উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) বাক্য (الكلام) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
পরিচিতি

আভিধানিকভাবে الكلام এর অর্থ হলো: অর্থবোধক উচ্চারিত শব্দ।[1]

পারিভাষিক অর্থ: الكلام এর অর্থ হলো:

اللفظ المفيد

‘‘অর্থাৎ উপকারী বাক্যকে কালাম বা বাক্য বলা হয়।’’[2] যেমন: আল্লাহ আমাদের রব বা প্রতিপালক, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নবী।

নূন্যতম যার দ্বারা বাক্য গঠিত হয় তা হলো, দু’টি ইসম বা বিশেষ্য দ্বারা অথবা একটি ইসম ও একটি ফে‘ল দ্বারা। প্রথমটির উদাহরণ হলো محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল)। দ্বিতীয়টির উদাহরণ হলো استقام محمد (মুহাম্মদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে)।

الكلام এর একবচন হলো كلمة। পরিভাষায় كلمة বলা হয়-

اللفظ الموضوع لمعنى مفرد وهي إما اسم أو فعل أو حرف

‘‘অর্থাৎ একক অর্থের জন্য গঠিত শব্দকেই كلمة বলা হয়।’’ এটি ইসম, ফেল বা হরফ হতে পারে। সুতরাং كلمة বা শব্দ তিন প্রকার। যথা: ক. إسم বা বিশেষ্য খ. فعل বা ক্রিয়া গ. حرف বা অব্যয়।

ক. إسم বা বিশেষ্য:

‘যে শব্দ কোন সময় উল্লেখ না করেই নিজেই নিজের অর্থ প্রকাশ করতে পারে, তাকে ইসম বলে।’ إسم তিন প্রকার:

প্রথম প্রকার: যা عموم বা ব্যাপকতার উপকারীতা দেয়।[3] যেমন: الأسماء الموصولة

দ্বিতীয় প্রকার: যা اطلاقবা শর্তহীনতার উপকারীতা দেয়। যেমন: হ্যাঁ বাচকের প্রেক্ষাপটে অনির্দিষ্ট ইসমের ব্যবহার।[4]

তৃতীয় প্রকার: যা خصوص বা নির্দিষ্টতার ফায়দা দেয়। যেমন: নির্দিষ্ট নাম সমূহ।[5]

খ. فعل বা ক্রিয়া

‘যে শব্দ নিজের অর্থ নিজেই প্রকাশ করে এবং তার শব্দরূপের মাধ্যমে তিন কালের কোন এক কালকে নির্দেশ করে, তাকে ফে‘ল বা ক্রিয়া বলে।’[6] এটি হয়তো বা ماضي বা অতিত কালের অর্থ প্রদান করবে। যেমন: فهم -সে বুঝেছে, অথবা مضارعবা বর্তমান/ভবিষ্যত কালের অর্থ প্রদান করবে। যেমন: يفهم সে বুঝতেছে বা বুঝবে, অথবা أمرবা নির্দেশের অর্থ প্রদান করবে। যেমন: افهم -তুমি অনুধাবন করো। সকল প্রকার ফে‘ল মুতলাক বা শর্তহীনতার ফায়দা দেয়। সুতরাং এতেعموم বা ব্যাপকতা নেই।[7]


গ. حرف বা অব্যয়

যা অন্যে পদের সাথে মিলিত হয়ে নিজের অর্থ প্রকাশ করে, তাকে হরফ বা অব্যয় বলে। হরফ বা অব্যয়ের অন্তর্ভূক্ত পদ নিম্নে তুলে ধরা হলো:

الواو এটি عاطفة (সংযোজক অব্যয়) হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি হুকুমের মধ্যে معطوف عليه ও معطوف কে শরীক হওয়ার ফায়দা দেয়। এটি দলীল ছাড়া তারতীব দ্বারা ধারাবাহিকতার দাবী করে না আবার তা নাকচও করে না।[8]


الفاء -পদটি عاطفة (সংযোজক অব্যয়) হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এবং হুকুমের মধ্যে معطوف عليه ও معطوف কে পর্যায়ক্রমে শরীক হওয়ার ফায়দা দেয়।[9] এটি سببية (কারণ বর্ণনা করা) অর্থে ব্যবহৃত হয়।


اللام الجارة-যের প্রদানকারী লাম। এর বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো কারণ বর্ণনা করা, মালিকানা বুঝানো, বৈধতা বুঝানো প্রভৃতি।


على الجارة-যের প্রদানকারী على পদটির বেশ কিছু অর্থ রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো এ অব্যয় পদটি ওয়াজিব হওয়ার ফায়দা দেয়।

