লগইন করুন
৩৭. প্রত্যেক সলাতের পর নির্দিষ্ট জিকির নির্দিষ্টবার পাঠ করা :
সমুদ্রের ফেনা পরিমাণও যদি কেউ পাপ করে এবং নির্দিষ্ট কতিপয় নেক ‘আমল করে, তাহলে তা মাফ হয়ে যাবে। আর তা হল মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ করুণা। তার মধ্যে একটি ‘আমল হল, ফরয সলাতের পর যথা নিয়ম ও সংখ্যার জিকির পাঠ করা। নাবী (সা.) বলেছেন :
مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِى دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ فَتِلْكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক সলাতের পরে ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ ৩৩ বার, ‘আলহাম্দুলিল্লা-হ’ ৩৩ বার, ‘আল্লা-হু আকবার’ ৩৩ বার সর্বমোট ৯৯ বার এবং ১০০ পূরণ করার জন্য এই দু‘আ-
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনও ইলাহ নেই, তাঁর কোনও অংশীদার নেই, তাঁর জন্যই রাজত্ব এবং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, এবং তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাবান।
পাঠ করবে, তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।’’[1]
৩৮. নির্দিষ্ট জিকির ১০০ বার পাঠ করা :
এমন একটি যিক্রের কথা হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যেটি প্রতিদিন ১০০ বার পড়লে তার সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ থাকলেও তা মাফ করে দেয়া হবে। নাবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন,
مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী’ (আল্লাহর পবিত্রতা ও তাঁর প্রশংসা প্রকাশ করছি) পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমান হয়।’’[2]
৩৯. সকাল-সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট জিকির ১০০ বার করে পাঠ করা :
কেউ যদি নির্দিষ্ট জিকির সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার পাঠ করে তাহলে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা থেকেও বেশি হয়। এই মর্মে আবূ হুরায়রাহ্ থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি নাবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি (সা.) বলেন :
مَنْ قَالَ إِذَا أَصْبَحَ مِائَةَ مَرَّةٍ وَ إِذَا أَمْسٰى مِائَةَ مَرَّةٍ سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِه غُفِرَتْ ذُنُوْبُه وَ إِنْ كَانَتْ أَكْثَرَ مِنْ زَبَدِ الْبَحْرِ
‘‘যে ব্যক্তি ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী’ জিকিরটি সকাল বেলায় ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, যদি তা সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হয়।’’[3]
৪০. বিছানায় ঘুমাবার সময় নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করা :
বিছানায় ঘুমাবার সময় পাঠ করতে হয় এমন একটি যিক্রের ব্যাপারে নাবী (সা.) বলেছেন :
من قال حين يأوي إلى فراشه : لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ غفر الله ذنوبه أو خطاياه ـ شك مسعر ـ وإن كان مثل زبد البحر
‘‘যে ব্যক্তি বিছানায় শুয়ে বলবে,
لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহাম্দুলিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।
অর্থ : আল্লাহু ছাড়া সত্যিকারের কোনও ইলাহ নেই, তাঁর কোনও অংশীদার নেই, তাঁর জন্যই রাজত্ব এবং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, এবং তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনও উপায় ও সামর্থ নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোনও সত্যিকারের ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সবার চেয়ে মহান/বড়।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমান হয়।’’[4]
উল্লেখ্য যে ঘুমাবার পূর্বে পঠনীয় আরও একাধিক দু‘আ রয়েছে। তবে সেগুলো পড়লে অন্য ফযীলত পাওয়া যাবে কিন্তু গুনাহ মাফের ফযীলত পাওয়া যাবে মর্মে হাদীসে কিছু বলা হয়নি যেমনটা বলা হয়েছে উপরে উল্লিখিত দু‘আর ক্ষেত্রে।
৪১. নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করা :
