লগইন করুন
(২১) যিকর নং ৯১ : সূরা ইখলাস ১০ বার
একটি অত্যন্ত যয়ীফ সনদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ঈমানসহ প্রত্যেক ফরয সালাতের পরেই ১০ বার সূরা ইখলাস (ক্বুল হুআল্লাহু আহাদ্ ... ) পাঠ করবে আল্লাহ তাঁকে অপরিমেয় পুরস্কার প্রদান করবেন।”[1]
তবে অন্য একটি সহীহ হাদীসে মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
من قرأ (قل هو الله أحد) عشر مرات بنى الله له بيتا في الجنة
“যে ব্যক্তি ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাঁর জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে রাখবেন।”[2] এখানে ১০ বার সূরাটি পাঠের কোনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি। এজন্য যাকির কোনো সময়ে এই ওযীফাটি পালন করতে পারেন।
(২২) যিকর নং ৯২ : (সালাতের পরের দু’আ)
যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাতের পরে বলতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ أَنَا شَهِيدٌ أَنَّكَ أَنْتَ الرَّبُّ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ أَنَا شَهِيدٌ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ أَنَا شَهِيدٌ أَنَّ الْعِبَادَ كُلَّهُمْ إِخْوَةٌ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ اجْعَلْنِي مُخْلِصًا لَكَ وَأَهْلِي فِي كُلِّ سَاعَةٍ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ يَا ذَا الْجَلالِ وَالإكْرَامِ اسْمَعْ وَاسْتَجِبْ اللَّهُ أَكْبَرُ الأكْبَرُ اللَّهُمَّ نُورَ السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ (رَبَّ السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ) اللَّهُ أَكْبَرُ الأكْبَرُ حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ اللَّهُ أَكْبَرُ الأكْبَرُ
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু ও সকল বস্তুর প্রভু, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আপনিই প্রভু। আপনি একক। আপনার কোনো শরীক নেই। হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু ও সকল বস্তুর প্রভু, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ আপনার বান্দা এবং রাসূল। হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু ও সকল বস্তুর প্রভু, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, সকল বান্দা পরস্পর ভাই ভাই। হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু ও সকল বস্তুর প্রভু, আমাকে এবং আমার পরিবার পরিজনকে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিক্ষণে ও সকল মুহূর্তে আপনার জন্য মুখলিস ও আন্তরিক বানিয়ে দিন। হে মহাপরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী, আপনি শুনুন এবং কবুল করুন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ, আসমান ও জমিনের আলো (অন্য বর্ণনায় : আসমান ও জমিনের প্রভু) আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম কার্যনির্বাহক। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ।” হাদীসটির সনদ দুর্বল।[3]
(২৩) যিকর নং ৯৩ : (সালাতের পরের যিকর)
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ “পবিত্রতা আপনার প্রভুর, প্ররাক্রমের প্রভুর, তারা যা বলে তা থেকে (তিনি পবিত্র) এবং সালাম (শান্তি) প্রেরিত পুরুষগণের (রাসূলগণের) উপর এবং প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য।”
