লগইন করুন
তাওবার অনেক প্রতিদান বা ফলাফলের কথা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাওবাহ্ করলে গুনাহ মাফ হওয়ার সাথে সাথে আরও কিছু প্রতিদান লাভ করা যায়।
সেগুলোর কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. তাওবাহ্ করলে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায় :
আল্লাহর ভালোবাসা কে না চায়? আমরা সবাই চাই। কিন্তু কিভাবে আল্লাহর ভালোবাসা পাবো? হ্যাঁ, আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার উপায় আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।’’[1]
আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার পর আর কোন চাওয়া কোন মু’মিনের থাকতে পারে না। তাই তাওবাকারী যখন আল্লাহর ভালোবাসা পেয়ে যায় তখন অন্য কোন প্রতিদান বা পুরস্কার তার কাছে নগণ্য। আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবেসে ফেলেন তখন তার আর কোন দুশ্চিন্তা নেই, নেই কোন ভয়।
২. তাওবাহ্ হচ্ছে সফলতা পথ, এই পথে চললে বান্দা চূড়ান্ত সফলতার অর্জন করতে পারবে :
জীবনে সফলতা চায় না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। কিন্তু যারা সফলতা চায় তাদের অনেকেই জানে না আসল সফলতা কোথায়? আসল সফলতার পথ কোনটি? হ্যাঁ, তাওবাহ্ হচ্ছে আসল সফলতার পথ। সেজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَأَمَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰى أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُفْلِحِينَ
‘‘তবে যে তাওবাহ্ করেছিল, ঈমান এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’[2]
তাওবাহ্ করলে আল্লাহ ইহকালে ও পরকালে তাওবাকারীকে সাফল্য দান করেন। আল্লাহ তা‘আলাবলেছেন :
وَتُوبُوا إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘‘হে বিশ্ববাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’’[3]
৩. তাওবাহ্ করলে আল্লাহ উত্তম জীবিকা দান করবেন :
জীবন পরিচালনার জন্য জীবিকা অপরিহার্য। জীবিকা ছাড়া জীবন অচল। আর শুধু জীবিকাই নয়, বরং উত্তম জীবিকা পাওয়া যায় যদি বান্দা তার রবের কাছে ক্ষমা চায় আর তাওবাহ্ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلٰى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَه وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
‘‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং অধিক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক অধিক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয় তোমাদের উপর বড় এক দিনের আযাবের ভয় করছি।’’[4]
৪. তাওবাকারীর জন্য ফেরেশতাগণ দু‘আ করেন :
ফেরেশতাদের দু‘আ সবাই পায় না। বিশেষ কিছু বান্দা ফেরেশতাদের দু‘আ পায়, তাদের মধ্যে তাওবাকারী অন্যতম। তাওবাকারীর মর্যাদা এতটাই উপরে যে তার জন্য ফেরেশতারা পর্যন্ত দু‘আ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَه يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِه وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
‘‘যারা ‘আর্শকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মু’মিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবাহ্ করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের ‘আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’।’’[5]
৫. তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করলে অন্তর থেকে গুনাহর কারণে পড়া কালো দাগ মুছে যায় :
গুনাহ করলে অন্তরে কালো দাগ পড়ে। এই দাগ দূর করার উপায় হচ্ছে তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার। আবূ হুরায়রাহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ صُقِلَ قَلْبُه
‘‘যখন কোন মু’মিন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে, তারপর যখন সে তাওবাহ্ করে, পাপটি অপসারণ করে এবং ইস্তিগফার করে তখন তার অন্তর চকচকে পরিষ্কার হয়ে যায়।’’[6]
৬. ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ করার কারণে আল্লাহ তাওবাকারীর প্রতি রহমত ও বরকত দান করেন :
হূদ (আ.) তার জাতিকে তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কয়েকটি প্রতিদানের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা হূদ (আ.)-এর কথা কুরআন মাজীদে বলেছেন :
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلٰى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
‘‘হে আমার কওম! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, অতঃপর তার কাছে তাওবাহ্ কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে ফিরো না’।’’[7]
উল্লেখ্য যে, বহু পাপী তাওবাহ্ না করলেও যাবতীয় পার্থিব সুখ-সম্ভোগ লাভ করে থাকে। তা দেখে অনেকেই ভুল বোঝে। মূলত পাপীদের সেসব সুখ-সম্পদ তাদের জন্য অবকাশ ও পরীক্ষা মাত্র। মহান আল্লাহ বলেছেন :
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِه أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقٰى
‘‘আর তুমি কখনো তোমার দু‘চোখ সে সবের প্রতি প্রসারিত করো না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের জাঁক-জমকস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিয্ক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী।’’[8]
তিনি আরও বলেন,
فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِه فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتّٰى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ -فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘‘অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমরা তাদের উপর সব কিছুর দরজাসমূহ খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল্ল হল, আমরা হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল। অতএব যে সম্প্রদায় যুল্ম করেছিল তাদের মূল কেটে ফেলা হল। আর সকল প্রশংসা রাববুল আলামীন আল্লাহর জন্য।’’[9]
৭. তাওবার ফলে মহান আল্লাহ পাপীর পাপসমূহকে পুণ্যে পরিণত করে দেন :
তাওবাহ্ করে ঈমান এনে কেউ যদি ‘আমলে সালেহ করতে থাকে তাহলে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ পুণ্যে পরিণত করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘তবে যে তাওবাহ্ করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’[10]
উপরে বর্ণিত প্রতিদানগুলো যে পাবে তার মত সৌভাগ্যবান আর নেই। তাই দ্রুত তাওবাহ্ করে এ প্রতিদানগুলো অর্জনের জন্য চেষ্টা করা আমাদের অবশ্য করণীয়।
[2]. সূরা আল ক্বসাস ২৮ : ৬৭।
[3]. সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩১।
[4]. সূরা হূদ ১১ : ০৩।
[5]. সূরা গাফির/আল মু’মিন ৪০ : ০৭।
[6]. মুসনাদে আহমাদ : ৭৯৫২, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী।
[7]. সূরা হূদ ১১ : ৫২।
[8]. সূরা ত্বা-হা- ২০ : ১৩১।
[9]. সূরা আল আন্‘আম ০৬ : ৪৪-৪৫।
[10] সূরা আল ফুরক্বা-ন ২৫ : ৭০।