লগইন করুন
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর কথা, لِمَنِ اعْتَبَرَهَا مِنْهُمْ بِوَهْمٍ যে ব্যক্তি ধারণার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দিদারকে কল্পনা করবে। অর্থাৎ এ ধারণা করবে যে, আল্লাহ তা‘আলাকে এভাবে দেখা যাবে, এ ভেবে তার জন্য কোনো একটি সাদৃশ্য নির্ধারণ করবে, সে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সদৃশ নির্ধারণকারী হিসাবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সৃষ্টির সাথে আল্লাহর তুলনা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আল্লাহর দিদারকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করবে, সে আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারকারী এবং বাতিলকারী হিসাবে গণ্য হবে। সুতরাং আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে ধারণার বশবতী হয়ে কথা বলা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। আল্লাহর সদৃশ নফী করতে গিয়ে সে যেন হক ও বাতিল উভয়কেই নাকোচ না করে দেয়। এতে করে বাতিলের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হকও নাকোচ হয়ে যায়। বরং আবশ্যক হলো আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর মধ্যে বাতিল কিছু সাব্যস্ত করার প্রতিবাদ করা এবং তাতে যা কিছু সত্য তা সাব্যস্ত করা।
শাইখ এ দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন, وَمَنْ لَمْ يَتَوَقَّ النَّفْيَ وَالتَّشْبِيهَ، زَلَّ وَلَمْ يُصِبِ التَّنْزِيهَ যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।
মুতাযেলারা মনে করে, আল্লাহর সুউচ্চ সিফাতসমূহ নাকোচ করার মাধ্যমে তারা তাকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র করে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, যেসব গুণাবলী আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণতার প্রমাণ বহন করে, তা নাকোচ করার মাধ্যমে কিভাবে তার পবিত্রতা সাব্যস্ত হবে? আল্লাহর দিদারকে নফী করার মাধ্যমে তার কামালিয়াত সাব্যস্ত হয় না। কেননা অস্তিত্বহীন জিনিসই কেবল দেখা যায় না। যার অস্তিত্ব রয়েছে, তাকে দেখা সম্ভব। বরং আল্লাহ তা‘আলার দিদার সাব্যস্ত করার মধ্যেই এবং দর্শকের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে পরিপূর্ণ আয়ত্ত করা নাকোচ করার মধ্যেই তার পরিপূর্ণ কামালিয়াত সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে বান্দার ইলমের ব্যাপারেও একই কথা। তার সম্পর্কে ইলম নাকোচ করার মাধ্যমে কামালিয়াত সাব্যস্ত হয় না। বরং ইলম সাব্যস্ত করা এবং ইলমের মাধ্যমে তঁকে সম্পূর্ণ রূপে আয়ত্ত ও পরিবেষ্টন করা নাকোচ করার মধ্যেই তার কামালিয়াত সাব্যস্ত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে দেখার মাধ্যমে পরিপূর্ণ রূপে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি ইলমের মাধ্যমে তাকে পরিপূর্ণ রূপে আয়ত্ত ও পরিবেষ্টন করা অসম্ভব।[1]
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, أَوْ تَأَوَّلَهَا بِفَهْمٍ অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সেই দিদারের তাবীল করবে বা ভুল ব্যাখ্যা দিবে। অর্থাৎ সে দাবি করলো যে, সে শরীয়তের দলীলের এমন একটি তাবীল বা ব্যাখ্যা জানতে পেরেছে, যা আয়াতের বাহ্যিক অর্থের পরিপন্থী এবং আরবী ভাষায় পারদর্শী প্রত্যেক লোক সে সম্পর্কে অবগত নয়। আর পরবর্তী যুগের আলেমদের পরিভাষায় তাবীলের অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শব্দকে তার বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে সম্ভাব্য অন্য অর্থের দিকে ফিরিয়ে নেয়া। এ অযুহাতেই তাহরীফকারীরা শরীয়তের দলীলের উপর আক্রমণ করেছে। তারা বলেছে, যেসব আয়াত আমাদের মতের বিপরীত হবে, সেগুলোকে আমরা তাবীল করবো। এর মাধ্যমে তারা তাহরীফকেই সাজিয়ে-গুছিয়ে ও সুন্দর করে তাবীল হিসাবে নামকরণ করেছে। যাতে করে লোকেরা এটিকে সহজেই গ্রহণ করে নেয়। যারা বাতিলের বাহ্যিক শোভা বৃদ্ধি করে তাকে চাকচিক্যময় করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
‘‘আর এভাবেই আমি মনুষ্য শয়তান ও জিন শয়তানদেরকে প্রত্যেক নাবীর দুশমনে পরিণত করেছি। তারা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে পরস্পরকে চমকপ্রদ কথা বলতো৷ তোমার রব চাইলে তারা এমনটি কখনো করতো না। কাজেই তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও’’। (সূরা আনআম: ১১২)
আসলে বাক্যের অর্থটিই মূল উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্য। শব্দমালা মূল উদ্দেশ্য নয়। অনেক বাতিল জিনিসকে সুশোভিত করে সত্যের বিরোধীতা করা হয়েছে।
সুতরাং শাইখের উক্তি: لِمَنِ اعْتَبَرَهَا مِنْهُمْ بِوَهْمٍ যে ব্যক্তি ধারণার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দিদারকে কল্পনা করবে, -তার অবস্থা পূর্বোক্ত কথার মতই। সেখানে তিনি বলেছেন, لَا نَدْخُلُ فِي ذَلِكَ مُتَأَوِّلِينَ بِآرَائِنَا وَلَا مُتَوَهِّمِينَ بِأَهْوَائِنَا ‘‘এতে আমরা আমাদের নিজস্ব মতের উপর নির্ভর করে কোনো অপব্যাখ্যা করবো না এবং আমাদের প্রবৃত্তির প্ররোচনায় তাড়িত হয়ে কোনো অযাচিত ধারণার বশবর্তী হবো না।
অতঃপর শাইখ তার কথাকে অধিকতর শক্তিশালী করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহকে দেখার বিষয়টি এবং রবের অন্যান্য যাবতীয় গুণাবলীর বিষয়ের প্রকৃত কথা হচ্ছে ঐগুলোর কোনোরূপ তাবীল করার অপচেষ্টা না করে যেভাবে এসেছে সেভাবেই অবিকৃতভাবে মেনে নেয়া। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের দ্বীন। এখানে তাবীল বর্জন করার অর্থ হলো, বিদআতীরা যে তাহরীফকে তাবীল নাম দিয়েছে, তা উদ্দেশ্য। কিন্তু ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ হিকমত, বিচক্ষণতা, উত্তম পদ্ধতি এবং অত্যন্ত আদবের সাথে ভিন্নমত পোষণকারীদের সাথে বিতর্ক করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘‘হে নাবী! হেকমত এবং উত্তম উপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে আছে এবং কে আছে সঠিক পথে’’। (সূরা আন নাহল: ১২৫)[2]
সকল প্রকার তাবীল বর্জন করতে হবে, শাইখের উদ্দেশ্য এটি নয় এবং কোনো কোনো মানুষের কথার বিপরীত হওয়ার কারণে কুরআন-সুন্নাহর বাহ্যিক দলীল দ্বারা সাব্যস্ত জিনিসকে বর্জন করাও উদ্দেশ্য নয়। বরং শাইখের উদ্দেশ্য হলো ঐসব তাবীল বর্জন করা, যা সালাফে সালেহীনের মাজহাবের বিপরীত এবং কুরআন-সুন্নাহর দলীল যেগুলো ভ্রান্ত হিসাবে সাব্যস্ত করেছে। সেই সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে না জেনে কথা বলাও বর্জন করা আবশ্যক।
আর ভ্রান্ত তাবীলের মধ্যে গণ্য হলো, আল্লাহ তা‘আলাকে দেখার দলীলগুলোর তাবীল করা, আল্লাহ তা‘আলা উপরে সমুন্নত হওয়ার দলীলগুলোর তাবীল করা ও এ কথা বলা যে, আল্লাহ তা‘আলা মুসার সাথে কথা বলেননি এবং তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেননি।
আর التأويل শব্দটি অনেক সময় তার আসল অর্থ বাদ দিয়ে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতের পরিভাষায় তাবীল দ্বারা সেই প্রকৃত অর্থ, বাস্তব রূপ এবং পরিণাম উদ্দেশ্য, যার দিকে কালামকে ফিরিয়ে নেয়া হয়। সুতরাং খবরের তাবীল বলতে হুবহু খবরকেই বুঝায়। আদেশের তাবীল বলতে আদিষ্ট কাজ সম্পাদন করাকেই বুঝায়। যেমন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুতে কখনও এ দু’আটির সাথে পড়তেন,
سُبْحَانك اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِك اللَّهُمَّ اِغْفِرْ لِي
‘‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু। তোমার প্রশংসার সহিত তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো’’।[3] এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের তাবীল করতেন। অর্থাৎ তার আদেশ বাস্তবায়ন করতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُ يَوْمَ يَأْتِي تَأْوِيلُهُ يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ
‘‘আর তারা কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে না, শুধুমাত্র ওর সর্বশেষ পরিণতির প্রতীক্ষায় আছে? যেদিন এর সর্বশেষ পরিণতি উপস্থিত হবে সেদিন যারা এর আগমনের কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবে, বাস্তবিকই কি আমাদের রবের রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন?’’। (সূরা আল ‘আরাফ: ৫৩)
স্বপ্নের ব্যাখ্যা করাকেও তাবীল বলা হয়। সেই সঙ্গে কাজ-কর্মের ব্যাখ্যাকেও তাবীল বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইউসুফ আলাইহিস সালামের উক্তি নকল করে বলেন,
هَٰذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِن قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا
‘‘আমি ইতিপূর্বে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম এ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা। আমার রব তাকে সত্যে পরিণত করেছেন’’ (সূরা ইফসুফ: ১০০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ
‘‘এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন’’। (সূরা ইউসুফ: ৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