যয়ীফ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো সালাতের শেষে, সালামের পূর্বে বা পরে এই আয়াতটি পাঠ করেছেন বা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।[4]
(২৪) যিকর নং ৯৪ : (সালাতের পরের দু‘আ)
أَشْهَدُ أَنَّ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ الله الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنِّي الْهَمَّ وَالْحَزَنَ
অর্থঃ “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। হে আল্লাহ, আপনি আমার দুশ্চিন্তা ও বেদনা দূর করে দিন।”
একটি দুর্বল সনদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষ করার পরে তাঁর ডান হাত দিয়ে তাঁর মাথা মুছতেন, অন্য বর্ণনায় তিনি ডান হাত দিয়ে তাঁর কপাল মুছতেন এবং এই দু‘আ পাঠ করতেন।[5]
(২৫) যিকর নং ৯৫ : (সালাতের পরের দু‘আ)
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمْرِي آخِرَهُ ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ ، وَخَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আপনি আমার শেষ জীবনকে আমার জীবনের সর্বোত্তম অংশ, আমার শেষ কর্মগুলিকে জীবনের সর্বোত্তম কর্ম এবং যে দিন আমি আপনার সাক্ষাত করব সেই দিনটিকে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন করে দিন।”
আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঠিক পিছনে দাঁড়াতাম। তিনি সালামের পরে এ কথাগুলি বলতেন। হাদীসটির সনদ যয়ীফ।[6]
(২৬) যিকর নং ৯৬ : (সালাতের পরের দু‘আ)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَمَلٍ يُخْزِينِي ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ غِنًى يُطْغِينِي ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ صَاحِبٍ يُرْدِينِي ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ أَمَلٍ يُلْهِينِي ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فَقْرٍ يُنْسِينِي
অর্থ: “হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন কর্ম থেকে যা আমাকে অপমানিত করবে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এরূপ ধনাঢ্যতা থেকে যা আমাকে অহংকারী করে তুলবে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এরূপ বন্ধু বা সঙ্গী থেকে যে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। হে আল্লাহ আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এরূপ সকল বিষয় থেকে যা আমাকে অপ্রয়োজনে ব্যস্ত করে তুলবে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এরূপ দারিদ্রতা থেকে যা আমাকে (আপনার কথা) ভুলিয়ে দেবে।”
আনাস (রাঃ) বলেনঃ
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى بأصحابه أقبل على القوم (بوجهه) فقال ... ما صلى بنا صلاة مكتوبة قط إلا قال حين أقبل علينا بوجهه
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন তখন সালাত শেষে তাঁদের দিকে ঘুরে বসে এই দু’আ বলতেন।”
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই কোনো ফরয সালাত পড়তেন, সালাত শেষে আমাদের দিকে ঘুরে এই দু’আ পাঠ করতেন।” হাদীসটির সনদ কিছুটা দুর্বল।[7]
এতক্ষণ রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সহীহ ও যয়ীফ সনদে বর্ণিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে পালনীয় যিকরগুলি আলোচনা করেছি। সাহাবীগণ এগুলি পালন করতেন। এছাড়া কিছু যিকর ও দু‘আ সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যা তাঁরা পালন করতেন। সম্ভবত তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে শিখে তা পালন করতেন। তবে এ সকল হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে তাঁরা এগুলি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। সর্বাবস্থায় সাহাবীগণের সুন্নাত অনুসরণীয়। এখানে এরূপ কয়েকটি যিকর উল্লেখ করছি।
