শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৫. দলীলের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে অধিকাংশের নিয়ম-নীতি-আমলকে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
দলীলের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে অধিকাংশের নিয়ম-নীতি-আমলকে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করা

তাদের বৃহৎ কর্মপদ্ধতি: অধিকাংশের উপর ভিত্তির কারণে প্রবঞ্চিত হওয়া, কোন বিষয়ের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য অধিকাংশকে দলীল গণ্য করা, আর কোন বিষয় বাতিল করার জন্য তা অপরিচিত হওয়া ও কম সংখ্যক সম্প্রদায়ের কর্মকে দলীল গণ্য করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নীতির বিপরীতে তাদের নিকট দলীল পেশ করেন। কুরআন বিরোধী এ নীতির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন।

............................................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী বিষয় সমূহ: হক্ব প্রমাণের জন্য তারা অধিকাংশের দোহাই দিয়ে থাকে। আর কোন কিছু বাতিল করার জন্য কম সংখ্যকের মাধ্যমে দলীল পেশ করে। অধিকাংশরা যে বিষয়ের উপর বহাল থাকে, সেটাকেই তারা হক্ব মনে করে। কম সংখ্যকরা যার উপর বহাল থাকে, সেটা বিশুদ্ধ মনে করে না। এটাই হলো তাদের হক্ব ও বাতিল বুঝার মাপকাঠি। এটা তাদের ভুল কর্মপদ্ধতি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ) [الأنعام:116]

আর যদি তুমি যারা যমীনে আছে তাদের অধিকাংশের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা শুধু ধারণারই অনুসরণ করে এবং তারা শুধু অনুমানই করে (সূরা আল আন‘আম ৬:১১৬)।

তিনি আরোও বলেন,

وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَعْلَمُونَ

কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না (সূরা আল ‘আরাফ ৭:১৮৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِمْ مِنْ عَهْدٍ وَإِنْ وَجَدْنَا أَكْثَرَهُمْ لَفَاسِقِينَ) [الأعراف:102]

আর তাদের অধিকাংশ লোককে আমি অঙ্গীকার রক্ষাকারী পাইনি। বরং তাদের অধিকাংশকে আমি ফাসিক-ই পেয়েছি (সূরা আল ‘আরাফ ৭: ১০৬)।

সংখ্যায় কম বা বেশি হওয়া কোন পরিমাপ নয়। বরং হক্বই হলো পরিমাপ। যদি একজনও হক্বের উপর বহাল থাকে তাহলে তিনিই সঠিক বলে গণ্য হবেন, তার অনুসরণ করা আবশ্যক। পক্ষান্তরে অধিকাংশই বাতিলের উপর বহাল থাকলে, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা ও তাদের প্রবঞ্চনা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। হক্বের শিক্ষাই গ্রহণ করা জরুরী। একারণে বিদ্বানগণ বলেন, ব্যক্তির সংখ্যা দ্বারা হক্ব চেনা যায় না, বরং হক্বের মাধ্যমেই ব্যক্তি চেনা যায়। তাই কেউ হক্বের উপর থাকলে, তার আনুগত্য করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন জাতির কাহিনী বর্ণনা করে জানিয়ে দেন যে, কম সংখ্যকও কখনো হক্বের উপর বহাল থাকে। তিনি বলেন,

(وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلَّا قَلِيلٌ) [هود: 40]

আর তার সাথে অল্পসংখ্যকই ঈমান এনেছিল (সূরা হুদ ১১:৪০)। আর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে,

عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ، فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ، وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلَانِ، وَالنَّبِيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে উম্মতদের পেশ করা হলে তিনি দেখতে পান, একজন নাবীর সাথে একটি দল, অন্য একজন নাবীর সাথে একজন অথবা দু’জন লোক রয়েছে এবং কোন নাবীর সাথে একজন লোকও নেই।[1] তাই কোন মতামত বা কথার উপর অধিকাংশের অনুসরণের মাধ্যমে কোন শিক্ষা নেই, বরং হক্ব ও বাতিল নির্ণয়ের মাধ্যমেই শিক্ষা রয়েছে। তাই যদি হক্ব প্রমাণিত হয় এবং ঐ হক্বের উপর অল্প সংখ্যক মানুষ বহাল থাকে অথবা কেউই বহাল না থাকে, যতক্ষণ তা হক্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, ঐ হক্বকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। কেননা হক্বই হলো মুক্তির কারণ। বহু সংখ্যক মানুষের মাধ্যমে বাতিল কখনোই শক্তিশালী হতে পারে না। সুতরাং সর্বদাই হক্বের মাপকাঠি গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

بدأ الإسلام غريباً وسيعود غريباً كما بدأ

অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয় এবং অপরিচিত অবস্থায় তা ফিরে যাবে।[2]

মন্দকর্ম, ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) ও ভ্রষ্টতা বৃদ্ধি পেলে তখন অল্পসংখ্যক মানুষ ও কিছু গোত্র ছাড়া কেউ হক্বের উপর বহাল থাকবে না। অল্পসংখ্যকই সমাজে অবস্থান করবে। সমগ্র পৃথিবী যখন কুফরী ও ভ্রষ্টতায় নিমোজ্জিত ছিল তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিলে একজন, দু’জন করে তার দাওয়াত গ্রহণ করে, ক্রমান্বয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কুরাইশ ও বেদুঈনসহ পৃথিবীর সবাই ভ্রষ্টতায় নিমোজ্জিত ছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। পৃথিবীর অল্প সংখ্যক মানুষই তার অনুসারী হয়। সুতরাং সংখ্যায় বেশি হওয়া শিক্ষণীয় নয়। সঠিক ও হক্ব অর্জনে শিক্ষা নিহিত আছে। তবে হ্যাঁ বেশি সংখ্যক হক্বের উপর বহাল থাকলে তা ভাল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার নিয়মানুযায়ী অধিকাংশই বাতিলের অনুসারী হয়ে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وما أكثر الناس ولو حرصت بمؤمنين) [يوسف: 103]

আর তুমি আকাঙ্খা করলেও অধিকাংশ মানুষ মুমিন নয় (সূরা ইউসূফ ১২:১০৩)। তিনি আরো বলেন,

وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ

আর যদি তুমি যারা যমীনে আছে তাদের অধিকাংশের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। (সূরা আল আন‘আম ৬:১১৬)।

>
[1]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/২২০।

[2]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৪৬।