শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৩২. হক্ব অস্বীকার করা যখন তা অপ্রিয় কারো কাছে থাকে শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
হক্ব অস্বীকার করা যখন তা অপ্রিয় কারো কাছে থাকে

হক্ব অস্বীকার করা যখন তা অন্যের নিকট বিদ্যমান, যা তাদের অপছন্দনীয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَى شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ) [البقرة: 113] .

আর ইয়াহূদীরা বলে, নাসারাদের কোন ভিত্তি নেই এবং নাসারারা বলে ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নেই (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।

.....................................

ব্যাখ্যা: সবচেয়ে মারাত্নক সমস্যা হলো জাহিলদের হক্ব অস্বীকার করা যখন তা অন্যের নিকট বিদ্যমান, যা তাদের অপছন্দনীয়। অর্থাৎ পছন্দ করে না। ব্যক্তির পক্ষপাতিত্বের কারণে অপছন্দের সাথে অন্যের হক্বকে বর্জন করে। তাদের হক্ব বর্জনের কারণ এটাই। আর যে ব্যক্তিই হক্ব নিয়ে আসবে তা গ্রহণ করা মুসলিমের উপর ওয়াজীব। কেননা বন্ধু অথবা শত্রু যার নিকট হক্ব পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তা গ্রহণ করা মু’মিনের উদ্দেশ্য। কারণ মু’মিনতো কেবল হক্ব চায়। কেবল ব্যক্তি কেন্দ্রীক কোন কিছু হলে তা হবে জাহিলী দীন।

আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। তারা আহলে কিতাব ও আহলে ইলম। ইয়াহুদীরা খ্রিষ্টানদের হক্ব বর্জন করে। আর খ্রিষ্টানরাও ইয়াহুদীদের হক্ব বর্জন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَى شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ) [البقرة: 113]

আর ইয়াহূদীরা বলে, নাসারাদের কোন ভিত্তি নেই এবং নাসারারা বলে ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নেই (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।

যারা এরূপ করবে তারা হবে কু-প্রবৃত্তির অনুসারী। ইয়াহুদীরা খ্রিষ্টানদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে তাদের হক্ব অস্বীকার করে। খ্রিষ্টানরাও শত্রুতা বশতঃ ইয়াহুদীদের হক্ব অস্বীকার করে।(وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ) অথচ তারা কিতাব পাঠ করে, তিনি তাদেরকে হক্ব কবুলের নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন,

(كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ) [البقرة: 113]

এভাবেই, যারা কিছু জানে না, তারা তাদের কথার মত কথা বলে (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।

যাদের নিকট কিতাব নেই তারা এ পদ্ধতির উপর পরিচালিত হয়। প্রত্যেক দল অপর দলকে অস্বীকার করে, তৎসঙ্গে তাদের হক্বকেও অস্বীকার করে।

মোদ্দা কথা হলো ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের রীতি থেকে বিরত থাকা মুসলিমের উপর ওয়াজীব। কারণ যাকে তারা পছন্দ করে না, তাদের হক্বকে অস্বীকার করাই তাদের রীতি। সমাজে এমন কতিপয় ব্যক্তি রয়েছে যারা কেবল নিজেদের হক্বকে ধারণ করতে বলে। যেমন বর্তমানে এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, কোন দল বা জামা‘আত যখন কোন আলেমের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তখন তার নিকট যে হক্ব আছে তা তারা বর্জন করে। ঐ আলেমের সাথে তাদের শত্রুতাই হক্ব বর্জনে তাদেরকে প্ররোচিত করে। আর এ শত্রুতা অন্ধকারে চলতে, আলেমের প্রতি অনাগ্রহীতায় প্ররোচিত করে এবং তার রচিত কিতাবাদী ও পা-ুলিপি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে। যদিও আলেম হক্বপন্থী হয়ে থাকেন। কিন্তু কেন এরূপ করে? তারা ঐ আলেমের হক্ব পছন্দ করে না, এটাই একমাত্র কারণ। হে মুসলিম! তুমি যাকে ভালবাস না যদি তার সাথে হক্ব থাকে, তা কবুল করা তোমার উপর ওয়াজীব। আর হক্ব গ্রহণে ব্যক্তিগত শত্রুতা ও নিজের খেয়াল খুশি অন্তরায় হতে পারে না।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ইয়াহুদী এসে বললো,