(২৭) যিকর নং ৯৭ : (সালাতের পরের দু‘আ)
তাবেয়ী রাবীয় ইবনু আমীলাহ বলেন, উমার (রাঃ) সালাত শেষে ঘুরে বলতেন:
اللهم أستغفرك لذنبي وأستهديك لأرشد أمري وأتوب إليك فتب علي اللهم أنت ربي فاجعل رغبتي إليك واجعل غنائي في صدري وبارك لي فيما رزقتني وتقبل مني انك أنت ربي
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা, আস্তাগফিরুকা লিযামবি, ওয়া আসতাহদীকা লি আরশাদি আমরি, ওয়া আতূবু ইলাইকা, ফাতুব ‘আলাইয়্যা। আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বী, ফাজ্‘আল রাগ্বাতী ইলাইকা, ওয়াজ্‘আল গিনা-ঈ ফী স্বাদরী, ওয়া বা-রিক লী ফীমা- রাযাক্বতানী, ওয়া তাকবাব্বাল মিন্নী। ইন্নাকা আনতা রাব্বী।
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আমি আমার গোনাহের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা (মাগফিরাত) প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে হেদায়েত প্রার্থনা করছি, আমি যেন সকল কাজে সর্বোত্তম কর্মটি বেছে নিতে পারি। আমি আপনার কাছে তাওবা করছি, আপনি আমার তাওবা কবুল করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আপনি আমার চাওয়া পাওয়াকে আপনার-মুখী বানিয়ে দিন এবং আমার বক্ষের মধ্যে আমার ধনাঢ্যতা প্রদান করুন (আমার অন্তরকে আপনি ছাড়া অন্য সবার থেকে অমুখাপেক্ষী বানিয়ে দিন), আপনি আমাকে যে রিযিক প্রদান করেছেন তাতে বরকত প্রদান করুন এবং আমার (কর্ম ও দু‘আ) কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি আমার প্রভু।” হাদীসটি সহীহ।[8]
(২৮) যিকর নং ৯৮ : (সালাতের পরের দু‘আ)
আবু দারদা (রাঃ) সালাত শেষ করে বলতেন :
بحمد ربي أنصرفت وبذنوبي أعترفت أعوذ بربي من شر ما اقترفت يا مقلب القلوب قلب قلبي على ما تحب وترضى
অর্থঃ “আমার প্রভুর প্রশংসায় আমি সালাত শেষ করলাম। আমি আমার গোনাহসমূহের স্বীকারোক্তি করছি। আর আমি যে কর্ম করেছি তার অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে আমি আমার প্রভুর আশ্রয় গ্রহণ করছি। হে মন পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণকারী, আমার অন্তরকে পরিবর্তন করুন সেই বিষয়ের জন্য যা আপনি ভালবাসেন এবং যাতে আপনি খুশি হন।”[9]
(২৯) যিকর নং ৯৯ : (সালাতের পরের দু‘আ)
যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয়েছে, ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সালাত শেষে বলতেনঃ
اللهم إني أسألك موجبات رحمتك وعزائم مغفرتك وأسألك الغنيمة من كل بر والسلامة من كل إثم اللهم إني أسألك الفوز بالجنة والجواز من النار اللهم لا تدع لنا ذنبنا إلا غفرته ولا هما إلا فرجته ولا حاجة إلا قضيتها
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, আপনার রহমত লাভের নিশ্চিত কারণগুলি ও আপনার ক্ষমা লাভের নিশ্চিত বিষয়গুলি। আমি আপনার কাছে সকল নেক কাজের সম্পদ (নেক কাজ করার তাওফীক) ও সকল পাপ থেকে নিরাপত্তা চাচ্ছি। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাই - জান্নাত লাভের বিজয় ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ। হে আল্লাহ, আমাদের কোনো গোনাহ আপনি বাকি রেখেন না, সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন, কোনো দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা বাকি রেখেন না, সকল দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা আপনি দূর করে দিন এবং কোনো হাজত আপনি বাকি রেখেন না, সব হাজত আপনি পূরণ করে দিন।”
