লগইন করুন
নাবী (সা.) থেকে প্রমাণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের সামনে আসলেই মহান আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে "আল্লাহু আকবার" পাঠ করতেন।[1]
আর রুকনে ইয়ামানী এবং হাজরে আসওয়াদের মাঝে এ দু‘আ পাঠ করতেন:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
[রব্বানা আতিনা ফিদ্দুন ইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্, ওয়াক্বিনা আযা বান্নার]
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।[2] আর নাবী (সা.) বলেছেন:
إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ
নিশ্চয়ই বায়তুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ার সাঈ এবং জামরাগুলিতে কংকর নিক্ষেপ করা আল্লাহর যিকির (স্মরণ) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে বিধি-বদ্ধ করা হয়েছে।[3]
১। এক্ষেত্রে কতেক হাজীরা যে ভুল করে থাকে তা হচ্ছে, প্রত্যেক চক্করে একটি করে বিশেষ গদ বাঁধা দু‘আ পাঠ করা। উপরোক্ত দু‘আ ছাড়া আর কোন দু‘আ পাঠ করবে না। এমন কি সেই চক্করটি যদি নির্দিষ্ট দু’আটি শেষ হবার আগে সমাপ্ত হয়ে যায় তাহলে দু‘আটির একটি শব্দ অবশিষ্ট থাকলেও তা বন্ধ করে দেয়, যাতে করে পরের চক্করে নুতন দু‘আ পাঠ করতে পারে। আর যদি চক্কর সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিশেষ দু‘আটি পড়া শেষ হয়ে যায় তাহলে নিরব হয়ে থাকে।
অথচ তাওয়াফ সম্পর্কে নাবী (সা.) হতে প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ কোন দু‘আ পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তাই শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহঃ) বলেন, তাওয়াফ সংক্রান্ত কোন বিশেষ নির্ধারিত যিকির বা দু‘আ নাবী (সা.) থেকে প্রমাণিত নয়। না তাঁর এ সম্পর্কে কোন নির্দেশ, না তাঁর কোন উক্তি, আর না তিনি কোন ব্যক্তিকে শিক্ষা দিয়েছেন।
বরং তিনি (সা.) তাওয়াফের সময় যে কোন শরিয়াত সম্মত দু‘আ করতেন। আর অনেক লোকেরা কা’বা ঘরের ছাদের নালার নীচে বা তাওয়াফের সময় যে বিশেষ দ’ুআ পাঠ করেন, তার কোন ভিত্তি নেই। তাই তাওয়াফকারী ইহকাল-পরকালের কল্যাণের জন্য নিজ পছন্দ মত যে কোন দু‘আ পাঠ করবে।
অনুরূপ যে কোন শরিয়াত সম্মত যিকির (যা সম্মিলিত নয় এবং অসম্পূর্ণ বাক্য দিয়ে নয়) দ্বারা মহান আল্লাহর যিকির করবে। যেমন:
তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ পাঠ করা)
তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করা)
তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা)
তাকবীর (আল্লাহু আকবার পাঠ করা)
অথবা কুরআন তিলাওয়াত করা।
২। আর কতেক তাওয়াফকারীদের ভুল হচ্ছে যে, তারা এ গদ বাঁধা দু‘আগুলি লিখিতভাবে হাতে নিয়ে অর্থ না বুঝেই পাঠ করে। কখনো তাতে টাইপের ভুল থাকার কারণে অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। যার ফলে তার অজানাতেই নেক দু‘আ বদ দু‘আয় পরিণত হয়। আর আমরা এধরণের আশ্চর্যজনক দু‘আ অনেক শুনে থাকি। তাই যদি তাওয়াফকারী ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামত অর্থ বুঝে দু‘আ করতো তাহলে তার জন্য ইহা বড় কল্যাণকর ও অধিক উপকারী হতো এবং রসূল (সা.)-এর খাঁটি অনুসারীও হতে পারত।
৩। কতেক তাওয়াফকারী আরো ভুল করে যে, তারা কোন এক মুআল্লিম ভাড়া করে, যে একদলকে তাওয়াফ করায় এবং তাদেরকে উচ্চস্বরে দু‘আ পড়াতে থাকে, তখন উক্ত দলটি সম্মিলিতভাবে চিৎকার করে তার অনুসরণ করতে থাকে, যাতে বড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ফলে অন্যান্য তাওয়াফকারীদের জন্য এমন কষ্টের কারণ হয়ে যায় যে তারা কি পড়ছে টেরও পাচ্ছে না। এতে তাওয়াফের খুশু ও বিনয়ীভাব বিনষ্ট হয়ে যায় এবং এরকম পবিত্র ও নিরাপদ স্থানে আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেয়া হয়।
অথচ একদা নাবী (সা.) কিছু লোকদের একসাথে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করে সলাত আদায় করতে দেখে তাদের সামনে বের হয়ে বললেন:
إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِي رَبَّهُ فَلْيَنْظُرْ بِمَا يُنَاجِيهِ بِهِ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ
নিশ্চয়ই সলাত আদায়কারী নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে চুপিস্বরে কথা বলে, সুতরাং সে যেন চিন্তা করে নেয় যে, কিভাবে তাঁর সাথে কথা বলছে। আর তোমাদের একে অপরের সামনে যেন উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত না করে।[4] তাই কতই না ভাল হতো যদি এ মুআল্লিম কা‘বা ঘরের নিকট লোকদেরকে নিয়ে এসে তাওয়াফের নিয়মাবলী শিখিয়ে দিত এবং তারা নিজ নিজ পছন্দমত অর্থ বুঝে দু‘আ করত। আর তাদের সঙ্গে তাওয়াফ অবস্থায় থেকে ভুল-ভ্রান্তির সংশোধন করে দিত তাহলে তারা বিনয় ও প্রশান্তির সাথে তাওয়াফ করতে পারতো এবং অন্তরে আল্লাহ পাকের ভয়-ভীতি নিয়ে একনিষ্ঠভাবে বুঝে-বুঝে নিজ ইচ্ছা মতো দু‘আ করে ধন্য হতো এবং অন্যান্য লোকেরাও তাদের পক্ষ হতে কোন রকম কষ্ট পাওয়া থেকে নিরপদ থাকত।
>[2]. হাসান: সুনানে আবূ দাউদ ১৮৯২, সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২০১
[3]. হাসান: সুনানে দারিমী ১৮৯৫।
[4]. মুআত্তা ইমাম মালিক, ইমাম আবনু আব্দিলবার হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।