লগইন করুন
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ الْمُصْطَفَى وَنَبِيُّهُ الْمُجْتَبَى وَرَسُولُهُ المرتضى
নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নাবী এবং পছন্দনীয় রসূল।
.........................................................
ব্যাখ্যা: ইস্তেফা-নির্বাচিত করা, ইজতেবা-মনোনীত করা এবং ইরতেযা-পছন্দ করা এ তিনটি শব্দের অর্থ প্রায় একই রকম। জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে সৃষ্টির মধ্যে পূর্ণতা তৈরী হয়। বান্দার ইবাদত যতই বৃদ্ধি পাবে, তার পূর্ণতা তত বৃদ্ধি পাবে এবং তার মর্যাদা ততই উন্নীত হবে।
যে ব্যক্তি এ ধারণা করবে, কোনো কোনো মাখলুক বা অলী-আওলীয়া আল্লাহর ইবাদতের গন্ডির আওতামুক্ত এবং ইবাদতের শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসার মাধ্যমে অধিকতর পূর্ণতা অর্জিত হয়, সে সর্বাধিক মুর্খ ও পথভ্রষ্ট।[1] আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের ব্যাপারে বলেন,
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَٰنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ
‘‘এরা বলে, করুণাময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারা তো তার মর্যাদাশালী বান্দা’’। (সূরা আম্বীয়া: ২৬) এ রকম আয়াত আরো অনেক রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা অনেক ফযীলতপূর্ণ ঘটনা ও স্থানে তার নাবীকে ‘আবদ’ নামে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা মিরাজের ঘটনায় বলেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘‘পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতের কিয়দাংশে নিজের বান্দাকে মাসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে আমি করেছি বরকতময়। যাতে আমি তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ يَدْعُوهُ كَادُوا يَكُونُونَ عَلَيْهِ لِبَدًا
‘‘আর আল্লাহর বান্দা যখন তাকে ডাকার জন্য দাঁড়ালো তখন তারা সবাই তার নিকট ভিড় জমালো’’। (সূরা জিন: ১৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
فَأَوْحَىٰ إِلَىٰ عَبْدِهِ مَا أَوْحَىٰ
‘‘তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা অহী করার ছিল তা অহী করলেন’’ (সূরা নাযম: ১০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
‘‘আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার উপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা, এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো আল্লাহকে ছাড়া। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো’’। (সূরা আল বাকারা: ২৩)
সুতরাং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সর্বাধিক ইবাদতকারী বান্দা ছিলেন বলেই তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বাধিক মর্যাদাবান হওয়ার যোগ্য হয়েছেন। এ জন্যই কিয়ামতের দিন যখন লোকেরা নাবীদের কাছে শাফা‘আতের আবেদন করার পর ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে তা কামনা করবে, তখন তিনি বলবেন, তোমরা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাও। তিনি আল্লাহ তা‘আলার এমন একজন বান্দা, যার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তিনি আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ ইবাদত করার মাধ্যমে এ মর্যাদা অর্জন করেছেন।
ইমাম ত্বহাবী রাহিমাহুল্লাহুর উক্তি: وإن محمدا -এ বাক্যটিকে কিতাবের শুরুর দিকে উল্লেখিত إن الله واحد لاشريك له -এর উপর সম্পর্ক করে উহার ‘হামযাহ’ -এর নীচে যের দিয়ে পড়া হয়েছে। আর ইমাম ত্বহাবী রাহিমাহুল্লাহুর উক্তি: نقول في توحيد الله থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সবগুলো বাক্যই قول এর معمول হয়েছে।
কালাম শাস্ত্রবিদ ও যুক্তিবিদদের থেকে এ কথা প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, মুজেযার মাধ্যমে নাবীদের নবুওয়াত সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের অনেকেই মুজেযার মাধ্যম ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যমে নাবীদের নবুওয়াত সাব্যস্ত করতে সম্পূর্ণ নারাজ।[2]
তবে মুতাযেলাদের অনেকেই নাবী ছাড়া অন্যদের পক্ষ হতে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হওয়াকে অস্বীকার করেছে। এমনকি তারা অলীদের কারামত, যাদুর হাকীকত ও প্রভাব এবং অনুরূপ অন্যান্য বিষয়কেও অস্বীকার করেছে।
[2]. তাদের এ কথা সঠিক নয়। কারণ নাবীদের নবুওয়াত সাব্যস্ত করার জন্য মুজিযা ছাড়াও আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে। যা থেকে শাইখ ইবনে আবীল ইয্ কতিপয় পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন।