লগইন করুন
القياس এর সংজ্ঞা: القياس ক্বিয়াস-এর আভিধানিক অর্থ হলো অনুমান করা, সমান করা। পারিভাষিক অর্থ:
تسوية فرع بأصل في حكم لعلة جامعة بينهما
‘‘ক্বিয়াস হলো কোন হুকুমের ক্ষেত্রে মূল দলীলের সাথে শাখাগত দলীলকে উভয়ের মাঝে সমন্বয়কারী ইল্লত (হুকুমের কারণ) থাকার কারণে সমান করা।’’[1]
الفرع (শাখা): الفرع দ্বারা উদ্দেশ্য যাকে ক্বিয়াস করা হয়।
الأصل (মূল): الأصل দ্বারা উদ্দেশ্য যার উপর অন্যকে ক্বিয়াস করা হয়।
الحكم (বিধি-বিধান): الحكم হলো শারঈ দলীল যা (বিধি-বিধান) দাবী করে।
যেমন: ওয়াজিব, হারাম, ছহীহ ও ফাসেদ প্রভৃতি।
العلة হলো: العلة হলো ঐ অন্তর্নিহিত অর্থ যার কারণে الأصل (মূল) এর হুকুম সাব্যস্ত হয়।
এ চারটি হলো ক্বিয়াসের রুকন বা ভিত্তি। যে সব দলীলের মাধ্যমে শারঈ হুকুম সাব্যস্ত হয় তার অন্যতম হলো ক্বিয়াস। এটি শারঈ দলীল হিসাবে গণ্য হওয়ার ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ ও ছাহাবীদের বাচনিক দলীল রয়েছে।
কুরআনের দলীলের মধ্যে অন্যতম দলীল হলো:
(১) আল্লাহর বাণী:
اللَّهُ الَّذِى أَنزَلَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَان
‘‘আল্লাহ যিনি সত্য সহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি আরও অবতীর্ণ করেছেন ন্যায়দন্ড (সূরা শুরা ৪২:১৭)।’’
الْمِيزَان (দাঁড়িপাল্লা) হলো যার দ্বারা বিভিন্ন জিনিস ওযন করা হয় এবং সেগুলির মাঝে তুলনা করা হয়।
(২) আল্লাহর বাণী:
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ
‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই আমি দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করবো (সূরা আল-আম্বিয়া ২১ : ২১৪)।’’
وَاللهُ الَّذِيْ أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنٰهُ إِلٰى بَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ج كَذَالِكَ النُثُوْرُ
‘‘অর্থ: আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অত:পর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অত:পর আমি তা মৃত ভূখন্ডের দিকে পরিচালিত করি। অত:পর তদ্বারা সে ভূখন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান (সূরা ফাতির ৩৫:৯)।’’
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জীবকে পুনরায় সৃষ্টি করাকে প্রথমবার সৃষ্টি করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন এবং মৃত ব্যক্তিদেরকে জীবিত করাকে জমিন জীবিত করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। এটিই হলো ক্বিয়াস। সুন্নাহ হতে দলীল হলো-
(১) যে মহিলা তার মা মারা যাওয়ার পর মায়ের পক্ষ থেকে ছিয়াম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তার জবাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য:
أرأيت لو كان على أمك دين فقضيته ، أكان يؤدي ذالك عنها؟
‘‘তোমার কি অভিমত, যদি তোমার মায়ের ঋণ থাকে, অতঃপর তা পরিশোধ করো, তবে কি তা আদায় হয়ে যাবে? মহিলা জবাবে বললেন, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, তাহলে তোমার মায়ের পক্ষ থেকে ছিয়াম পালন করো।’’[2]
(২) ‘‘এক ব্যক্তি এসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একজন কালো সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি উট আছে? লোকটি বললো, হ্যাঁ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেগুলোর রং কি? লোকটি বললো, লাল বর্ণের। তিনি বললেন, সেখানে কি ছাই বর্ণের উটও আছে? লোকটি বললো, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এ রং কোথা থেকে আসলো? লোকটি বললো, হয়তো এটি বংশগত কারণে হয়েছে। এবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জবাবে বললেন, তাহলে তোমার সন্তানও হয়তো বংশগত কারণে এমন হয়েছে।’’[3]
কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত এ রকম প্রতিটি দৃষ্টান্তই ক্বিয়াসের উপর প্রমাণ বহন করে। কেননা, এতে কোন জিনিসকে তার সমজাতীয় জিনিসের পর্যায়ভূক্ত করার’ বিষয়টি নিহিত আছে।
ছাহাবীদের বক্তব্য থেকে অন্যতম দলীল হলো শাসন কার্য ফয়সালার ক্ষেত্রে আবু মুসা আল আশআ‘রী (রা.) এর উদ্দেশ্যে চিঠিতে উমার (রা.) বলেন, ‘‘... তারপর তোমার বুঝ, যা তোমার কাছে প্রতিভাত হয়, তদানুযায়ী ফায়সালা করবে। যে মাসআ‘লার ব্যাপারে কুরআন-হাদীছে কোন দলীল নেই তা তোমার কাছে পেশ করা হলে তুমি ঐ সব মাসআ’লাকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ক্বিয়াস বা পারস্পরিক তুলনা করবে এবং উপমা সম্পর্কে জ্ঞান রাখবে। তারপর তোমার ধারণানুসারে যা আল্লাহর নিকট অধিকতর প্রিয় এবং হক্বের সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তার উপরই নির্ভর করবে।’’[4]ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বলেছেন, ‘‘এটি অত্যন্ত মর্যাদাবান চিঠি, যা উম্মাহ গ্রহণ করে নিয়েছেন। ইমাম মুযনী (রহঃ) বলেন, ছাহাবীদের যুগ থেকে তার যুগ পর্যন্ত সকল ফকীহ একমত যে, ‘নিশ্চয় হক্বের অনুরূপ জিনিসও হক্ব এবং বাতিলের অনুরূপ জিনিসও বাতিল হিসাবে বিবেচিত’ এবং তারা ফিক্বহের সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ক্বিয়াসের ব্যবহার করছেন।’’[5]
[2]. ছ্বহীহ বুখারী হা/১৯৫৩, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১১৪৮।
[3]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৫৩০৫, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৫০০।
[4]. বাইহাকী ১০/১১৫, দারাকুৎনী ৪/২০৬-২০৭
[5]. ইগাসাতুল লাহফান ১/৮৬