এই দু‘আটি মূলত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সাধারণ দু‘আ হিসাবে বর্ণিত। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তা সালাতের শেষে বা সালামের পরে পড়তেন বলে এই দুর্বল সনদের হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহই ভালো জানেন।[10]
সালাতের পরে যিকর-মুনাজাত আদায়ের মাসনূন পদ্ধতি
(১) আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে অনেক মাসনূন যিকর ও দু‘আ রয়েছে, যেগুলি পালনের জন্য সকল মুসলিমের চেষ্টা করা উচিত। উপরের ঊনত্রিশটি যিকরের মধ্যে কিছু রয়েছে শুধু যিকর এবং কিছু দু‘আ মিশ্রিত যিকর। আমরা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, সকল যিকর ও দু‘আই মুনাজাত বা আল্লাহর সাথে চুপিচুপি কথা বলা। সকল মুসলিমের উচিত এসকল মুনাজাত অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে মনোযোগ, আন্তরিকতা ও আবেগের সাথে পালন করা। আরবী মুনাজাতগুলি মুখস্থ করা সম্ভব না হলে অন্তত সেগুলির মর্ম আমরা বাংলায় বলে মুনাজাত করব। আমাকে আমার জন্য চাইতে হবে। হৃদয় ও মন সমর্পণ করে আবেগ দিয়ে।
(২) উপরের যিকর ও দু‘আগুলির বিষয়ে স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সেগুলি সর্বদা একত্রে পাঠ করতেন না। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যিকর পাঠ করেছেন। কখনো কখনো তিনি সালামের পরেই উঠে চলে গিয়েছেন। এ সকল হাদীসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি যে, সাধারণত ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পরে তিনি কিছু যিকর ও দু‘আ পাঠ করতেন। আমাদের উচিত সুযোগ ও সময় অনুসারে এগুলির মধ্য থেকে কিছু বা সব যিকর ও দু‘আ পালন করা।
(৩) এসকল যিকর ও দু‘আ তিনি সাহাবীগণের দিকে ঘুরে বসার পরে পাঠ করতেন বলে কোনো কোনো হাদীসে আমরা দেখতে পেয়েছি। আবার কোনো কোনো হাদীসে সালাতের পরেই পাঠ করেছেন বলে বলা হয়েছে ; ঘুরে বসার পরে না আগে তা বলা হয়নি। বিষয়টি ইমামের সাথে সম্পৃক্ত। মুক্তাদীগণ সর্বাবস্থায় সালাতের পরে বসে বসে যিকর ও দু’আগুলি পালন করবেন। ফজর ও আসরের সালাতের পরে ইমাম ঘুরে বসে যিকর ও দু’আগুলি পালন করবেন। যোহর, মাগরিব ও ইশা’র সালাতের পরে ইমাম কী করবেন তা নিয়ে ইসলামের প্রসিদ্ধ ফকীহ, ইমাম ও আলিমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমদ (রহ) ও অন্যান্য ইমামের মতানুসারে সকল সালাতের পরেই ইমাম “আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” বলা পর্যন্ত কিবলামুখী বসে থাকবেন। এরপরই ঘুরে বসে অন্যান্য যিকর ওযীফা আদায় করবেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ) ও অন্যান্য ইমামের মতে যে সালাতের পরে সুন্নাত সালাত আছে সেসকল সালাতের পরে ইমাম উঠে ঘরে চলে যাবেন বা মসজিদের অন্য কোনো স্থানে সুন্নাত আদায় করবেন। এরপর অন্যান্য যিকর আদায় করবেন। ইমাম আবু হানীফার (রহ) মতানুসারে মুক্তাদীগণের জন্য যোহর, মাগরিব ও ইশা’র পরে দটিু বিকল্প রয়েছে: তারা বসে সকল যিকর ওযীফা পালনের পর সুন্নাত পড়তে পারেন, অথবা সুন্নাত আদায়ের পরে যিকর ওযীফা পালন করতে পারেন।[11]
