লগইন করুন
এটা আশ্চর্যজনক নিদর্শন যে, জাহিলরা তাদের সম্পর্কিত দীনের সাথেই শত্রুতা করে। কাফিরদের দীনের প্রতি জাহিলদের ভালবাসা রয়েছে, যারা ভালবাসা দেখিয়ে তাদের সাথে শত্রুতা করে, তাদের নাবী ও তার দলের সাথে শত্রুতা করে। যেমনভাবে তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে শত্রুতা করতো। যখন তিনি তাদের নিকট মূসা আলাইহিস সালাম এর দীন নিয়ে আসলেন, তখন তারা যাদুর কিতাবাদী অনুসরণ করলো অথচ তা ছিল ফেরআউনের বংশধরদের দীন।
.........................................................
ব্যাখ্যা: জাহিলদের যে সব সমস্যায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরোধিতা করেছেন: জাহিলদের নিজেদের দীনের প্রতি শত্রুতা রয়েছে, যে দীন তাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয়। জাহিলদের দ্বারা তাদের শত্রুর দীন অনুসরণ করা জাহিলিয়্যাত। জ্ঞাতব্য যে, ইয়াহুদীরা মূসা আলাইহিস সালাম এর দীনের উপর ছিল। আর তাদের শত্রু হলো ফেরআউন ও তার বংশধর যারা তাদের অনুসারীদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিল। তাদের পুত্র সন্তানদেরকে তারা হত্যা করতো ও কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো। আর তারা তাদেরকে হীন কাজে ব্যবহার করতো।
এমতবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী মূসা কালিমুল্লাহকে প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালাম এর হাতে তাদের শত্রু থেকে তাদেরকে নিষ্কৃতি দেন এবং তিনি তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেন, তাদের শত্রুকে পরাভূত করেন, তাদের সম্মুখে ফেরআউনকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেন এবং এভাবে তিনি মূসা আলাইহিস সালাম এর অনুসারীদের চক্ষু শীতল করেন। জাহিলদের নিকট তাওরাতে নাবী আলাইহিস সালাম এর বর্ণনা ছিল। আর তাওরাত কিতাব মূসা আলাইহিস সালাম নিয়ে আসেন, তাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণ বর্ণিত হয়েছে, তাকে অনুসরণের নির্দেশ রয়েছে।
(النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوباً عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْأِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ) [الأعراف: 157]
যে উম্মী নাবী ; যার গুণাবলী তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল যা তাদের উপরে ছিল অপসারণ করে (সূরা আরাফ ৭:১৫৭)।
তাদের কঠোরতার কারণে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের প্রতি কঠোর হন। তিনি তাদের কুফরী ও পাপাচারীতার জন্য হালালকে হারাম করে দেন। যদি তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনতো তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে এ পাপাচারীতা ও বাড়াবাড়ি দূর করে দিতেন। কিন্তু তারা বিদ্বেষ পোষণ করে বললো, এ অঙ্গীকারাবদ্ধ নাবী কিভাবে শেষ যুগে আরব ও ইসমাঈলের বংশধর থেকে আগমন করবে? তিনিতো বনী ইসরাঈলের বংশধরদের থেকে আগমনের উপযুক্ত। ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্যে থেকে তিনি আগমন করবেন না। তারা এভাবেই বলতো, অতঃপর তারা মুহাম্মাদ ও তার উম্মতের সাথে হিংসা করতো এবং তাকে অস্বীকার করতো অথচ তারা জানতো তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হিংসা ও দাম্ভিকতাই তাদেরকে কাফির হতে বাধ্য করে। আমরা আল্লাহর নিকট এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করার সাথে মূসা আলাইহিস সালাম ও তার কিতাব তাওরাতকেও অস্বীকার করতো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিদ্বেষ বশত তাওরাতকে তারা অস্বীকার করতো। আর তাদের শত্রু ফেরআউনের দীন যাদুর কিতাবের মাধ্যমে তারা তাওরাত পরিবর্তন করে। কেননা ফেরআউনের সম্প্রদায়ের মাঝে যাদু বিদ্যা ছড়িয়ে পড়ে। তাই তারা নাযিলকৃত অহীর বিধান পরিত্যাগ করে ও তাদের শত্রুরা যে যাদুকর্ম করতো তারা তা গ্রহণ করে। এটা বিস্ময়কর! আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ اللَّهِ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لا يَعْلَمُونَ) [البقرة:101]
আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রসূল এল, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, আহলে কিতাবের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দেয়, (এভাবে যে) মনে হয় যেন তারা জানে না (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১০১)।
(كَأَنَّهُمْ لا يَعْلَمُونَ) অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার গুণাবলী এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা যেন তারা জানতোই না। যারা তাকে চিনতো না, তারা অহংকার ও ধৃষ্টতার সাথে জাহিলদের মত কর্ম করতো। (لأنهم لا يعلمون) লি আন্নাহুম লা ইয়ালামুনা ‘তথা কেননা তারা জানে না’ আল্লাহ তা‘আলা একথা বলেননি। বরং বলেছেন (كَأَنَّهُمْ لايَعْلَمُونَ) অর্থাৎ তারা যেন জানেই না। কেননা বিদ্বান তার জ্ঞানানুযায়ী আমল না করলে বুঝতে হবে সে যেন জানেই না। কারণ জ্ঞানের ফলাফল হলো আমল।
আলেম আমল না করলে জাহিল ও আলেম সমান হয়ে যায়। বরং জাহিলের গুনাহ তার চেয়ে হালকা হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন,
(وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ) [البقرة: 102]
আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১০২)।
এটা যাদু। তাই যাদুর মৌলিকত্ব হলো তা শয়তানের কর্ম। বিভিন্ন যুগে কাফিররা যাদু কর্মের উত্তরাধিকারী হতো। ফেরআউন, তার সম্প্রদায় ও ইয়াহুদীরা তাওরাতের পরিবর্তে যাদু কর্মে উত্তরাধিকারী লাভ করে। তাই যাদু প্রাচীন বিষয়। আর এক প্রজন্মের পর পরবর্তী প্রজন্মের কাফিররা যাদু কর্মের উত্তরাধিকারী হয়। এটাই কাফিরদের শাস্তি। মানুষ হক্ব পরিত্যাগ করলে বাতিলের পরীক্ষায় পড়ে। এটি এমন রীতি যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয় না। কতিপয় মুসলিম আল্লাহর কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহকে পরিত্যাগ করে মানুষের কথা, দর্শন বিদ্যা ও কালাম শাস্ত্র গ্রহণ করেছে। তারাও এদেরই সমগোত্রীয়।
তারা আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাহ পরিত্যাগ করেছে, অন্যকিছু গ্রহণ করেছে। কেননা, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়ে এ দু‘টির আক্বীদা গ্রহণ করেনি। তাই কুফরী ও নাস্তিক্যবাদের আক্বীদা গ্রহণের মাধ্যমে তারা পরীক্ষায় পড়েছে।
গতরাতের সাদৃশ্য কিরূপ হয় ! এরূপ যে হক্ব পরিত্যাগ করবে, সে বাতিলের পরীক্ষায় পড়বে। আর যে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মত পরিত্যাগ করবে, সে ভ্রান্ত দলের মাযহাব গ্রহণের মাধ্যমে পরীক্ষায় পড়বে। আর কিতাব ও সুন্নাহ এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরূদ্ধে যে ভিন্ন মতের ভ্রষ্ট জামা‘আতের পক্ষালম্বন করবে, সে ভ্রষ্ট দলে যোগদানের মাধ্যমে পরীক্ষায় পড়বে। এটাই মহান আল্লাহর রীতি। এখানে হক্ব বর্জনের ব্যাপারে মুসলিদের সতর্ক করা হয়েছে। কেননা, হক্ব বর্জন করলে বাতিলের পরীক্ষায় পড়বে। আর হক্বপন্থীদের পরিত্যাগ করলে সর্বদা বাতিলপন্থীদের অনুসারী হয়ে যাবে।