লগইন করুন
সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।
সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহের কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ই এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিঃপূর্বে কাউকে প্রদান করেন নি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের ওপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ ٨١﴾ [الاعراف: ٨٠، ٨١]
“আর আমরা লূত আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিঃপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করে নি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]
আল্লাহ তা‘আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلُوطًا ءَاتَيۡنَٰهُ حُكۡمٗا وَعِلۡمٗا وَنَجَّيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡقَرۡيَةِ ٱلَّتِي كَانَت تَّعۡمَلُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَوۡمَ سَوۡءٖ فَٰسِقِينَ ٧٤﴾ [الانبياء: ٧٤]
“আর আমরা লূতকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায় ছিলো”। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৭৪]
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
﴿قَالُوٓاْ إِنَّا مُهۡلِكُوٓاْ أَهۡلِ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِۖ إِنَّ أَهۡلَهَا كَانُواْ ظَٰلِمِينَ﴾ [العنكبوت: ٣١]
“ফিরিশতারা (ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে) বললেন, আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয় যালিম”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৩১]
লূত আলাইহিস সালাম এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কথাই হুবহু কুরআন মাজীদে উল্লেখ করে বলেন,
﴿قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِي عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٣٠﴾ [العنكبوت: ٣٠]
“লূত আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৩০]
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয় নি, বরং তাঁকে বলা হয়েছে:
﴿يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَآۖ إِنَّهُۥ قَدۡ جَآءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَإِنَّهُمۡ ءَاتِيهِمۡ عَذَابٌ غَيۡرُ مَرۡدُودٖ ٧٦﴾ [هود: ٧٦]
“হে ইবরাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তথা তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার রবের ফরমান এসে গেছে এবং তাদের ওপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৬]
যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত আলাইহিস সালামকে জানিয়ে দেওয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাকে বলা হলো:
﴿أَلَيۡسَ ٱلصُّبۡحُ بِقَرِيبٖ﴾ [هود: ٨١]
“সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!” [সূরা হূদ, আয়াত: ৮১]
আল্লাহ তা‘আলা লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন,
﴿فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهَا حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٖ مَّنضُودٖ ٨٢ مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَۖ وَمَا هِيَ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ بِبَعِيدٖ ٨٣﴾ [هود: ٨٢، ٨٣]
“অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খণ্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো আপনার রবের ভাণ্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি একটা দূরে নয়।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৮২-৮৩]
আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّيۡحَةُ مُشۡرِقِينَ ٧٣ فَجَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٍ ٧٤ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡمُتَوَسِّمِينَ ٧٥ وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٖ مُّقِيمٍ ٧٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٧٧﴾ [الحجر: ٧٣، ٧٧]
“অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়েই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমরা জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী তথা বহু প্রাচীন লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মুমিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৭৩-৭৭]
আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা‘নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেন নি।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ»
“আল্লাহ তা‘আলা সমকামীকে লা‘নত করেন। আল্লাহ তা‘আলা সমকামীকে লা‘নত করেন। আল্লাহ তা‘আলা সমকামীকে লা‘নত করেন।”[1]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ»
“সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত।”[2]
বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণে এসে যায় যাতে তিনি বলেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمِ لُوْطٍ»
“আমি আমার উম্মতের ওপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি।”[3]
ফুযাইল ইবন ইয়ায রহ. বলেন,
«لَوْ أَنَّ لُوْطِيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَةٍ مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللهَ غَيْرَ طَاهِرٍ»
“কোনো সমকামী আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায়ই সাক্ষাৎ করবে”।[4]
>[2] সহীহুত-তারগীবী ওয়াত-তারহীবী, হাদীস নং ২৪২০
[3] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১১; আহমদ ২/৩৮২; সহীহুত-তারগীবী ওয়াত-তারহীবী, হাদীস নং ২৪১৭
[4] দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব: ১৪২