‘‘এটিই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর’’। (সূরা আন নিসা: ৫৯) আর কাজের ব্যাখ্যাকেও তাবীল বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي الْبَحْرِ فَأَرَدتُّ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءَهُم مَّلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنزٌ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنزَهُمَا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي ۚ ذَٰلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
‘‘যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধরতে পারনি, আমি সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি। নৌকাটির ব্যাপারে কথা হলো, ওটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে কাজ করতো। আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দেই, কারণ ওদের সম্মুখে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে সকল নিখুত নৌকা ছিনিয়ে নিতো। আর বালকটির কথা এ যে, তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার, আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফুরী দ্বারা তাদেরকে বিব্রত করবে। অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের প্রতিপালক যেন তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন; যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি-ভালোবাসায় ঘনিষ্ঠতর। আর ঐ প্রাচীরটির কথা এ যে, ওটা ছিল নগরবাসী দুই ইয়াতীম বালকের, ওর নীচে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল একজন সৎ লোক। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপূর্বক ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়োপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক; আমি নিজের তরফ থেকে এসব করিনি। তুমি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণে অপারগ হয়েছিলে, এটাই তার ব্যাখ্যা’’। (সূরা কাহাফ: ৭৮-৮২)
সুতরাং এ ধরণের ব্যাখ্যা এবং আদেশ-নিষেধ সম্পর্কিত জ্ঞানকে কেউ কি অস্বীকার করতে পারে? আর যেসব আয়াত খবর সম্পর্কিত, যাতে আল্লাহর নাম, তার সত্তা, তার সিফাত এবং আখেরাত দিবসের বিভিন্ন খবর রয়েছে, সেগুলোর ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। অর্থাৎ গায়েবী বিষয়গুলোর হাকীকত জানা সম্ভব নয়। কেননা খবরের মাধ্যমে এগুলোর হাকীকত জানা যায়নি। আসল কথা হলো সম্বোধিত ব্যক্তি যদি সংবাদের মাধ্যমে অবগত জিনিসটি কল্পনা করতে না পারে অথবা সম্বোধনের পূর্বে থেকেই যদি সেটি সম্পর্কে পরিচিত না থাকে, তাহলে সম্বোধিত ব্যক্তি খবরের মাধ্যমে কখনো ঐ জিনিসের হাকীকত সম্পর্কে জানতে পারবে না। আর এ হাকীকতটির নাএ হলো তাবীল। আল্লাহ ছাড়া এ তাবীল সম্পর্কে অন্য কেউ অবগত নয়। তবে কোনো বস্তুর হাকীকত বা প্রকৃত রূপ না জানার অর্থ এ নয় যে, সম্বোধনকারী সম্বোধিত ব্যক্তিকে যা বুঝাতে চাচ্ছে, সে সম্পর্কে মোটেই অবগত হবে না। কুরআনে যত আয়াত রয়েছে, তার সবগুলো নিয়েই আল্লাহ তা‘আলা চিন্তা-গবেষণা করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা যেসব আয়াত নাযিল করেছেন, তাতে তিনি পছন্দ করেন যে, তার সবগুলো সম্পর্কেই মানুষ অবগত হোক। যদিও তা এমন তাবীলের অন্তর্ভুক্ত হয়, যার প্রকৃত তাৎপর্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের কথার মধ্যে যে তাবীল শব্দটি বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ এটিই। যদিও এ তাবীল বাহ্যিক বক্তব্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হয় কিংবা বাহ্যিক অর্থের বিপরীত হয়।
[2]. সত্য প্রকাশের জন্য ভিন্ন মতাবলম্বীর সাথে বিতর্কের কিছু আদব: এটি যেন নিছক বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই ও মানসিক ব্যায়াম পর্যায়ের না হয়। আলোচনায় পেঁচিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ ও রূঢ় বাক্য দ্বারা প্রতিপক্ষকে বিদ্ধ করার প্রবণতা যেন না থাকে। প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের গলাবাজী করে যেতে থাকা এর উদ্দেশ্য হবে না। বরং এ বিতর্ক আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যুক্তি-প্রমাণ হতে হবে ন্যায়সংগত ও হৃদয়গ্রাহী। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ, একগুঁয়েমী এবং কথার প্যাঁচ সৃষ্টি হবার অবকাশ না দেখা দেয়। সোজাসুজি তাকে কথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে এবং যখন মনে হবে যে, প্রতিপক্ষ কূটতর্কে লিপ্ত হওয়াকে উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছে তখন তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে হবে। যাতে সে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পায় আর না হয় তার ভ্রষ্টতা দ্বারা অন্যরা প্রভাবিত না হয়।
[3]. ছহীহ মুসলিম ৪৮৪, ছহীহ বুখারী ৭৯৪, আবূদাউদ ৮৭৭, নাসাঈ ১১২৩।