শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ২০. যাদুকর্ম ও ভাগ্য গণনাকে অলী-আওলিয়ার কারামাত গণ্য করে তা বিশ্বাস করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
যাদুকর্ম ও ভাগ্য গণনাকে অলী-আওলিয়ার কারামাত গণ্য করে তা বিশ্বাস করা

যাদুকর ও তাদের মত লোকদের প্রবঞ্চনাকে নেকলোকদের কারামাত বলে জাহিলদের বিশ্বাস করা ও যাদুকর্মকে নাবীগণের কারামাত গণ্য করা। যেমন জাহিলরা সুলাইমান আলাইহিস সালাম কে যাদুকর বলে গণ্য করে।

.....................................................

ব্যাখ্যা: মাখারিক (المخاريق): হলো অলৌকিক বিষয়। আল্লাহ ছাড়া এর উপর কেউ ক্ষমতা রাখে না। নাবীগণ থেকে অলৌকিক বিষয় প্রকাশিত হলে তা মু’জিযা বলে গণ্য। যেমন মুসা আলাইহিস সালাম এর লাঠি সাপে পরিণত হওয়া মু’জিযা এবং জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগ ভাল হওয়া এবং আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে মৃতকে জীবিত করা ঈসা আলাইহিস সালাম এর মু’জিযা।

আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবচেয়ে বড় মু’জিযা আল-কুরআন দেয়া হয়েছে যা গোটামানব জাতিকে বিস্মিত করে এবং কুরআনের মত অনুরূপ কিছু রচনা করতে জিন ও মানুষ অপারগতা প্রকাশ করে।

নেক, মুত্তাকী ও মু’মিন ব্যক্তির নিকট থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পেলে তা কারামাত (كرامة) নামে খ্যাত। তা দীনের জন্য দলীল অথবা মুসলিমদের প্রয়োজনে সংঘটিত হয়। যেমন মুহাম্মাদ এর কাছ থেকে দীনের দলীল হিসাবে অথবা মুসলিমদের প্রয়োজনে কারামাত প্রকাশ পেয়েছিল। এমনিভাবে মারইয়াম আলাইহিস সালাম এর জন্য কারামাত প্রকাশ পেয়েছিল। মারইয়াম আলাইহিস সালাম এর কুঠুরিতে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম প্রবেশ করলে তার নিকট রিযিক (খাদ্য ফলমূল) দেখতে পান। ঐ কুঠুরিতে মারইয়াম আলাইহিস সালাম আলাদাভাবে ইবাদত করতেন, তা ছিল ইবাদাতের জায়গা। অনুরূপভাবে আসহাবে কাহাফের দীর্ঘ সময় যাবত ঘুমানো তাদের জন্য কারামাত ছিল। তারা নিজেদের অবস্থায় বহাল ছিল, মাটিতে তাদের শরীর নষ্ট হয়নি। তাদের জীবনে কোন সময়কালের (অনভূতি) অর্জন হয়নি। এটা ওলীদের কারামাত।

অপরপক্ষে কাফিরদের হাতে অলৌকিক সাদৃশ্য যা প্রকাশ পায় তা শয়তানের কর্ম বলে গণ্য। এটাকে ভেলকিবাজি, ফন্দিবাজি ও কাল্পনিক যাদু বলে গণ্য করা হয় অথবা এটা শয়তানের কর্ম যার মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করা ও তাদের ক্ষতি সাধনের জন্য শয়তান যাদুকরদের খাদেম নির্ধারণ করে। এটা কারামাত নয়। আর যে শূন্যে ভেসে বেড়ায় অথবা পানিতে হাঁটে সে পাপাচারী। এটা শয়তানের কর্ম। কেননা যখন শিরক ও কুফরীর মাধ্যমে যাদুকররা শয়তানের নৈকট্য লাভ করে তখন শয়তানেরা তাদের খাদেম হয়ে যায়। শয়তানেরা তাদেরকে শূন্যে ভাসায় ও পানিতে হাঁটায়।

ঐ সকল পাপাচারীদের হাতে ভেলকিবাজি ও শিরক হতে যা কিছু প্রকাশ পায় তা শয়তানের কর্ম অথবা মানুষের সাথে তাদের ফন্দিবাজি ও ধোঁকা দেওয়ার কৌশল মাত্র। এগুলো এমন কর্ম যা জাহিলদের মাঝে আছে তা থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে। এ জন্য ইয়াহুদীরা সুলাইমান নাবীকে যাদুকর্মের সাথে সম্পৃক্ত করলে আল্লাহ তা‘আলা যাদুকর্মকে কুফরী ঘোষণা করে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেন। নাবীগণের সাথে যাদুকর্মকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। নাবীগণের মধ্যে সুলাইমান আলাইহিস সালাম অন্যতম। তার জন্য যাদুকর্ম সমীচিন নয়।