কোনো কোনো হানাফী আলিম উল্লেখ করেছেন যে, যে সকল ফরয সালাতের পরে সুন্নাত আছে সেসকল সালাতের পরেও ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্যই সুন্নাতের আগে মাসনূন যিকরগুলি আদায় করে নেওয়া যাবে, এতে কোনো অসুবিধা নেই।[12] ইমাম যদি সুন্নাতের আগে মাসনূন যিকরগুলি পালন করেন তাহলে তাঁর উচিৎ কিবলা থেকে ঘুরে বসা বা সালাতের স্থান থেকে সরে বসা। কারণ, আমরা ইতঃপূবে দেখেছি যে, সালাম ফিরানোর পরে ইমামের জন্য কিবলামুখী হয়ে বসে থাকা হানাফী মযহাবে বিদ’আত ও না-জায়েয বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
(৪) এসকল যিকর ও অন্যান্য সকল যিকরের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাধারণ সুন্নাত মনে মনে বা খুবই নিচুস্বরে বা বিড়বিড় করে তা পাঠ করা। তবে সালাতের পরের তাসবীহ, তাকবীর ও যিকরের ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা শব্দ করে পাঠ করতেন বলে বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই। আমরা উপরের হাদীসগুলিতে দেখেছি যে, কখনো কখনো তিনি ঠোঁট নেড়ে বা বিড়বিড় করে এমনভাবে দু‘আ ও যিকরগুলি পাঠ করেছেন যে, নিকটের সাহাবীগণও বুঝতে পারেননি। তাঁরা প্রশ্ন করে দু‘আর শব্দ জেনে নিয়েছেন। কখনো কখনো নিকটবর্তী বা একেবারে কাছে বসে যে সাহাবী সালাত আদায় করেছেন তিনি দু‘আ বা যিকরের শব্দটি শুনতে পেয়েছেন। আবার কোনো কোনো দু‘আ সাহাবীগণ শুনতে পান এরূপ শব্দে তিনি বলেছেন।
অন্য হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদীগণ সকলেই মৃদু শব্দ করে যিকর ও তাকবীর পাঠ করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সে সময়ে খুব অল্প বয়স্ক ছিলেন। তিনি সাধারণত জামাতে শরীক হতেন না। মুসললীগণের সমবেত তাকবীরের শব্দে তিনি বুঝতে পারতেন যে, সালাত শেষ হয়েছে। যেমন, আমাদের সময়ে কুরবানির ঈদের দিনগুলিতে আমরা জামাতের সালাতে সালাম ফেরানো পরে প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে এবং সামান্য উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর পাঠ করি, যাতে মসজিদের বাইরে অবস্থানরত কিশোরগণ সালাত শেষ হয়েছে বলে বুঝতে পারে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ
رَفْعَ الصَّوْتِ بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ المَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوا بِذَلِكَ إِذَا سَمِعْتُهُ ... أَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلاَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيرِ
“নবীয়ে আকরাম (সা.)-এর যুগে ফরয সালাতের সালাম ফেরানোর পরে উচ্চৈঃস্বরে যিকর করার প্রচলন ছিল। যিকরের শব্দ শুনেই আমি বুঝতে পারতাম যে সালাত শেষ হয়েছে।” অন্য বর্ণনায়: “আমি তাকবীরের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারতাম যে সালাতের জামা’আত শেষ হয়েছে।”[13]
এ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ সালাতের পরের তাকবীর, তাহলীল ইত্যাদি যিকর কিছুটা শব্দ করে পাঠ করতেন। এ সকল হাদীসের আলোকে কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন যে, সালাতের পরের তাকবীরগুলি সামান্য জোরে বলা সুন্নাত। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফি’য়ী ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ অনুসরণীয় ইমাম (রহঃ) একমত হয়েছেন যে, সকল প্রকার যিকর ও দু‘আর ন্যায় এ সকল যিকর মনে মনে বা অত্যন্ত নিচুস্বরে পাঠ করাই সুন্নাত। কারণ, অন্যান্য হাদীসে জোরে যিকর করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং আস্তে যিকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সকল হাদীসের আলোকে তাঁরা বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা প্রদানের জন্য মাঝে মাঝে কোনো কোনো যিকর শব্দ করে উচ্চারণ করতেন। যেমন, তিনি যোহর ও আসর সালাতের কিরাআত ও সালাতের কোনো কোনো যিকর ও দু‘আ মাঝে মাঝে একটু জোরে উচ্চারণ করতেন শিক্ষা প্রদানের জন্য। এখানে জোরে বলার উদ্দেশ্য মূল যিকর শিক্ষা দেওয়া, জোরে বলা শিক্ষা দেওয়া নয়। কাজেই, সকল হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরের যিকরগুলি মনে মনে পালন করাই সুন্নাত। তবে কখনো যদি ইমাম মুক্তাদীগণকে শিক্ষা প্রদানের জন্য দুই একদিন জোরে পাঠ করেন তাহলে দোষ হবে না। নিয়মিত বা সাধারণভাবে জোরে বা শব্দ করে এ সকল যিকর আদায় করা মাকরূহ বা নিষিদ্ধ। ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ) এ বিষয়ে খুবই কড়াকড়ি করেছেন।
ইমামগণের এই কড়াকড়ির কারণ, সাহাবী-তাবেয়ীগণ এ সকল যিকরকে চুপেচুপে করাকেই সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করেছেন। জোরে বলাকে তারা বিদ‘আত মনে করতেন। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আবুল বাখতারী সাঈদ ইবনু ফাইরোয (৮৩ হি) বলেন, মুস’আব যুবাইরী ইমামরূপে সালাত শেষ করার পরে জোরে বলেনঃ لا اله الا الله، والله اكبر (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার)। তখন তাবেয়ী শ্রেষ্ঠ আবীদাহ ইবনু আমর আস-সালমানী (৭০ হি), যিনি মসজিদে ছিলেন, বলেন (قاتله الله! نعار بالبدع) আল্লাহ একে ধ্বংস করুন! বিদ’আতের জয়ধ্বনি দিচ্ছে।”[14]
সম্মানিত পাঠক, একটু ভেবে দেখুন! এই ইমাম কিন্তু মাসনূন যিকর পাঠ করেছেন। তবুও তাবেয়ীগণ সুন্নাতের সামান্য ব্যতিক্রম সহ্য করতে পারতেন না। আমাদের যুগের বিভিন্ন আলিম হয়ত শতাধিক অকাট্য দলিল পেশ করবেন যে, এই যিকরটি মাসনূন এবং জোরে যিকর জায়েয বা মুস্তাহাব। কাজেই, এভাবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার” - বলতে যে নিষেধ করে সে কাফির!!
কিন্তু সাহাবী-তাবেয়ীগণের নিকট এ সকল অকাট্য দলিলের কোনো মূল্য ছিল না। তাঁদের নিকট একমাত্র মূল্য সুন্নাতের। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ যখন যেভাবে যিকর করেছেন তার কোনোরূপ ব্যতিক্রম তাঁরা সহ্য করতে পারতেন না।
(৫) উপরের হাদীসগুলি ও অনুরূপ সহীহ ও যয়ীফ সকল হাদীস থেকে আমরা নিশ্চিতরূপে জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ সকল দু‘আ-মুনাজাত পাঠের সময় কখনো হাত তুলতেন না। সালাতের পরে বসে বা সাহাবীগণের দিকে ঘুরে বসে এ সকল যিকর ও দু‘আ-মুনাজাত তিনি পাঠ করতেন। ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন হাদীসে তিনি দু‘আর সময় দুই হাত উঠানোর ফযীলত বর্ণনা করেছেন। কোনো কোনো দু‘আর সময় তিনি হাত তুলেছেন বলে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেখানেই তিনি দু‘আর সময় হাত তুলেছেন, সেখানেই সাহাবীগণ হাত উঠানোর বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি সালাতের পরে দু‘আ বা মুনাজাতের সময় হাত তুলেছেন বলে একটি হাদীসও আমি খুঁজে পাইনি। সাহাবীগণও সালাতের পরে যিকর, দু‘আ ও মুনাজাত করতেন। তাঁরাও কখনো এ সময়ে হাত তুলে দু‘আ বা মুনাযাত আদায় করেছেন বলে কোথাও একটি বর্ণনাও আমি দেখতে পাইনি।
সাধারণভাবে দু‘আর জন্য দুহাত তুলে দু‘আ করা একটি মাসনূন আদব। সালাতের পরে দু‘আর জন্য হাত উঠানো না-জায়েয নয়।
