লগইন করুন
রসূলগণ কিয়ামত সম্পর্কে যে সংবাদ দিয়েছেন তার কিছু অংশকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآياتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ) [الكهف: 105]
তারাই সেসব লোক, যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে (সূরা কাহাফ ১৮:১০৫)।
(مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ) [الفاتحة: 4]
বিচার (পুনরুত্থান বা প্রতিদান) দিবসের (একমাত্র) মালিক (এবং বিচারক) (সূরা ফাতিহা ১:৪)।
(لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ) [البقرة: 254]
যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:২৫৪)।
(إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ) [الزخرف: 86]
তবে তারা ব্যতিত যারা জেনেশুনে সত্য সাক্ষ্য দেয় (সূরা যুখরূফ ৪৩:৮৬)।
এ সকল আয়াতকে তারা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে।
.............................
ব্যাখ্যা: জাহিলদের কেউ সম্পূর্ণভাবে আখেরাতকে অবিশ্বাস করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَقَالُوا إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا) [الأنعام: 29]
আর তারা বলেছিল, ‘আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ব্যতীত কিছু নেই (সূরা আল-আন‘আম ৬:২৯)।
তাদের কেউ আখেরাত বিশ্বাস করে কিন্তু তাতে সংঘটিতব্য কতিপয় বিষয়কে তারা অস্বীকার করে। যেমন আখেরাতে হিসাব-নিকাশ, দাড়ি পাল্লায় আমলের ওজন ও জান্নাত-জাহান্নাম অস্বীকার করা। জাহিলদের কতিপয় এসব সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করে আবার কতিপয় আংশিক অস্বীকার করে। যারা আংশিক অবিশ্বাস করে তারা মূলতঃ সম্পূর্ণ অস্বীকারকারীর মতই। এখানে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। তারা কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস করে আর কিছু অংশ বিশ্বাস করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً الَّذِينَ ضَلّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعاً أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآياتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْناً) [الكهف: 103-105]
তাদের মাঝে কেউ আখেরাতের হিসাব-নিকাশ মিথ্যা মনে করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ) [الفاتحة: 4]
বিচার (পুনরুত্থান বা প্রতিদান) দিবসের (একমাত্র) মালিক (এবং বিচারক) (সূরা ফাতিহা ১:৪)।
এখানে দীন বলতে হিসাব-নিকাশ ও কর্মের প্রতিফল দিবসকে বুঝানো হয়েছে। আর জাহিলরা এটাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ ... ) [البقرة: 254]
হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:২৫৪)।
আর এ দিনটিই হচ্ছে বিচার দিবস।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন
(مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ) [البقرة: 254]
সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:২৫৪)।
কিয়ামতের দিন কারো সৎ আমল না থাকলে তার মুক্তি লাভের কোন উপায় থাকবে না। দুনিয়াতে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিস বেচা-কেনা করে কিন্তু এ দিনে কোন আমল বেচা-কেনা হবে না। যেমন আল্লাহর বাণী: (وَلا خُلَّةٌ)
দুনিয়াতে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে না পেলে মানুষ তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, অতঃপর বন্ধুর নিকট থেকে তা গ্রহণ করে। কিন্তু কিয়ামতের দিন কোন উপকারী বন্ধু পাওয়া যাবে না। এমনকি নিজের বন্ধুও কোন কাজে আসবে না। আর কেউ কারো জন্য সুপারিশও করবে না। অবশ্য দুনিয়াতে সুপারিশ করার মাধ্যম পাওয়া যায়। কিন্তু কিয়ামতের দিন তা পাওয়া সম্ভব নয় (আল্লাহর অনুমতি ছাড়া)। যেমন আল্লাহর বাণী (وَلا شَفَاعَةٌ) সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। কিয়ামতের দিন সুপারিশের সকল মাধ্যম ছিন্ন হয়ে গেলে আর কোন উপায় থাকবে না। কেবল সৎ আমলের মাধ্যমেই মানুষ সেদিন অগ্রগামী হবে। আর সর্বোত্তম সৎ আমল হচ্ছে, আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা ও শিরক থেকে বিরত থাকা। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ) [الزخرف: 86]
তিনি ছাড়া যাদেরকে তারা আহবান করে তারা সুপারিশের মালিক হবে না; তবে তারা ব্যতিত যারা জেনে-বুঝে সত্য সাক্ষ্য দেয় (আয-যুখরূফ ৪৩:৮৬)।
আল্লাহর বাণী: (شَهِدَ بِالْحَقِّ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে (لا إله إلا الله) এ কালিমা পাঠ করতঃ তার উপরই মৃত্যু বরণ করে, কিয়ামতের দিন তার জন্য তা যথেষ্ট হবে না। বরং এর অর্থ জানাও তার জন্য আবশ্যক। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা আয়াতাংশে বলেন, (وَهُمْ يَعْلَمُونَ) অর্থাৎ তারা এর অর্থ জানবে। তাই অর্থ বুঝা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র কালেমা পাঠ করা যথেষ্ট নয়। আর কালেমার চাহিদা অনুসারে আমল ব্যতিত তা পাঠ করা ও অর্থ বুঝা কোনটিই যথেষ্ট নয়। আর ইলম-জ্ঞান হচ্ছে আমল করার মাধ্যম। ফলতঃ জ্ঞান না থাকলে শুধু কালেমা (لا إله إلا الله) পাঠ করা কারো জন্য কাজে আসবে না।