উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) বাক্য (الكلام) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
বাক্যের প্রকারভেদ (أقسام الكلام )

সত্য বা মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত হওয়া বা না হওয়ার দিক দিয়ে বাক্য দু’প্রকার। যথা:

(১) خبر -বর্ণনামূলক বাক্য।

(২) إنشاء -অনুজ্ঞামূলক বাক্য।

(১) خبر-বর্ণনামূলক বাক্য।

ما يمكن أن يوصف بالصدق أو الكذب لذاته

অর্থ: যে বাক্যকে সত্ত্বাগত ভাবে সত্য বা মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা যায়, তাকে خبر (বর্ণনামূলক বাক্য) বলা হয়।

আমাদের বক্তব্য: ما يمكن أن يوصف بالصدق أو الكذب (যাকে সত্য বা মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা যায়) এ অংশ দ্বারা إنشاء (অনুজ্ঞামূলক বাক্য) বের হয়ে গেছে। কারণ এটাকে সত্য বা মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়। কেননা, এর মর্মার্থ তার সম্পর্কে কোন সংবাদ নয় যে, যেখানে বলা যেতে পারে, ‘সে সত্য বলেছে’ অথবা ‘সে মিথ্যা বলেছে’।

আমাদের বক্তব্য: لذاته (সত্ত্বাগত ভাবে) এ শব্দ এর দ্বারা বের হয়ে গেছে এমন বর্ণনামূলক বাক্য, যাকে সংবাদ দাতার বিবেচনায় সত্য বা মিথ্যার সম্ভাবনা রাখে না। সুতরাং সংবাদ দাতার বিবেচনায় خبر (বর্ণনামূলক বাক্য) তিন প্রকার: যথা:

প্রথম: যাকে মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়। যেমন: আল্লাহর বর্ণনা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রমাণিত হাদীছ।

দ্বিতীয়: যাকে সত্য দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়। যেমন: শারঈ বা জ্ঞানগত ভাবে অসম্ভব জিনিস সম্পর্কে খবর দেয়া। প্রথমটির (শারঈভাবে অসম্ভব) উদাহরণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে নবুওয়াত দাবি করার সংবাদ দেয়া।[1]

দ্বিতীয়টির (জ্ঞানগত ভাবে অসম্ভব) উদাহরণ হলো পারস্পরিক বিপরীতধর্মী দু’টি জিনিস একীভূত হওয়ার খবর দেয়া। যেমন: একই সময়ে একই চোখ স্থির ও নড়া-চড়া করার খবর দেয়া।[2]

তৃতীয়ত: যাকে সত্য এবং মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়। হয়তো সমতার ভিত্তিতে অথবা একটিকে অপরটির উপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। যেমন: কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির আগমন সম্পর্কে কোন ব্যক্তির খবর দেয়া প্রভৃতি।[3]

(২) إنشاء -অনুজ্ঞামূলক বাক্য

ما لا يمكن أن يوصف بالصدق أو الكذب

‘যাকে সত্য অথবা মিথ্যার দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়, তাকে إنشاء বা অনুজ্ঞামূলক বাক্য বলে।’ إنشاء বা অনুজ্ঞামূলক বাক্যের অন্তর্ভূক্ত হলো أمر (নির্দেশ), نهي (নির্দেশ) প্রভৃতি। যেমন: আল্লাহর বাণী:

واعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না (সূরা আ ন-নিসা ৪:৩৬)।’[4]

একই বাক্য দু’দিক বিবেচনা করে একই সাথে বর্ণনামূলক ও অনুজ্ঞামূলক হতে পারে। যেমন: লেন-দেন বা চুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চারণযোগ্য ছীগাহ বা শব্দরূপ। যেমন: بعت - আমি বিক্রয় করলাম, قبلت - আমি গ্রহণ করলাম। উপরোক্ত বাক্য গুলি চুক্তিকারীর মনে যা রয়েছে- তার উপর প্রমাণ করার দিক দিয়ে خبر বা বর্ণনামূলক আবার এ বাক্য গুলির উপর ভিত্তি করে চুক্তি ধার্য হওয়ার দিক দিয়ে এটি إنشاء বা অনুজ্ঞামূলক বাক্য।[5]

কোন কোন সময় বাক্য خبر এর আকৃতিতে আসে কিন্তু উদ্দেশ্য নেয়া হয় إنشاء আবার এর বিপরীতও হয়। অর্থাৎ বাক্য ব্যবহৃত হয় إنشاء এর আকৃতিতে কিন্তু উদ্দেশ্য নেয়া হয় خبر বা বিধেয় হিসাবে।

প্রথমটির (খবর দ্বারা ইনশা উদ্দেশ্য) এর উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণী:

والمطلقات يتربصن بأنفسهن ثلاثة قروء

‘‘ তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন পবিত্রতার সময়কাল অপেক্ষা করবে (সূরা আল-বাক্বারা ২:২২৮)।’’[6]

আয়াতে يتربصن (তারা অপেক্ষা করবে) এ শব্দটি خبر হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো أمر (আদেশ)।

এর ফায়দা হলো আদিষ্ট কাজটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে এমন ভাবে গুরুত্বারোপ করা যেন কাজটি আদিষ্ট ব্যক্তির বিশেষণের ন্যায় এটি তার সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছে।[7]

বিপরীতটির (অনুজ্ঞা মূলক বাক্য দ্বারা বর্ণনা মূলক বাক্য উদ্দেশ্য) উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণী:

وقال الذين كفروا للذين آمنوا اتبعوا سبيلنا ولنحمل خطيكم

‘‘যারা কুফরী করেছে, তারা ঈমানদার লোকদের বলে, ‘তোমরা আমাদের পথ অনুসরণ করো, (এতে পাপ হলে) আমরা তোমাদের পাপের ভার বহন করবো’(সূরা আল-আনকাবূত ২৯:১২)।’’

আয়াতে ولنحمل শব্দটি أمر এর আকৃতিতে আসলেও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো خبر অর্থাৎ আমরা বহন করবো।[8] এর ফায়দা হলো যার সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়, সেটিকে আবশ্যক-অবধারিত জিনিসের স্থলে নিয়ে আসা।


ব্যবহারিক দিক থেকে كلام বা বাক্য দু’প্রকার।

الحقيقة বা প্রকৃত অর্থবোধক।
المجاز বা রূপক অর্থবোধক।[9]

الحقيقة প্রকৃত অর্থবোধক শব্দের পরিচয়:

فالحقيقة هي اللفظ المستعمل فيما وضع له

অর্থাৎ শব্দকে যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থে তা ব্যবহৃত হওয়াকে হাক্বীকত বলে।

আমাদের কথা: ‘المستعمل (ব্যবহৃত অর্থবোধক শব্দ)’ কথাটির দ্বারা مهمل তথা অর্থহীন শব্দ বাদ হয়েছে। তাই এ ধরণের শব্দকে হাক্বীকত বা মাজায কোনটিই গণ্য করা হবে না। فيما وضع له (যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে) এ অংশ দ্বারা মাজায বা রূপক অর্থবোধক শব্দ বাদ পড়েছে।

হাক্বীকত তিন প্রকার। যথা:-

১. اللغوي বা আভিধানিক হাক্বীকত (আভিধানিক প্রকৃত অর্থ)।

২. الشرعي শারঈ হাক্বীকত (শরী‘আতগত প্রকৃত অর্থ)।

৩. العرفية বা পারিভাষিক হাক্বীকত (পরিভাষাগত প্রকৃত অর্থ)।


اللغوي বা আভিধানিক হাক্বীকত এর পরিচয়

هي اللفظ المستعمل فيما وضع له في اللغة

অর্থাৎ অভিধানে শব্দ যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থে শব্দ ব্যবহৃত হওয়াকে اللغوي বা আভিধানিক হাক্বীকত বলে।

আমাদের কথা: ‘في اللغة (অভিধানে)’ সংজ্ঞার এ অংশের দ্বারা শারঈ ও পারিভাষিক হাক্বীকত বিলুপ্ত হয়েছে। الصلاة শব্দটি আভিধানিক হাক্বীকতের উদাহরণ। এ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দু‘আ করা। অভিধানবিদদের বক্তব্য অনুযায়ী শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হবে।

الشرعي শারঈ হাক্বীকত

هي اللفظ المستعمل ففيما وضع له في الشرع

শারঈ শব্দকে যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থে তা ব্যবহৃত হওয়াকে শারঈ হাক্বীকত বলে। উক্ত সংজ্ঞায় في الشرع অংশ দ্বারা আভিধানিক ও পারিভাষিক হাক্বীকত বিলুপ্ত হয়েছে। الصلاة শব্দের শারঈ প্রকৃত অর্থ হচ্ছে,

هي الأقوال والأفعال المعلومة المفتتحة بالتكبير المختتمة بالتسليم

অর্থাৎ ছ্বলাত হচ্ছে নির্দিষ্ট কথা ও কর্ম যা আরম্ভ করা হয় তাকবির তথা আল্লাহু আকবার পাঠের মাধ্যমে আর শেষ হয় সালাম ফিরিয়ে। সুতরাং শরী‘আত প্রণেতার উদ্দেশ্যে অনুযায়ী শব্দটিকে উক্ত অর্থেই ব্যবহার করতে হবে।[10]


العرفية বা পারিভাষিক হাক্বীকত

هي اللفظ المستعمل ففيما وضع له في العرف

অর্থাৎ পরিভাষায় শব্দকে যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থে শব্দ ব্যবহৃত হওয়াকে পারিভাষিক হাক্বীকত বলে।

সংজ্ঞায় ‘في العرف’ (পরিভাষায়) এ অংশ দ্বারা শারঈ ও আভিধানিক হাক্বীকত বিলুপ্ত হয়েছে। পারিভাষিক হাক্বীকতের উদাহরণ হচ্ছে الدابة বা চতুষ্পদ প্রাণী। পরিভাষায় এ শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো চার পা বিশিষ্ট প্রাণী। সুতরাং পরিভাষাবিদদের উদ্দেশ্যে অনুযায়ী শব্দটি উক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হবে।

হাক্বীকতের এ তিন প্রকার জেনে রাখার উপকারীতা হচ্ছে, ব্যবহৃত হওয়ার স্থান ভেদে হাক্বীকি অর্থের উপর শব্দ প্রয়োগ করা। তাই অভিধানবিদদের উদ্দেশ্যে অনুযায়ী হাক্বীকতে লুগাবি বা আভিধানিক প্রকৃত অর্থে এবং শরী‘আতগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাক্বীকতে শারঈ তথা শরী‘আতগত প্রকৃত অর্থের উপরই শব্দ প্রয়োগ হবে।


(২) المجاز মাজায বা রূপক অর্থ:

المجاز هو اللفظ المستعمل في غير ما وضع له

অর্থাৎ শব্দকে যে অর্থের জন্য গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থ ছাড়া অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হওয়াকে মাজায বলা হয়। যেমন: বীরপুরুষ বুঝাতে أسد (সিংহ) শব্দের ব্যবহার। এখানে ‘ المستعمل(ব্যবহারিক অর্থবোধক)’ এ অংশ দ্বারা مهمل তথা অর্থহীন শব্দ বাদ পড়েছে। তাই অর্থহীন শব্দকে হাক্বীকত বা মাজায কোন কিছুই বলা হবে না।

আমাদের কথা: في غير ما وضع له (যে অর্থের জন্য শব্দ গঠন করা হয়েছে ঐ অর্থ ছাড়া) এ অংশ দ্বারা হাক্বীকত বিলুপ্ত হয়েছে। হাক্বীকি-প্রকৃত অর্থ গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন সঠিক প্রমাণ ব্যতীরেকে মাজায বা রূপক অর্থে শব্দ প্রয়োগের বৈধতা নেই। এ দলীল-প্রমাণ ইলমুল বায়ান এর পরিভাষায় ‘القرينة বা ইঙ্গিত’ নামে পরিচিত।

মাজায-রূপক অর্থে শব্দ ব্যবহার যথার্থ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে প্রকৃত ও রূপক অর্থের মাঝে যোগসূত্র বা বন্ধন বিদ্যমান থাকা। যাতে প্রকৃত অর্থকে রূপক অর্থ দ্বারা প্রকাশ করা যথাযথ হয়। এ বন্ধনকে ইলমুল বায়ান এর পরিভাষায় علاقة (সম্পর্ক) বলা হয়। এ সম্পর্ক হতে পারে مشابهة (পরস্পরিক সাদৃশ্য) বা অন্য কিছু। আর সম্পর্কে পারস্পারিক সাদৃশ্যতা বিদ্যমান থাকলে তাকে مجاز استعارة বলে। যেমন: রূপক অর্থে বীর পুরুষ বুঝাতে أسد (সিংহ) শব্দ ব্যবহৃত হয়। আর علاقة (সম্পর্ক) পারস্পারিক সাদৃশ্য ব্যতীত অন্য কিছু হলে তাকে مجاز مرسل বলে। আর কোন কিছুর দিকে মাজায-রূপক অর্থকে إسناد সম্বন্ধযুক্ত করা হলে তাকে مجاز عقلي বলা হয়। مجاز مرسل এর উদাহরণ: رعينا المطر (আমরা ঘাস চড়িয়েছি)। এর হাক্বীকি-প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আমরা বৃষ্টি চড়িয়েছি। এখানে المطر (বৃষ্টি) শব্দটি العشب (ঘাস) এর রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই শব্দটি মাজায অর্থেই গণ্য।

مجاز عقلي এর উদাহণ: أنبت المطر العشب(বৃষ্টি ঘাস উৎপন্ন করেছে)। এ বাক্যের প্রতিটি শব্দ হাক্বীকি-প্রকৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ঘাস উৎপন্ন হওয়ার সম্বন্ধ বৃষ্টির দিকে করা হয়েছে রূপক অর্থে। এখানে প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাই ঘাস উৎপন্নকারী। তাই المطر শব্দটি সম্বন্ধের দিক থেকে মাজায-রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। مجاز مرسل এর আরো অন্তর্ভূক্ত বিষয় হলো তা বৃদ্ধি পাওয়া ও বিলুপ্ত করণের মাধ্যমে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হওয়া। উছুলবিদগণ নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করতঃ শব্দ বৃদ্ধির উদাহরণ দিয়েছেন।

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ

কোন কিছুই তার অনুরূপ নয় (সূরা শুরা ৪২:১১)।

তারা বলেন, এখানে كَ কাফ বর্ণটি অতিরিক্ত। যা আল্লাহর সাদৃশ্যতা নাকোচ করার বিষয়টি গুরুত্বারোপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

শব্দ বিলুপ্তির উদাহরণ: আল্লাহর বাণী: وسئل القرية অর্থ: জিজ্ঞেস করুন ঐ জনপদকে (সূরা ইউসূফ ১২:৮২)। বাক্যেটি মূলে ছিল واسأل أهل القرية। অর্থাৎ জনপদের অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করুন।

উক্ত আয়াতাংশ হতে أهل(অধিবাসী) শব্দটিকে রূপকভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। মাজাযের আরো অনেক প্রকার রয়েছে যা ইলমুল বায়ানে আলোচনা করা হয়েছে। উছুলে ফিক্বহের হাক্বীকত ও মাজায সম্পর্কে মাত্র একটি দিক আলোচনা করা হলো। কেননা, শব্দের প্রকৃত অথবা রূপক উভয় অর্থ ও হুকুম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলাই এসম্পর্কে অধিক অবগত।

সতর্কীকরণঃ
কুরআন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কালাম বা বাক্যের হাক্বীকত-প্রকৃত ও মাজায-রূপক অর্থের বিভাজন পরবর্তী অধিকাংশ আলিমের নিকট প্রসিদ্ধ বিষয়। তবে বিদ্বানদের কতিপয় বলেছেন, কুরআনে কোন মাজায-রূপক অর্থ নেই। আরো কতিপয় বলেছেন, কুরআনসহ অন্য কোথাও মাজায-রূপক অর্থ বলতে কিছুই নেই। আবূ ইসহাক্ব আল-ইসফারাইনী, পরবর্তীদের মাঝে আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন শানক্বীতি এ মন্তব্য করেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ ও তার ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়ূম বর্ণনা করেন যে, এ বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ তিন যুগের পরে আবিস্কৃত পরিভাষা। তিনি এ কথাটি শক্তিশালী দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে সমর্থন করেছেন। কেউ তা অবগত হলে তার নিকট সুস্পষ্ট হবে যে, এটিই সঠিক মত।

[1]. যেহেতু কুরআনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নাবী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেখুন, সুরা আহযাব/৪০।
[2]. অর্থাৎ কোন বস্ত্ত একই সময়ে নড়া চড়া করা আবার স্থির থাকা মানবীয় জ্ঞান বিচারে অযৌক্তিক বিষয়।
[3]. যেমন: সততার গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির সংবাদকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সত্য বলে জানবো আবার মিথ্যাবাদী হিসাবে পরিচিত ব্যক্তির সংবাদকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মিথ্যা বলে জানবো। আর সত্য ও মিথ্যার ব্যাপারে কিছুই জানা যায় না, তার সংবাদ সত্য ও মিথ্যার ক্ষেত্রে সমসম্ভাবনা থাকবে।