إنّكم تشركون، تقولون: ما شاء الله وشاء محمد أمر أن يقولو: ماشاء الله وحده ولا يقولو ماشاء الله وشاء محمد

আপনারাতো শিরক করেন। আপনারা বলে থাকেন, আল্লাহ ও মুহাম্মাদ যা চান। ‘একমাত্র আল্লাহ যা চান’ ইয়াহুদী এ কথা বলতে বলেন। আর ‘আল্লাহ ও মুহাম্মাদ যা চান’ একথা বলবে না।[1]

অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হক্বকে কবুল করেন। আর তিনি ছাহাবীদের এ ধরণের ভুল কথা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন।

অনুরূপভাবে ইয়াহুদী আলেমদের থেকে এক আলেম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, আল্লাহ তা‘আলা ডান হাতে আসমান পেঁচিয়ে ধরবেন, এক আঙ্গুলের উপর পাহাড়, এক আঙ্গুলের উপর জমিন স্থাপন করবেন....হাদীসের শেষ পর্যন্ত বলতে থাকলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমর্থনে হাসলেন, এমনকি তার সামনের দাঁত প্রকাশ হলো।[2] আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করে বলেন,

(وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعاً قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ) [الزمر:67]

আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে (সূরা যুমার ৩৯:৬৭)।

এ ইয়াহুদী যাজকের কথা সত্যের অনুকূলে হওয়ায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথাকে গ্রহণ করলেন এবং আনন্দিত হলেন। মোদ্দা কথা হলো, হক্ব গ্রহণ করা মুসলিমের উপর আবশ্যক। ব্যক্তিগত শত্রুতা ও উদ্দেশ্য তাকে প্ররোচিত করতে পারবে না। আর কতিপয় হক্বপন্থীদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না। হক্বপন্থী আলেম যা বলে তা বর্জনে এ বিষয়গুলো যেন প্ররোচিত না করে। বরং হক্ব গ্রহণের মাধ্যমে যেন উপকার লাভ হয়। এমনকি আলেম যদি সরল পথে না থাকে, তার মাঝে দোষ-ত্রুটি ও নিন্দনীয় কিছু পাওয়া যায়, এমতবস্থায় সে হক্ব প্রচার করলে তার হক্বকে গ্রহণ করা সঠিক হবে। তার ব্যক্তিসত্তার কারণে গ্রহণ করা হতে বিরত হবে না। বরং হক্ব হিসাবেই তা গ্রহণ করা হবে। আর এটাই আবশ্যক। রব প্রদত্ত এ পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক হক্বপন্থীরা যা নিয়ে আসেন তা থেকে হক্ব গ্রহণ করা শিক্ষার্থীর উপর আবশ্যক।

>
[1]. ছ্বহীহ: নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকী সুনানুল কুবরা। জুহাইনার স্ত্রী কুতাইলা হতে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, আপনারাতো অংশীদার স্থাপন করেন, শিরক করেন, আপনারা বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও আপনি যা চান। আর কাবার শপথ! এ কথাও বলেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে নির্দেশ দিলেন যে, যখন তারা শপথ করতে ইচ্ছা করবে তখন বলবে, কাবার রবের শপথ! আর বলবে, আল্লাহ তা‘আলা যা চান অতঃপর আপনি যা চান।

[2]. ছ্বহীহ বুখারী ৪৮১১, ছ্বহীহ মুসলিম ২৭৮৬।