লগইন করুন
১। নবীগণের কাজকর্ম ও চরিত্র তাদের জীবন-চরিত থেকে গ্রহণ করতে হবে। নবীগণ আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দিতে অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। আল্লাহর পথে তাদের পা ধুলিময় হয়েছে। আল্লাহর কালেমা সুউচ্চকরণে তারা নিজেদেরকে ও নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করেছেন। আল্লাহর নির্দেশাবলী বাস্তবায়নে তাদের কপাল ঘেমেছে। আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের জন্য (দীর্ঘ পথ অতিক্রমে) তাদের পা ফেটেছে।
অবশ্যই তারা মানুষের নিকট হক্ব পৌঁছে দিতে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে, তারা হিজরত করেছেন, তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে, তারা যুদ্ধ করেছেন ও শহীদ হয়েছেন, তাদের ভিত্তি নড়বড়ে করে দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, গালি দেয়া হয়েছে, তিরস্কার করা হয়েছে, তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে, অপবাদ দেয়া হয়েছে, প্রহার করা হয়েছে, তবুও নবীগণ দয়া দেখিয়েছেন, ধৈর্য ধারণ করেছেন, যতক্ষণ না আল্লাহর সাহায্য এসেছে এবং তাদের শত্রুদের ধ্বংস করে দিয়েছেন।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِنْ نَبَإِ الْمُرْسَلِينَ (34)) ... [الأنعام: 34].
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে অস্বীকার করা হয়েছে, অতঃপর তারা তাদেরকে অস্বীকার করা ও কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেছেন, যতক্ষণ না আমার সাহায্য তাদের কাছে এসেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ তোমার কাছে এসেছে’(সূরা আল-আন‘আম:৩৪)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(حَتَّى إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَنْ نَشَاءُ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ ) [يوسف: 110]
অবশেষে যখন রাসূলগণ (কওমের ঈমান থেকে) নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তারা মনে করলেন, তাদের সাথে মিথ্যা বলা হয়েছে, তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য আসল, অতঃপর আমি যাকে ইচ্ছা নাজাত দেই, আর অপরাধী কওম থেকে আমার আযাব কখনও ফেরানো হয় না’ (সূরা ইউসূফ: ১১০)।
২। নবী-রাসূলগণ যমীনে ভ্রমণ করতেন, আল্লাহ তা‘আলার যিকর করতেন, তার ইবাদত করতেন। মানুষের নিকট তাওহীদ, ঈমান, সৎআমল এবং উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দিতেন। মহান রবকে দেখা, তার সন্তুষ্টি অর্জন, তার জান্নাতের প্রাসাদ এবং জান্নাতের নেয়ামত লাভ ছিল তাদের ঐকান্তিক চাওয়া। তারা সংগ্রাম করেছেন ও দান-খয়রাত করেছেন, দ্বীন পৌঁছে দিয়েছেন এবং ধৈর্য ধারণ করেছেন। ফলে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তাদের শেষ ফলাফল জান্নাত। তারাই মহান আল্লাহর পথের প্রত্যেক দাঈর আদর্শ।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا (39)) ... [الأحزاب: 39]
‘যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয় ও তাঁকে ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আর হিসাব গ্রহণকারী রূপে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল-আহযাব: ৩৯)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ) ... [التوبة: 100]
‘আর মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী থাকবে। এটাই মহাসাফল্য’(সূরা আত-তাওবা: ১০০)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (21)) [الأحزاب: 21]
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহর অনেক যিকর করে’(সূরা আল-আহযাব: ২১)।
৩। সকল নবী-রাসূল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’(لا إله إلا الله) অর্থাৎ ‘আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই’ এ কথার দা‘ওয়াত দিয়েছেন। তারা শিরক থেকে তাওহীদের দিকে এবং কুফরী থেকে ঈমানের (ইসলামের) দিকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন। সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস না রেখে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসের দা‘ওয়াত দিয়েছেন। ধন-সম্পদ ও বিষয়-আষয়ের সাথে সম্পর্ক ছেড়ে ঈমান ও সৎ আমলের সাথে সম্পর্কের দা‘ওয়াত দিয়েছেন। বংশীয় আচার-অনুষ্ঠান ছেড়ে শরী‘আতের শিষ্টাচার অনুসরণের দা‘ওয়াত দিয়েছেন। কু-প্রবৃত্তি ও শয়তানের অনুসরণ ছেড়ে আল্লাহও তার রাসূলের আনুগত্য করার দা‘ওয়াত দিয়েছেন। দা‘ওয়াত দিয়েছেন অস্থায়ী দুনিয়া ছেড়ে স্থায়ী আখেরাতের দিকে। এগুলোই ছিল নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী কর্ম এবং দ্বীনের শিক্ষা। মানুষের নিকট হক্বের দা‘ওয়াত পৌঁছে দিতে তাদের অনুসরণ করা আমাদের উপর আবশ্যক।
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أُولَئِكَ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ فَإِنْ يَكْفُرْ بِهَا هَؤُلَاءِ فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَيْسُوا بِهَا بِكَافِرِينَ (89)) [الأنعام: 89]
‘এরাই তারাদেরকে আমি দান করেছি কিতাব, হুকুম ও নবুঅত। অতএব, যদি তারা এর সাথে কুফরী করে, তবে আমি এগুলোর তত্ত্বাবধায়ক এমন জাতিকে করেছি, যারা এর সাথে কাফের নয়’(সূরা আল-আন‘আম: ৮৯)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ (90)) ... [الأنعام: 90]
‘এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াতকরেছেন। অতএব, তাদের হেদায়াতের তুমি অনুসরণ কর। বল, আমি তোমাদের নিকট এর কারণেকোন বিনিময় চাই না। এটা তো জগৎবাসীর জন্য উপদেশমাত্র’ (সূরা আল-আন‘আম:৯০)।