[5]. যেহেতু বাক্যগুলি বক্তার মনে যা আছে তার খবর দিচ্ছে, সে হিসাবে এটি বর্ণনামূলক। আবার এটি অনুজ্ঞামূলকও বটে, যেহেতু এর বক্তাকে সত্যবাদী বা মিথ্যাবাদী হিসাবে অভিহিত করা সম্ভব নয়।
[6]. আয়াতটির অর্থ হয়, তালাকপ্রাপ্তা নারীরা যেন তিন পবিত্রতার সময়কাল অপেক্ষা করে।
[7]. خبر মূলতঃ ছিফাত বা বিশেষণ। যেমন: زيد قائم - যায়েদ দন্ডায়মান। এখানে দন্ডায়মান হলো যায়েদ সম্পর্কে খবর যা তার একটি বিশেষণ বুঝাচ্ছে। সুতরাং তালাকপ্রাপ্তা নারীদের ব্যাপারে যখন ইদ্দত পালন করার খবর দেয়া হয়, সেটি যেন তাদেরই একটি ছিফাত বা বৈশিষ্ট যা পালনের দাবীকে গুরুত্বারোপ করে।
[8]. অথচ আমর হিসেবে অর্থ হওয়ার কথা ছিল এরকম: ‘আমরা যেন বহন করি।’
[9]. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ তিনটি যুগ অর্থাৎ ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ যুগে কালামের এ বিভাজন প্রচলিত ছিল না। অথচ আরবী ভাষা সম্পর্কে পরবর্তীদের চেয়ে তারাই বেশি অবগত ছিলেন। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ, আবূ হানীফা, আওযাঈ, দাউদ রহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বিদ্বান ও তাদের শিষ্যদের লেখনীতে এর প্রমাণ মিলে। যারা মনে করে যে, প্রসিদ্ধ মুজতাহিদ আলিম এবং অন্যান্য সালাফ ইমামগণ এ বিভাজন করেছেন, তাদের এ ধারণা সালাফ ইমামগণের বক্তব্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা হিসাবে বিবেচিত হবে। যা মূলত মু‘তাযিলা ও তাদের অনুসারীদের বক্তব্যে থেকে জানা যায়। আর তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, অভিধান এবং নাহু কোন বিষয়েই তাদের ভূমিকা বা অবদান নেই। আর ভাষা ও নাহু শাস্ত্রবিদ খলীল, সিবওয়াইহ, কাসাঈ, র্ফারা এবং তাদের মতো ভাষা ও ব্যাকরণবিদগণের মধ্যে অন্যরাও এ বিভাজনের সাথে পরিচিত ছিলেন না। দ্র: মাজমু‘আ আল-ফাতাওয়া ২০/৪০০-৪০৫ পৃ। আল্লামা ইবনুল কাইয়ূম (রহঃ) এ বিভাজন বাতিল হওয়ার ৫০ টি দিক উল্লেখ করেছেন। দেখুন, مختصر الصواعق المرسلة ২৭১ পৃ:। এ প্রসঙ্গে গ্রন্থকার শাইখ ছালিহ আল-উছাইমিন (রহঃ) বলেন,

على كل حال نحن وضعنا في هذا الكتاب الحقيقة والمجاز وهو ففي تأليفنا لكن إنما وضعناه قبل أن يتبين لنا الصحة او يتبين لنا بيانا واضحا انه لا مجاز.

এ কিতাবে আমরা হাক্বীকত ও মাজায সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যা আমাদের রচনার অন্তর্ভূক্ত। মূলতঃ সঠিক বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হওয়া অথবা মাজায বলতে কিছুই নেই এটার সুস্পষ্ট বর্ণনার আগেই আমরা তা লিপিবদ্ধ করেছি।

দেখুন, শারহুল উছুল মিন ইলমিল উছুল ১১৯ পৃ:।

[10]. অর্থাৎ কুরআন ও হাদীছে যখন ছ্বলাত শব্দ আসবে, তখন এর দ্বারা শারঈ ছ্বলাতই উদ্দেশ্য নেয়া হবে। যদি এ অর্থ উদ্দেশ্য নিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। যেমন: জানাযার ছ্বলাত, ইসতিস্কার ছ্বলাত প্রভৃতি।