কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ব্যভিচার ও সমকামিতার ভয়াবহ পরিণতি দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা ইসলামহাউজ.কম
দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা:

কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোনো হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও পরকালে আল্লাহ তা‘আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ»

“কোনো মুসলমানের দোষ লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও লুকিয়ে রাখবেন”।[1]

দণ্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবে:

কারোর ওপর শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا ضَرَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَّقِ الْوَجْهَ»

“কেউ কাউকে (দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে) মারলে তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়”।[2]

যে কোনো দণ্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে না:

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُقَامُ الْـحُدُوْدُ فِيْ الْـمَسَاجِدِ»

“মসজিদে কোনো দণ্ডবিধি কায়েম করা যাবে না”।[3]

হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُّسْتَقَادَ فِيْ الـْمَسْجِدِ، وَأَنْ تُنْشَدَ فِيْهِ الْأَشْعَـارُ، وَأَنْ تُقَامَ فِيْهِ الْـحُدُوْدُ»

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কারোর থেকে প্রতিশোধ নিতে, কবিতা আবৃত্তি করতে ও দণ্ডবিধি কায়েম করতে নিষেধ করেছেন”।[4]

দুনিয়াতে কারোর ওপর শরী‘আতের কোনো দণ্ডবিধি কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যায় তথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। পরকালে এ জন্য তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না।

উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَصَابَ مِنْكُمْ حَدًّا، فَعُجِّلَتْ لَهُ عُقُوْبَتُهُ ؛ فَهُوَ كَفَّارَتُهُ، وَإِلاَّ فَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ، إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ، وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ»

“যে ব্যক্তি (শয়তানের ধোকায় পড়ে) এমন কোনো হারাম কাজ করে ফেলেছে যাতে শরী‘আতের নির্দিষ্ট কোনো দণ্ডবিধি রয়েছে। অতঃপর তাকে দুনিয়াতেই সে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যদি তা তার ওপর প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। চায়তো আল্লাহ তা‘আলা তাকে পরকালে শাস্তি দিবেন নয়তো বা ক্ষমা করে দিবেন”।[5]

কোনো এলাকায় ইসলামের যে কোনো দণ্ডবিধি একবার প্রয়োগ করা সে এলাকায় চল্লিশ দিন যাবৎ বারি বর্ষণ থেকেও অনেক উত্তম।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«حَدٌّ يُعْمَلُ بِهِ فِيْ الْأَرْضِ خَيْرٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ مِنْ أَنْ يُّمْطَرُوْا أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا»

“বিশ্বের বুকে ধর্মীয় কোনো দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা তা বিশ্ববাসীদের জন্য অনেক উত্তম চল্লিশ দিন লাগাতার বারি বর্ষণ থেকেও”।[6]

>
[1] তিরমিযী, হাদীস ১৪২৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯২

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬১২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৯৩

[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৪৮

[4] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৯০

[5] তিরমিযী, হাদীস ১৪৩৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৫২

[6] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৮৬