এমন একটি জিকির রয়েছে যেটি দিনরাত যেকোন সময় পাঠ করলে সমুদ্রের ফেনা সমান (বা তার থেকে বেশি) পাপরাশিও মাফ হয়ে যাবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَا عَلَى الْأَرْضِ رَجُلٌ يَقُولُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ إِلَّا كُفِّرَتْ عَنْهُ ذُنُوبُه وَلَوْ كَانَتْ أَكْثَرَ مِنْ زَبَدِ الْبَحْرِ
‘‘পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলবে,
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়া সুবহা-নাল্লা-হ, ওয়ালহাম্দুলিল্লা-হ, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনও ইলাহ নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে মহান, আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোনও উপায় ও সামর্থ নেই।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমান (বা তার থেকে বেশি) হয়।’’[5]
তিরমিযীর বর্ণনায় ‘‘ওয়ালহাম্দুলিল্লা-হ’’ জিকিরটি নেই।[6]
৪২. ফজরের সলাতের পর ১০০ বার করে ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ ও ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়া :
ফজরের সলাত এমনিতেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সলাত। এ সময়েরও বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এই সময়ের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নিম্নের হাদীসটি।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
مَنْ سَبَّحَ فِى دُبُرِ صَلَاةِ الْغَدَاةِ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ وَهَلَّلَ مِائَةَ تَهْلِيلَةٍ غُفِرَتْ لَه” ذُنُوبُه وَلَوْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
‘‘যে ব্যক্তি সকালের (ফজরের) সলাতের পর একশত বার সুবহা-নাল্লা-হ এবং একশত বার লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়।[7]
হাদীসে বর্ণিত এত বড় পুরস্কার পেতে হলে তাসবীহ, তাহলীলের শব্দ-বাক্যগুলো অর্থ না বুঝে বেখেয়ালে শুধু মুখে আওড়ালেই হবে না। বরং এগুলোর অর্থ বুঝে, পূর্ণ মনোযোগ সহকারে, যার নাম উচ্চারণ করা হচ্ছে তার প্রতি অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি যথাযথ ভক্তি-শ্রদ্ধা-সম্মান অন্তরে ধারণ করে উচ্চারণ করলে হাদীসে বর্ণিত পুরস্কার পাওয়ার দৃঢ় আশা করা যায়।[8]
ইমাম আল গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন :
ولاتظنن ان هذه الحسنات بازاء تحريك اللسان بهذه الكلمات من غير حصول معانيها في القلب فسبحان الله كلمة تدل على التقديس ولا اله الا الله كلمة تدل على التوحيد والحمد لله كلمة تدل على النعمة من الواحد الحق فالحسنات بإزاء هذه المعارف التي هي من ابواب الايمان واليقين
‘‘হাদীসে উল্লিখিত শব্দ-বাক্যসমূহের মর্মার্থ অন্তরে অনুধাবন করা ছাড়াই শুধু মুখে উচ্চারণের মাধ্যমেই (হাদীসে বর্ণিত) সাওয়াব অর্জিত হবে, তা ভাববার অবকাশ নেই। যেমন সুবহা-নাল্লা-হ শব্দটি আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ করে এবং লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বাক্যটি আল্লাহর একত্ব প্রমাণ করে আর আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি একক সত্য সত্ত্বার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নিয়ামতের স্বীকৃতি। ঈমান ও ইয়াকীনের সাথে সম্পৃক্ত এসব মর্মার্থ বুঝে পড়লেই সাওয়াব অর্জিত হবে।’’[9]
[2]. সহীহুল বুখারী : ৬৪০৫; সহীহ মুসলিম : ৭০১৮।
[3]. আল হাকিম, আল মুসতাদরাক আলাস সহীহায়ন, বৈরূত : দারম্নল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১১ হি./১৯৯০ ঈ., তাহকীক : মুসতাফা ‘আবদুল কাদির আতা, হাদীস নং-১৯০৬, ইমাম আল আলবানী এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহুত তারগীব ও তারহীব, হাদীস নং-৬৫৩।
[4]. সহীহ ইবনু হিব্বান : ৫৫২৮; ইবনু আবী শাইবা : ২৬৫২৭; আস-সিলসিলা আস-সহীহাহ্ : ৩৪১৪।
[5]. মুসনাদ আহমাদ : ৬৪৭৯; হাদীসটি হাসান।
[6]. জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৪৬০।
[7]. সুনান আন-নাসায়ী : ১৩৫৪, হাদীসটি সহীহ।
[8]. মিন মুকাফফিরাতিয্ যুনূব, পৃ. ২৫।
[9]. ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, খ. ৪, পৃ. ৮২।