শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ৩২. তিনি সত্য, হেদায়াত, নূর ও জ্যোতি সহকারে সমস্ত জিন ও মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন (وَهُوَ الْمَبْعُوثُ إِلَى عَامَّةِ الْجِنِّ وَكَافَّةِ الْوَرَى بِالْحَقِّ وَالْهُدَى وَبِالنُّورِ وَالضِّيَاءِ) ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ)
তিনি সত্য, হেদায়াত, নূর ও জ্যোতি সহকারে সমস্ত জিন ও মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وَهُوَ الْمَبْعُوثُ إِلَى عَامَّةِ الْجِنِّ وَكَافَّةِ الْوَرَى بِالْحَقِّ وَالْهُدَى وَبِالنُّورِ وَالضِّيَاءِ

তিনি সত্য, হেদায়াত, নূর ও জ্যোতি সহকারে সমস্ত জিন ও মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন।

..............................................................

ব্যাখ্যা: রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিন জাতির প্রতিও প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা জিনদের উক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

‘‘হে আমাদের কওমের লোকেরা, আল্লাহর প্রতি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আনো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং কষ্টদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন’’। (সূরা আহকাফ: ৩১)

এমনি সূরা জিনে আল্লাহ বলেছেন যে, তাদের কাছেও নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন। মুকাতিল বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে কোনো রসূলকেই জিন ও ইনসানের জন্য পাঠাননি। এ কথা সঠিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا

‘‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে কি রসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনাতো এবং এ দিনটির সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সর্তক করতো?’’ (সূরা আনআম: ১৩০)

এতে বুঝা যাচ্ছে যে, রসূল পাঠানো হয়েছে শুধু বনী আদম থেকে। জিনদের মধ্যে কোনো রসূল ছিল না। মুজাহিদ এবং অন্যান্য সালাফ ও খালাফ-পরবর্তী থেকে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, বনী আদম থেকে হয়েছে রসূল এবং জিনদের থেকে হয়েছেন সতর্ককারী। জিনদের উক্তি উল্লেখ করে বলেন, তারা বলেছিল,

يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ

‘‘হে আমাদের কওমের লোকজন! আমরা এমন কিতাব শুনেছি যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে’’। (সূরা আহকাফ: ৩০)

এ আয়াতও প্রমাণ করে যে, মুসা আলাইহিস সালামও জিনদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।

যাহ্হাক থেকে ইমাম ইবনে জারীর বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জিনদের মধ্যেও রসূল রয়েছে। তিনি এ আয়াত দিয়ে দলীল পেশ করেছেন, ‘‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে কি রাসূলেরা আসেনি? এ আয়াত দিয়ে জিনদের মধ্য থেকে রসূল থাকার দলীল গ্রহণ করার মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। কেননা এ আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সম্ভব; কিন্তু এটি অকাট্য ও সুস্পষ্ট দলীল নয়। এটি সূরা আর রাহমানের ২২ নং আয়াতের মতই। যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

‘‘এ উভয় সমুদ্র থেকেই মুক্তা ও প্রবাল পাওয়া যায়’’। এখানে উদ্দেশ্য হলো উভয়টিই এক।