লগইন করুন
নাবী (সা.) থেকে প্রমাণিত যে, তিনি আরাফার দিবসে নামেরা নামক স্থানে সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। অতঃপর বাহনে চেপে উরনাহ্ নামক উপত্যকায় অবতরণ করেন এবং সেখানে যুহর ও আসর সলাত দুই দুই রাকা‘আত (কসর) জমা তাকদীম (অগ্রীম একত্রিত) করে এক আযান এবং দুই ইকামাতে আদায় করেন। তারপর বাহনে চেপে আরাফায় নিজ অবস্থানস্থলে আগমন করেন এবং তিনি একথা বলেন:
وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ
আর আমি এখানে অবস্থান করলাম। তবে আরাফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল।[1] অতঃপর তিনি (সা.) সেখানে কিবলামুখী হয়ে দুই হাত উত্তোলন করে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আল্লাহর যিকির ও তাঁর নিকট দু‘আ করায় ব্যস্ত থাকেন। তারপর সম্পূর্ণরূপে সূর্য ডুবে গেলে তিনি (সা.) মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।
এক্ষেত্রে কতিপয় হাজীগণ যে ভুলগুলি করে থাকে তা হচ্ছেঃ
১। অনেক হাজীরা আরাফার সীমানার বাইরে অবতরণ করেন এবং তারা সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান না করে সেখান থেকেই মুযদালিফার উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন। ইহা বড় মারাত্মক ভুল; যাতে হাজ্জ নষ্ট হয়ে যাবে; কারণ আরাফায় অবস্থান হচ্ছে রুকুন, যা ব্যতীত হাজ্জ শুদ্ধ হয় না। অতএব কোন ব্যক্তি যদি আরাফায় অবস্থানকালে সেখানে অবস্থান না করে তাহলে তার হাজ্জ হয় না। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:
الْحَجُّ عَرَفَةُ مَنْ جَاءَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ
হাজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম। সুতরাং যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হাজ্জ পেয়ে গেল।[2]
এই ভুলের কারণ হচ্ছে, লোকেদের পরস্পরকে দেখে প্রতারিত হওয়া। কেননা অনেক মানুষ আরাফায় পৌঁছার পূর্বেই তার সীমানা না দেখেই আরাফার বাইরেই অবস্থান করে নেয়, ফলে তারা নিজেদের হাজ্জ নষ্ট করে এবং অন্যরা ধোকা খেয়ে তাদের অন্ধ অনুকরণ করে।
তাই কতই না ভাল হতো যদি হাজ্জ বিষয়ক দায়িত্বশীলগণ বিভিন্ন ভাষায় ঘোষণা করে লোকদেরকে জানিয়ে দিতেন এবং তাঁরা যদি মুআল্লিমদেরকে নির্দেশ দিতেন, যাতে করে তারা হাজীদেরকে এধরণের কাজ থেকে সতর্ক করে। তাহলে হাজীরা জেনে শুনে সুন্দরভাবে হাজ্জ পালন করত, যাতে করে তারা দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে।
২। তাদের আর একটি ভুল হচ্ছে যে, তারা সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই আরাফা থেকে বেরিয়ে পড়ে। অথচ ইহা হারাম। কারণ, ইহা নাবী (সা.)-এর আদর্শ বিরোধি কাজ; কেননা তিনি আরাফায় সূর্য সম্পূর্ণরূপে ডুবা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। এছাড়া আরাফা থেকে সূর্য অস্ত হওয়ার পূর্বে ফিরে আসা জাহিলী যুগের কাফিরদের প্রথা। (যার বিরোধিতা করা মুসলিমের জন্য আবশ্যক)।
৩। অনেক হাজীরা আরাফায় আরো একটি ভুল করে থাকে; তা হলো যে, তারা দু‘আ করার সময় কিবলা পিছনে, কিংবা তাদের ডানে বা বামে হলেও আরাফার পাহাড়কে (যা জাবালে রাহামাত বলে সাধারণদের নিকট পরিচিত) সামনে করে দু‘আ করে। ইহা নাবী (সা.)-এর সুন্নাত বিরোধী কাজ। কারণ, দু‘আর সুন্নাত হচ্ছে যেমন নাবী (সা.) কিবলামূখী হয়ে দু‘আ করেছেন তেমনিই করা।
[2]. সহীহ: ইমাম আহমাদ ১৮৭৭৪, সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৯৮১২, নাসাঈ ৩০১৬, তিরিমিযী ৮৮৯ ও ইবনু মাজাহ ৩০১৫।