লগইন করুন
পার্থিব জীবন জাহিলদেরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তারা ধারণা করে যে, পার্থিব চাকচিক্যতা আল্লাহর দান যা তার সন্তুষ্টি প্রমাণিত হয়। যেমন জাহিলরা বলে, আল্লাহর বাণী:
نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَالاً وَأَوْلاداً وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ
আমরা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অধিক সমৃদ্ধশালী। আর তাই আমরা শাস্তি প্রাপ্ত হব না (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)।
...........................................
ব্যাখ্যা: জাহিলরা তাদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদকে নিজেদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান মনে করতো। তাদের ধারণা, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। আল্লাহর বাণী:
وَقَالُوا نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَالاً وَأَوْلاداً وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَعْلَمُونَ وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلا أَوْلادُكُمْ بِالَّتِي تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفَى
আমরা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অধিক সমৃদ্ধশালী। আর তাই আমরা শাস্তি প্রাপ্ত হব না। বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বস্তু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে (সূরা সাবা ৩৪:৩৫-৩৭)।
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযিকদাতা’ (সূরা সাবা ৩৪:৩৯)।
বেশি ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রাচুর্য বান্দার জন্য আল্লাহর ভালবাসার দলীল নয়। বরং তিনি কাফিরকে ধীরে ধীরে পাঁকড়াও করার জন্য তাদেরকে পার্থিব ধন-সম্পদ দিয়ে থাকেন। হাদীছে বর্ণিত:
إن الله يعطي الدنيا من يحب ومن لا يحب، وأما الدين فلا يعطيه إلا من يحب
আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভালবাসেন অথবা অপছন্দ করেন উভয়কে তিনি পার্থিব প্রাচুর্যতা দান করে থাকেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভালবাসেন তাকে দীনের জ্ঞান দান করেন।[1] অন্য হাদীসে এসেছে:
لو كانت الدنيا تعدل عند الله جناح بعوضة ما سقى منها كافراً شربة ماء
আল্লাহ তা‘আলার নিকট যদি মশার পাখা পরিমাণ দুনিয়ার মূল্য থাকতো, তাহলে কোন কাফিরকে তিনি একফোটা পানিও পান করতে দিতেন না।[2]
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অভাবী ছিলেন। অনুরূপভাবে তার ছাহাবীগণেরও অভাব-অনটন ছিল। অথচ নাবীগণের পরে তারা সৃষ্টির মাঝে উত্তম মানুষ। আর কাফিররা অবাধে বিচরণ করে এবং নাবীগণের পরে তারা আল্লাহ তা‘আলার নেআ‘মত পেয়ে উল্লাসিত হয়। কাফিরদেরকে ধীরে ধীরে পাঁকড়াও করা হবে একারণে তারা আল্লাহর নেআ‘মত পেয়ে উল্লাসিত হয় ও অবাধে চলাফেরা করে। তাই দুনিয়ার চাকচিক্য আল্লাহর নিকট দুনিয়াবাসীর সম্মান প্রমাণ করে না বরং আমলকারী ধনী হোক বা গরিব হোক সৎ আমলের মাধ্যমেই আল্লাহর নিকট বান্দার সম্মান প্রমাণিত হয়। দুনিয়াপ্রেমীক, সম্পদশালী ও প্রাচুর্যের অধিকারীরাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানিত বলে মানুষ ধারণা করে, আর বলে অভাব-অনটনে নিপতিত লোকজন আল্লাহর নিকট লাঞ্ছিত, তাদের এ ধারণা ভুল।
>[2]. ছ্বহীহ: তিরমিযী ২৩২৫।