শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৭৬. শিরক প্রতিষ্ঠিত করতে ও হক্ব দমনে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
শিরক প্রতিষ্ঠিত করতে ও হক্ব দমনে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা

মারাত্নক ষড়যন্ত্র; যেমন নূহ আলাইহিস সালাম এর সম্প্রদায়ের কর্ম।
..

ব্যাখ্যা: গোপনীয়ভাবে কারো অপছন্দনীয় বিষয় সম্পাদন করাই ষড়যন্ত্র। এটা দু‘প্রকার: (ক) ভাল ষড়যন্ত্র (খ) মন্দ ষড়যন্ত্র।

কারও বিরুদ্ধে এমন গোপন প্রতারণা করা যা তার প্রাপ্য নয় তা সম্পাদন করাই হচ্ছে খারাপ ষড়যন্ত্র। আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতির ব্যাপারে বলেন,

(وَمَكَرُوا مَكْراً كُبَّاراً وَقَالُوا لا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلا تَذَرُنَّ وَدّاً وَلا سُوَاعاً وَلا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْراً وَقَدْ أَضَلُّوا كَثِيراً) [نوح: 22-24]

‘আর তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে।’ আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘উক ও নাসরকে।’ বস্তুত তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে, আর (হে আল্লাহ) আপনি যালিমদেরকে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়াবেন না (সূরা নূহ ৭১: ২২-২৪)।

ষড়যন্ত্রকারীরা ছল-চাতুরির মাধ্যমে মানুষের ব্যাপারে যে মারাত্নক প্রতারণায় লিপ্ত হয়, তা বৃহৎ ছলনা। এ নিকৃষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে ভ্রষ্ট দা‘ঈরা মানুষকে শিরকের দিকে আহবান করে। তাদেরকে একত্বের দা‘ওয়াত দেয়া হলে, তারা এ দা‘ওয়াত সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে বলে, তাওহীদ পন্থীরা তোমাদের নেতা হতে চায় এবং তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের ইচ্ছা করে। এভাবে তারা নিকৃষ্ট কথাকে উত্তম ও উত্তম কথাকে মন্দ বলে মানুষের নিকট প্রচার করে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও মারাত্নক ষড়যন্ত্র যা প্রাচীন ও আধুনিক ভ্রষ্ট দা‘ঈদের মাঝে বিদ্যমান, যা মানুষকে হক্ব থেকে বিমুখ করে বাতিল-মিথ্যা এবং আলো থেকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ) [البقرة: 257]

যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের বন্ধু, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফুরী করে, তাদের অভিভাবক হল তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে (সূরা আল বাক্বারাহ ২:২৫৭)। তিনি আরো বলেন,

(وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّاً شَيَاطِينَ الْأِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوراً وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ) [الأنعام: 112]

আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তারা যে মিথ্যা রটায়, তা ত্যাগ কর (সূরা আল-আন‘আম ৬:১১২)।

অর্থাৎ তুমি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যাকে পরিত্যাগ কর। আর তাদেরকে তুমি ভ্রূক্ষেপ করবে না। এখানে ভ্রষ্ট দা‘ঈদের কথা শ্রবণ করা হতে নিষেধ করা হয়েছে, তবে বাতিল-মিথ্যা দমন করার উদ্দেশ্যে তাদের কথা বুঝে নেয়া যেতে পারে।