শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৮৫-৮৬. সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিদর্শন সংরক্ষণ করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিদর্শন সংরক্ষণ করা

সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিদর্শন সমূহের মাধ্যমে বরকত লাভ করা। যেমন দারুন নাদওয়া, যার অধিনে এর কর্তৃত্ব ছিল তাকে নিয়ে গৌরব করা। যেমনভাবে হাকিম ইবনে হিযামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; তুমি কি কুরাইশ বংশের সম্মান বিক্রি করে দিয়েছ?! তিনি জবাবে বলেছিলেন, কেবল তাক্বওয়া না থাকলেই সম্মান চলে যায়।

............................................
ব্যাখ্যা: মর্যাদাবান আলেম অথবা শাসক অথবা নেতাদের নিদর্শনকে সংস্কার ও সংরক্ষনের মাধ্যমে তা উজ্জিবীত করে সেগুলোকে সম্মান করা।

এ ধরণের কর্মকান্ডই শিরকের মাধ্যম যা জাহিলী দীনের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, পরবর্তী জাতি অথবা শয়তান এসে বলে, তোমাদের পূর্বপুরুষ বরকত ও কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে এসব নিদর্শন সংরক্ষন করতো। তাই আল্লাহ ব্যতীত তারা এসবের ইবাদত করেছিল। কেননা, প্রথম আর্বিভূত জাতি পরবর্তীদের জন্য এসবের ইবাদত করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। যেমন নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতিকে শয়তান নেকলোকদের প্রতিমূর্তি তৈরির নির্দেশ দেয়। যাতে তাদের ইবাদতে তারা উদ্যমী হয়।

অতঃপর তারা এ নিদর্শনকে ভাল সৌধ হিসাবে স্থাপন করে। কিন্তু পরবর্তীতে মূর্খ জাতি এসে এ সৌধের ইবাদত করে, এটাই জাহিলদের কর্ম, তারা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিদর্শনকে সম্মান, সংরক্ষন ও সংস্কার করে। অতঃপর কালক্রমে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তাদের ইবাদত কর হয়। তাই কেউ বলতে পারবে না যে, বর্তমানে মানুষ সঠিক দীন ও তাওহীদের উপর আছে।

আমাদের বক্তব্য হলো শুধু বর্তমানের চিন্তা না করা। বরং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা আবশ্যক। যদিও বর্তমান সময়ের মানুষ ফিতনায় বিশ্বাসী না, তবুও ভবিষ্যত বড় কঠিন হতে পারে। তাই এসব নিদর্শনের পরিচর্যা করা বৈধ নয়। নিদর্শন পরিচর্যার মত কর্মকান্ডের কারণেই জাতি ধ্বংস হয়েছে। জাতি তাদের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিদর্শনকে সম্মান করে, ভবিষ্যতে তারা তাদের প্রতি মূর্তি তৈরি করবে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক করা মুসলিমদের উপর ওয়াজীব।

একারণে শাইখ প্রমাণ স্বরূপ মক্কায় দারুন নাদওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে মক্কার কুরাইশ বংশের প্রধান ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য একত্রিত হতেন। অতঃপর ইসলামের আর্বিভাবের পরপরই জাহিলিয়্যাত দুরিভূত হয়। মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামল পর্যন্ত দারুন নাদওয়ার অধিকার ও উপকার লাভ এবং সংগঠন পরিবর্তনের জন্য ভিত্তি পূর্বের অবস্থায় বহাল রাখা হয়। অতঃপর হাকীম ইবনে হিযামের নিকট থেকে দারুন নাদওয়া ক্রয় করা হয়। মানুষ একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে হাকীমকে প্রশ্ন করলো, পূর্ববর্তীদের এ নিদর্শনকে আপনি কেন বিক্রয় করলেন? কেন কুরাইশদের সম্মান বিক্রি করলেন? তিনি জবাবে বলেন, তাক্বওয়া ছাড়াই সম্মান চলে গেল!। এর প্রমাণে আল্লাহর বাণী:

(إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ) [الحجرات: 13]

তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন (সূরা হুজরাত ৪৯:১৩)।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী মোতাবেক এটাই হলো সঠিক জবাব এবং দূরদর্শিতা ও ঈমানের আলো। সুতরাং প্রমাণিত যে, প্রাচীন নিদর্শনকে সংরক্ষন করা যাবে না। কেননা, এটা পরবর্তীদেরকে শিরকের দিকে ধাবিত করবে। প্রাচীন শিরকী রীতিকে রূদ্ধ করার জন্যই দীন এসেছে।