লগইন করুন
৪৭. সলাতের জন্য আযান দেয়া :
বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন :
إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَه يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْمُقَدَّمِ وَالْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَه بِمَدِّ صَوْتِه وَيُصَدِّقُه مَنْ سَمِعَه مِنْ رَطْبٍ وَيَابِسٍ وَلَه مِثْلُ أَجْرِ مَنْ صَلّٰى مَعَه
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ প্রথম কাতারে সলাত আদায়কারীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন এবং মুয়ায্যিনকে তার আওয়াজের দূরত্ব পরিমাণ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং যে সকল জীব ও বস্তু তার শব্দ শোনে, তারা তাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দেয় এবং তাকে তার সাথে সলাত আদায়কারীদের সমপরিমাণ পুরস্কার দেয়া হয়।’’[1]
‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,
«يَعْجَبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِى غَنَمٍ فِى رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّى فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوا إِلٰى عَبْدِى هٰذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّى فَقَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِى وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ
‘‘যখন কোন বকরীর পালের রাখাল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানকালে আযান দিয়ে সলাত আদায় করে, তখন মহান আল্লাহ পাক তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং বলেন, (হে আমার ফেরেশতারা) তোমরা আমার বান্দার প্রতি তাকাও। এই ব্যক্তি (পাহাড়ের চূড়ায়ও) আযান দিয়ে সলাত আদায় করছে। সে আমার ভয়েই তা করছে। অতএব আমি আমার এই বান্দার যাবতীয় গুনাহ (পাপ) মাফ করে দিলাম এবং আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।’’[2]
৪৮. সলাত সম্পর্কিত তিনটি কাজ করা :
সলাতের সাথে সম্পৃক্ত ৩টি কাজ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার অনেক পাপ ক্ষমা করেন এবং তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلٰى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوا بَلٰى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِه وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপরাশি দূর করে দিবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দিবেন? সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি (সা.) বললেন : তা হল, অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে উযূ করা, মাসজিদে আসার জন্য বেশী পদচারণা এবং এক সলাতের পর অন্য সলাতের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রাখ, এটাই হল রিবাত্ব[3]।[4]
অসুবিধা ও কষ্ট বলতে তীব্র শীত ও শরীরে ব্যাথা নিয়ে উযূ করাকে উদাহরণ হিসেবে বোঝা যেতে পারে। তবে ঠাণ্ডা পানিতে উযূ করলে অসুস্থ হওয়ার বা অসুস্থতা বাড়ার মাধ্যমে নিজের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।
৪৯. পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করা :
গুনাহ মাফের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সলাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقٰى مِنْدَرَنِه شَىْءٌ . قَالُوا لَا يَبْقٰى مِنْ دَرَنِه شَىْءٌ.قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
‘‘বল তো! তোমাদের মধ্যে কারো দরজার সামনে যদি একটি নদী থাকে এবং সে যদি তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তবে তার (শরীরে) কোন ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা বললেন, কোন ময়লাই থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের দৃষ্টান্ত এটিই। আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা পাপ মোচন করেন।’’[5]
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَطَهَّرُ فَيُتِمُّ الطُّهُورَ الَّذِى كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِ فَيُصَلِّى هٰذِهِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَاتٍ لِمَا بَيْنَهَا
‘‘কোন মুসলিম যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করেছেন তা পূর্ণাঙ্গরূপে অর্জন করে এবং তারপর এই পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করে তাহলে এ সকল সলাত তাদের মধ্যবর্তী সময়ের সকল গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়।’’[6]
৫০. মাগরিব ও ফজর সলাতের পর নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করা :
মাগরিব ও ফজর সলাতের পর হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট দু‘আ ১০ বার পাঠ করলে ১০টি গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَنْ قَالَ قَبْلَ أَنْ يَنْصَرِفَ وَيَثْنِىَ رِجْلَه مِنْ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ وَالصُّبْحِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ يُحْيِىْ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ كُتِبَ لَه بِكُلِّ وَاحِدَةٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ وَرُفِعَ لَه عَشْرُ دَرَجَاتٍ وَكَانَتْ حِرْزًا مِنْ كُلِّ مَكْرُوهٍ وَحِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ وَلَمْ يَحِلَّ لِذَنْبٍ يُدْرِكُه إِلَّا الشِّرْكَ فَكَانَ مِنْ أَفْضَلِ النَّاسِ عَمَلًا إِلَّا رَجُلًا يَفْضُلُه يَقُولُ أَفْضَلَ مِمَّا قَالَ
‘‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের সলাত থেকে ফিরে বসা ও পা মোড়ার পূর্বে-
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ يُحْيِىْ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইর ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সারা রাজত্ব, এবং তাঁরই নিমিত্তে সকল প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু প্রদান করেন। আর তিনি সর্ববস্তুর উপর উপর সর্বক্ষমতাবান।
এ দু‘আটি ১০ বার পাঠ করে, তার ‘আমলনামায় প্রত্যেক বারের বিনিময়ে দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়, তার দশটি গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়, তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ জিকির) রক্ষামন্ত্র হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমা হয়। আর সে হয় ‘আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠব্যক্তি; তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে, যে তার থেকেও উত্তম জিকির পাঠ করবে।’’[7]
৫১. জুমু‘আর সলাত আদায় করা :
জুমু‘আবার জুমু‘আর সলাত আদায় করলে পাপ মাফ হয়ে যায়। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَه مَا بَيْنَه وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصٰى فَقَدْ لَغَا
‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে, এরপর জুমু‘আয় আসে, মনোনিবেশ সহকারে নীরব থাকে, তার তখন থেকে (পরবর্তী) জুমু‘আহ্ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি (অহেতুক) কংকর স্পর্শ করল[8]সে অনর্থক কাজ করল[9]।’’[10]
অন্য একটি হাদীসে আরও কিছু বাড়তি কাজের কথা যোগ করে বলা হয়েছে। সালমান ফারসী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ فَصَلّٰى مَا كُتِبَ لَه” ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ أَنْصَتَ غُفِرَ لَه مَا بَيْنَه وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرٰى
‘‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মাসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সলাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুত্ববার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমু‘আহ্ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’’[11]
[2]. সুনান আবূ দাঊদ : ১২০৫, হাদীসটি সহীহ।
[3]. রিবাত বলতে মূলত নিজেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে আটকে রাখা ও শয়তানের মুকাবিলায় নিজকে প্রস্ত্তত রাখাকে বুঝায়। তবে এই হাদীসে যে রিবাতের কথা বলা হয়েছে তা অধিকাংশ মানুষের জন্য সহজ। (মিন মুকাফফিরাতিয যুনূব, পৃ. ২৭)
[4]. সহীহ মুসলিম : ৬১০।
[5]. সহীহুল বুখারী : ৫২৮, ৫৬৪০, সহীহ মুসলিম : ৬৭৩০, শব্দ মুসলিমের।
[6]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৮।
[7]. মুসনাদ আহমাদ : ১৭৯৯০; সহীহ আত-তারগীব : ৪৭৭।
[8]. এখানে কংকর স্পর্শ করা উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো খুতবা শোনায় মনোযোগ নষ্ট করে এমন সকল কাজ।
[9]. এখানে অনর্থক কাজ করা বলতে সে জুমু‘আর সলাতের বিশেষ সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হলো এবং সাধারণ যোহরের সলাত আদায়ের সাওয়াব পেলো।
[10]. সহীহ মুসলিম : ২০২৫।
[11]. সুনান ইবনু মাজাহ : ১০৯৭, হাদীসটি হাসান সহীহ।