লগইন করুন
১। কতোক হাজী মিনা থেকে বিদায়ের দিন জামরায় পাথর মারার পূর্বেই সেখান থেকে মক্কায় চলে আসে। তারপর বিদায় তাওয়াফ করে মিনা গিয়ে জামরাতে পাথর মারে। অতঃপর সেখান থেকে নিজ দেশে চলে আসে। অথচ ইহা জায়েয নয়; কারণ, ইহা নাবী (সা.)-এর নির্দেশ বিরোধী কাজ। তিনি বলেছেন, হাজীর শেষ কাজ যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ হয়। আর যে ব্যক্তি বিদায়ী তাওয়াফের পর জামরায় পাথর নিক্ষেপ করল সে তার শেষ সাক্ষাৎ (কাজ) বায়তুল্লাহর সাথে না করে জামরার সঙ্গে করল। আর নাবী (সা.) হাজ্জের সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ করে মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করেছেন এবং তিনি একথাও বলেছেন,
خُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم
তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[1]
আর উমার (রা.) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীস স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, বায়তুল্লাহর বিদায়ী তাওয়াফই হচ্ছে হজ্জের সর্বশেষ আমল। অতএব কোন ব্যক্তি যদি বিদায়ী তাওয়াফ করার পরে জামরায় পাথর মারে তাহলে তার তাওয়াফ যথাস্থানে না হওয়ার কারণে যথেষ্ট নয়। তাই তাকে পাথর মারার পরে পুনঃরায় বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। আর তা না করলে তার বিধান বিদায়ী তাওয়াফ পরিত্যাগকারী ব্যক্তির অনুরূপ। ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তাকে দম (কুরবানী) দিতে হবে।
২। অনেক হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফের পরেও মক্কায় বসে থাকে, তাহলে তাদের শেষ সাক্ষাৎ বায়তুল্লাহর সাথে হলো না। আর ইহা নাবী (সা.) যে নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং নিজ কর্ম দ্বারা উম্মাতের সামনে বর্ণনা করেছেন তার পরিপন্থী কাজ। আর নাবী (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন যে, হাজীর শেষ কাজ যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ হয় এবং তিনি নিজেও মক্কা থেকে বের হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে বিদায়ী তাওয়াফ করেছেন। আর সাহাবীগণও অনুরূপ আমল করেছেন। তবে আলিমগণ বিদায় তাওয়াফের পরে অনিচ্ছাকৃত কোন বিশেষ কারণে মক্কায় অবস্থান করাকে জায়েয বলেছেন। যেমন, বিদায় তাওয়াফের পরে যদি সলাতের ইকামাত হয়ে যায়, তাহলে সলাত আদায় করে নিবে। কিংবা বিদায়ী তাওয়াফের পরে যদি জানাযা উপস্থিত হয়ে যায় তাহলে জানাযার সলাত আদায় করে নিবে। অথবা সফরের কোন সামান খরীদ করা বা সঙ্গীদের অপেক্ষা করা ইত্যাদি। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি বিদায়ী তাওয়াফের পরে ইচ্ছাকৃতভাবে মক্কায় অবস্থান করে তাহলে তার প্রতি পুণঃরায় বিদায়ী তাওয়াফ করা আবশ্যক হবে।
৩। অনেক হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফের পরে কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে উল্টোভাবে মাসজিদে হারাম থেকে বের হয়। তারা মনে করে যে, ইহাতে কা‘বা ঘরের সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অথচ ইহা সুন্নাত বিরোধী কাজ। বরং তা বিদআত, যা থেকে আল্লাহর রসূল (সা.) আমাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে বলেছেন,
كُلَّ بِدْعَة ضَلالَةٌ
প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।[2]
আর বিদ‘আত এমন নব আবিস্কৃত আকীদা ও ইবাদাতকে বলা হয় যা রসূল (সা.) এবং তাঁর খলীফা রাশিদগণ-এর আকীদা ও আমল পরিপন্থী। তাহলে কি কা‘বা ঘর সামনে করে উল্টোভাবে ফিরা ব্যক্তি মনে করে যে, সে রসূল (সা.)-এর অপেক্ষা কা‘বা ঘরের অধিক সম্মানকারী? না কি মনে করে যে, উল্টোভাবে ফিরায় কা‘বার সম্মান প্রদর্শন করা হয় এ বিষয়টি নাবী (সা.) এবং তাঁর খুলাফা রশিদীন জানতেন না?
