শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৩৪. প্রত্যেক দল অন্যদের ব্যতিরেকে শুধু নিজেদেরকে হক্ব মনে করে শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রত্যেক দল অন্যদের ব্যতিরেকে শুধু নিজেদেরকে হক্ব মনে করে

প্রত্যেক দল দাবি করে যে, তারা মুক্তি প্রাপ্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ) [البقرة: 111]

বল, তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক (সূরা বাক্বারাহ ২:১১১)।

অতঃপর, আল্লাহ সঠিক বিষয় বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

(بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ) [البقرة: 112]

হ্যাঁ, যে নিজকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, (সূরা বাক্বারাহ ২:১১২)।

....................................

ব্যাখ্যা: জাহিলদের সমস্যাবলী হচ্ছে: জাহিলদের প্রত্যেক দল দাবি করে যে, তারা হক্বের উপর আছে, আর অন্যরা বাতিল। ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও তাদের মত অন্য জাতির মাঝে এ ধারণা বিদ্যমান। আল্লাহ বলেন,

(وَقَالُوا لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ كَانَ هُوداً أَوْ نَصَارَى) [البقرة: 111]

আর তারা বলে, ইয়াহূদী কিংবা নাসারা ব্যতীত অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না (সূরা বাক্বারাহ ২:১১১)।

ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা তাদের হেদায়াত ও জান্নাত লাভের বিষয়কে সীমায়িত করেছে। ভ্রষ্টদলগুলো তাদের মতই। প্রত্যেকে দাবি করে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত, অন্যরা বাতিল। প্রত্যেক দল দাবি করে তাদের মুক্তি লাভের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ستفترق أمتي على ثلاث وسبعين فرقة، كلها في النار، إلا واحدة" ولكن الرسول صلى الله عليه وسلم بين العلامة الفارقة لهذه الفرقة عن غيرها لما قالوا: "من هي يا رسول الله؟ قال: "من كان على ما أنا عليه وأصحابي

আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া প্রত্যেকেই জাহান্নামী। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের আলাদা নিদর্শন বর্ণনা করেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তারা কে? জবাবে তিনি বলেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণের রীতির উপর থাকবে।[1] একারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ) [البقرة: 111]

বল, তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১১)।

অর্থাৎ তোমরা যা বল তথা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না, একথার প্রমাণ পেশ করো। কেননা, এটি একটি দাবি। আর প্রমাণ ছাড়া কোন দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ) [البقرة: 112]

হ্যাঁ, যে নিজকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, (সূরা বাক্বারাহ ২:১১২)।

(أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ) অর্থাৎ (১) আল্লাহর দীনের প্রতি আন্তরিক হয় ও শিরক থেকে বেঁচে থাকে। (وَهُوَ مُحْسِنٌ) অর্থাৎ (২) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যকারী। এ দু’টি শর্ত যে পূর্ণ করবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে, শর্ত দু’টি অথবা এর কোন একটি ভঙ্গ করলে জাহান্নামী হবে, যদিও সে জান্নাতী দাবি করে।

তার বাণী: (بَلَى مَنْ أَسْلَمَ) এ আয়াতটির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় সঠিক পদ্ধতি, যার উপর মুক্তি প্রাপ্ত দল পরিচালিত হয়। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

من كان مثل ما أنا عليه وأصحابي

আমি এবং আমার ছাহাবীগণের পদ্ধতি যারা অনুসরণ করে (তারা ফিরকা নাজিয়া)।[2] এটা সুন্নাহর বিধান। আর আয়াতটি কুরআনের বিধান।যে জান্নাত লাভ করতে চায় সে যেন আল্লাহর উদ্দেশে নিজেকে সমর্পণ করে এবং সুন্নাহ অনুসারে উত্তমরূপে আমল করে। আর বিদ‘আত ও নবাবিষ্কৃত বিষয় থেকে বিরত থাকবে, এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা যুক্তি-প্রমাণ পেশ করেননি।

>
[1]. ছ্বহীহ: আবূ দাউদ ৪৫৯৬-৪৫৯৭, তিরমিযী ২৬৪৫-২৬৪৬, ইবনে মাজাহ ৩৯৯১-৩৯৯৩, জামে ছ্বহীহ ১০৮২-১০৮৩।

[2] . হাসান: তিরমিযী ২৬৪১, মুস্তাদরাক হাকীম ৪৪৪, কিতাবুর ইলম।