ ফরয হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧]
“এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
“ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সিয়াম পালন করা”।[1]
৩- হজের হুকুম:
আল্লাহ তার (সক্ষম) বান্দার ওপর জীবনে হজ পালন করা ফরয করেছেন।
« الحج مَرَّةً، فَمَنْ زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ»
“হজ জীবনে একবার, কেউ এর চেয়ে বেশি করলে তা তার জন্য অতিরিক্ত (নফল)”।[2]
হজের অর্থ: বিশেষ ইবাদত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ে মক্কা গমন করার ইচ্ছা করা।
৪- উমরা:
উমরার পরিচিতি: উমরার শাব্দিক অর্থ পরিদর্শন করা, সাক্ষাৎ করা। আর পারিভাষিক অর্থে উমরা হলো: কতিপয় নির্দিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পালন করা।
‘উমরার হুকুম:
জীবনে একবার উমরা পালন করা ওয়াজিব।
৫- হজ ও উমরা শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকমত:
ইসলামে হজ ও উমরা শরী‘আতসম্মত হওয়ার অন্যতম হিকমত হলো পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষের অন্তরকে পবিত্র করা যাতে আখিরাতে আল্লাহর দেওয়া সম্মানিত স্থানের (জান্নাতের) অধিবাসী হওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
« من حج هذا البيت فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
“যে ব্যক্তি এ ঘরের হজ পালন করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহূর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে”।[3]
৬- হজ ও উমরা ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
হজ ও উমরা ফরয হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ:
১- ইসলাম।
২- আক্বল বা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া।
৩- বালিগ হওয়া।
৪- হজে গমনের সামর্থ থাকা। অর্থাৎ হজে যাওয়া আসার যাতায়াত খরচ, খাদ্য ইত্যাদির সামর্থ্য থাকা।
৫- স্বাধীন হওয়া।
৬- উপরের পাঁচটি শর্তের সাথে মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত আরেকটি শর্ত রয়েছে, তা হলো মুহরিম থাকা। মুহরিম ব্যতীত হজ পালন করলে গুনাহগার হবে, যদিও তার হজ আদায় হয়ে যাবে।
- শিশু হজ করলে তার হজ নফল হিসেবে সহীহ হবে, তবে বালিগ হলে তার ওপর হজ পালন করা ফরয হবে।
- কারো ওপর হজ ফরয হওয়ার পরে হজ পালন না করে মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তার পক্ষ থেকে হজ করানো ফরয।
- কেউ নিজে হজ পালন না করলে সে অন্যের পক্ষ থেকে হজ পালন করতে পারবে না। নফল হজ বা উমরা পালনের জন্য যেকোন কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা সহীহ।
হজ তথা মানাসিকের প্রকারভেদ:
১- শুধু উমরা পালন করা।
২- শুধু হজ পালন করা।
৩- হজ ও উমরা একত্রে পালন করা।
৪- উমরা পালন করে কিছুদিন ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে আবার হজ পালন করা।
- শুধু শুধু উমরা পালন বছরের যে কোনো সময় করা যায়। তবে সর্বোত্তম উমরা হলো যা হজের সাথে বা রমযান মাসে পালন করা হয়।
- ইফরাদ হজ তথা শুধু হজ হলো হজের দিনে শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা, এর আগে বা পরে উমরা পালন না করা।
- আর কিরান তথা হজের সাথে উমরা হলো শুরু থেকেই হজ ও উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ ও উমরার কিছু কাজ একত্রে করা। ফলে হজ ও উমরার জন্য একবারই তাওয়াফ ও সা‘ঈ করা।
- আর তামাত্তু হজ হলো সবচেয়ে উত্তম হজ। হজের মাসে প্রথমে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা। অতঃপর উমরার জন্য সা‘ঈ ও তাওয়াফ শেষে হালাল হয়ে যাওয়া। অতঃপর একই বছর যিলহজ মাসের আট তারিখ হজের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং তাওয়াফ, সা‘ঈ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ইত্যাদি হজের কার্য সম্পন্ন করা। তামাত্তু ও কারিন পালনকারীর উপর হাদী যবেহ করা ওয়াজিব।
[2] নাসাঈ, মানাসিকুল হজ, হাদীস নং ২৬২০; আবু দাউদ, মানাসিক, হাদীস নং ১৭২১; ইবন মাজাহ, মানাসিক, হাদীস নং ২৮৮৬; আহমদ, ১/২৯১; দারেমী, মানাসিক, হাদীস নং ১৭৮৮।
[3] সহীহ বুখারী, হজ, হাদীস নং ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হজ, হাদীস নং ১৩৫০; তিরমিযী, হজ, হাদীস নং ৮১১; নাসাঈ, মানাসিকুল হজ, হাদীস নং ২৬২৭; ইবন মাজাহ, মানাসিক, হাদীস নং ২৮৮৯; আহমদ, ২/৪১০; দারেমী, মানাসিক, হাদীস নং ১৭৯৬।