৪। অনেক হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফ সমাপ্ত করে মাসজিদে হারামের দরজায় গিয়ে কা‘বা ঘরের দিকে চেয়ে দেখে এবং সেখানে দাঁড়িয়ে কা‘বা ঘর থেকে বিদায় নেয়ার মত করে দু‘আ করতে থাকে। ইহাও একটি বিদআত; যার কোন প্রমাণ নাবী (সা.) এবং তাঁর তাঁর খলীফা রাশিদগণ হতে নেই। আর যে কোন আমল দ্বারা যদি মহান আল্লাহর ইবাদাত উদ্দেশ্য করা হয় অথচ তার ইসলামী শরিয়তে কোন প্রমাণ নেই, তাহলে তা বাতিল এবং প্রত্যাখ্যাত। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:
مَنْ أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
যে ব্যক্তি আমাদের এবিষয়ে কোন নুতন কিছু আবিষ্কার করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত।[3] অর্থাৎ তা ঐ ব্যক্তির দিকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। তা আল্লাহর নিকট কাবুল হবে না।
অতএব আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ঈমানদার ব্যক্তির উপর আবশ্যক হলো, নিজ ইবাদাতে রসূল (সা.)-এর আদর্শের অনুসারী হবে। যাতে করে সে আল্লাহর ভালবাসা ও মার্জনা হাসিল করতে পারে। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন:
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবী! বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[4]
আর নাবী (সা.)-এর অনুসরণ যেমন হবে তাঁর ইতিবাচক কর্মের ক্ষেত্রে তেমনি হবে তাঁর নেতিবাচক কর্মের ক্ষেত্রেও। তাই যদি নাবী (সা.)-এর আমলে কোন কর্মের ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি তা না করে থাকেন তাহলে ইহা প্রমাণ করে যে, ইহা পরিত্যাগ করাটাই হচ্ছে নাবী আদর্শ ও তাঁর শরিয়াত। সুতরাং তা মানুষকে যতই ভাল লাগুক না কেন মহান আল্লাহর দ্বীনে তার আবিষ্কার করা জায়েয নয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ بَلْ أَتَيْنَاهُم بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَن ذِكْرِهِم مُّعْرِضُونَ
সত্য যদি তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অনুগামী হত তাহলে আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মাঝে যা আছে সমস্ত কিছুই বিশৃংখল হয়ে যেত। বরং (তোমাদের কামনা-বাসনার বিপরীতে) আমি তাদেরকে দিয়েছি তাদের জন্য উপদেশবাণী। কিন্তু তারা উপদেশবাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।[5]
আর নাবী (সা.) বলেছেন:
لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ
তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি (মনের কামনা-বাসনা) আমার আনীত বিধানের অনুসারী না হয়ে যায়।[6] মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ করি যেন তিনি আমাদেরকে তাঁর সহজ-সরল পথ দেখান, আমাদের সঠিক পথ দেখানোর পর হৃদয়কে বক্র না করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে যেন আমাদেরকে করুণা প্রদান করেন। নিশ্চয়ই তিনি মহান দাতা।
>[2]. সহীহ: সুনানে দারিমী ৯৬, ইবনে মাজাহ ৪২, সহীহ মুসলিম ৮৬৭।
[3]. সহীহ মুসলিম ১৭১৮।
[4]. সূরা আল-ইমরান ৩:৩১
[5]. সূরা মু’মিনূন ২৩:৭১
[6]. যঈফ সনদ: মিশকাতুল মাসাবিহ ১৬৭, ইমাম বাগভীর শারহুস্ সুন্নাহ