[1]. আরবি ভাষায় বলা হয়-ما يتلفظ به الإنسان অর্থাৎ মানুষ যা উচ্চারণ করে। সুতরাং লফয এর মধ্যে পাঁচটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত। তা হলো ১. ইসম বা বিশেষ্য ২. ফে‘ল বা ক্রিয়া ৩. হরফ বা অব্যয় ৪. মুরাক্বাবে গাইরে মুফীদ বা অপরিপূর্ণ যৌগিক শব্দ ৫. মুরাক্বাবে মুফীদ বা বাক্য।

[2]. اللفظ المفيد দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মুরাক্বাবে মুফীদ বা বাক্য। সুতরাং বোবা লোকের ইশারা, লেখা প্রভৃতি দ্বারা ভাব বোঝা গেলেও, তা কালাম বা বাক্য নয়। যেহেতু এগুলি উচ্চারিত হয় না। অনুরূপ ভাবে যায়েদ, খালেদ প্রভৃতিও কালাম নয়, যেহেতু এগুলি দ্বারা পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশ পায় না।

[3]. আম অর্থ ব্যাপক। এটি شمول عمومي বা ব্যাপক ভাবে তার সকল একককে বুঝায়। যেমন: الإنسان দ্বারা ব্যাপক ভাবে সব মানুষকে বুঝায়। যে কোন একজনকে বুঝায় না।

[4]. মুতলাক বা শর্তহীন। এটি কোন রূপ শর্ত ছাড়াই অনির্দিষ্ট ভাবে যে কোন একজনকে নির্দেশ করে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে না। যেমন: যদি বলা হয়: في الدار رجل (ঘরে একজন লোক রয়েছে।) এর দ্বারা অনির্দিষ্ট ভাবে যে কোন একজন উদ্দেশ্য।

[5]. আম, খাস, মুতলাক, মুকাইয়াদ প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সামনে অচিরেই আসছে ইনশাআল্লাহ।

[6]. শব্দরূপ দ্বারা বিভিন্ন কাল প্রকাশ করে। যেমন: فهم - সে বুঝেছে, يفهم সে বুঝতেছে বা বুঝবে, افهم -তুমি বুঝো প্রভৃতি। তাই যে সব শব্দ রূপের পরিবর্তনের মাধ্যমে কাল না বুঝিয়ে মূল ধাতুর মাধ্যমে কাল নির্দেশ করে, সেগুলি ফে‘ল হিসাবে গণ্য হবে না। যেমন: نهار- দিন, ليلة রাত প্রভৃতি।

[7]. যেমন: যদি বলা হয় صام يوم الإثنين- তিনি সোমবারে ছিয়াম রেখেছেন। এর দ্বারা যে কোন এক সোমবারে ছিয়াম রাখা বুঝায় সব সোমবারে ছিয়াম রাখা বুঝায় না। তবে ব্যাপক অর্থবোধক কোন শব্দ যদি ফে‘লের সাথে যুক্ত হয়, তখন ফে‘ল ব্যাপকতার উপকারীতা দিবে। যেমন: كان النبي صلى الله عليه وسلم يصوم يوم الإثنين. অর্থ: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে ছিয়াম রাখতেন। এখানে ব্যাপকভাবে সব সোমবার উদ্দেশ্য। যে কোন এক সোমবার উদ্দেশ্য নয়। কেননা, كان শব্দটি অধিকাংশ সময় চলমান এর ফায়দা দেয়।

[8]. ভিন্ন দলীল থাকলেও و পদটি তারতীবের ফায়দা দেয়। এর দলীল হলো আল্লাহ বলেন, إن الصفا والمروة من شعائر الله. -‘নিশ্চয় ছাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম (সূরা বাক্বারা ২:১৫৭)। অত্র আয়াতটি ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে তারতীব বা ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে সাঈ করাকে আবশ্যক করে না। কিন্তু হাদীছে আছে- إبدأ بما بدأ الله به -অর্থাৎ আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন, তোমরাও তা দিয়ে শুরু করো। সুতরাং অত্র হাদীছের ভিত্তিতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক।

[9]. ف পদটি ধারাবাহিকতা ও পর্যায়ক্রমের ফায়দা দেয়। যেমন: আল্লাহর বাণী:

الم تر أن الله ينزل من السماء ماء فتصبح الأرض مخضرة . - ‘‘তুমি কি লক্ষ্য করনি, নিশ্চয় আল্লাহ তাআ‘লা আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। ফলে জমিন সবুজ হয়ে যায় (সুরা হাজ্জ ২২:৬৩) ।’’