দু‘আর সময় হাত উঠানোর ফযীলত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে যিনি এই ফযীলত বর্ণনা করেছেন, তিনিই এই সময়ে হাত উঠানো বর্জন করেছেন। এজন্য এ সময়ে সর্বদা হাত তুলে দু‘আ করলে তাঁর রীতির বিপরীত রীতি হয়ে যাবে। অথবা এ সময়ে হাত না তুলে দু‘আ করার চেয়ে হাত তুলে দু‘আ করাকে উত্তম মনে করলে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রীতিকে হেয় করার পর্যায়ে চলে যাবে। এজন্য আবেগ ও অবস্থার উপর নির্ভর করে কখনো হাত তোলা এবং কখনো হাত না তুলেই স্বাভাবিক অবস্থায় বসে মুখে দু‘আ-মুনাজাতগুলি পাঠ করা উত্তম বলে মনে হয়।
(৬) উপরের হাদীসগুলি থেকে আমরা নিশ্চিতরূপে বুঝতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীগণ কখনোই এ সকল যিকর ও দু‘আ জামাতবদ্ধভাবে বা সম্মিলিতভাবে আদায় করেননি। প্রত্যেকে যার যার মতো তা পাঠ করেছেন।
(৭) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায পরবর্তী মুনাজাতগুলিতে আরো লক্ষণীয় যে, এ সকল মুনাজাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আমার’, আমাকে’ ইত্যাদি বলে, অর্থাৎ ‘উত্তম পুরুষের একবচন' (واحد متكلم) ব্যবহার করে শুধুমাত্র নিজের জন্য প্রার্থনা করেছেন। কাউকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে দু‘আ করলে ‘আমাদের’, ‘আমাদেরকে’ ইত্যাদি বহুবচন ব্যবহার করা সকল ভাষার ন্যূনতম দাবি। একাকী মুনাজাত করার সময় এক বচন বা ‘বহু বচন’ উভয়ই ব্যবহার করা চলে। যে কেউ একাকী মুনাজাতের সময় বলতে পারেন ‘আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।’ তবে সমবেত মুনাজাতের সময় ‘এক বচন’ ব্যবহার অসম্ভব। কারো সাথে একত্রে দু‘আ করার সময় যদি কেউ ‘আমি’, ‘আমার’, ‘আমাকে’ ইত্যাদি একবচন ব্যবাহার করেন তবে তা অশোভনীয় এবং একজন শিশু আরবও তার কথায় ‘আমীন’ বলবে না। কারণ তার অর্থ হবে, ইমাম বলছেন ‘আল্লাহ আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’ এবং মুক্তাদি বলছেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্ আপনি ইমাম সাহেবকে ক্ষমা করুন’।
এছাড়া মুক্তাদিদের নিয়ে দু’আ করলে শুধু নিজের জন্য দু’আ করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। সাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
لا يحل لإمرئ ... وهو يؤم قوما فيخص نفسه بدعوة دونهم فإن فعل فقد خاتهم
“কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, ... সে কিছু মানুষের ইমামতি করবে, অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জন্য দু’আ করবে। যদি সে তা করে তবে সে তাদের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ করল বা খিয়ানত করল।”[15]
আবূ উমামার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم فيخص نفسه بالدعاء دونهم فإن فعل فقد خانهم
“তোমাদের কেউ যদি ইমাম হয় তবে সে যেন কখনো তাদেরকে (মুক্তাদিগণকে) বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য খাস করে দু’আ না করে। যদি সে তা করে তবে সে তাদের খিয়ানত করল।”[16]
এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যদি ইমাম তার ইমামতির মধ্যে দু’আ করেন বা দু’আতেও ইমামতি করেন, তবে শুধুমাত্র তার একার জন্য দু’আ করবেন না, বরং সকলের জন্য দু’আ করবেন। এজন্য আমরা দেখতে পাই যে, নামাযের মধ্যে মুক্তাদিদের নিয়ে আদায় কতৃ ‘কুনুতের দু’আয়, খুতবার মধ্যে দু’আয়, ‘মাজলিসের দু’আয়’ ও অন্যান্য সমবেত দু’আয়, এমনকি সালাতের মধ্যে সালামের আগের দু’আয় রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘আমরা’, ‘আমাদের’, ‘আমাদেরকে’ ইত্যাদি ‘বহুবচন’ ব্যবহার করেছেন ও করতে শিক্ষা দিয়েছেন। পক্ষান্তরে নামাযের পরের দু’আগুলিতে তিনি ‘আমি’, ‘আমাকে’ ইত্যাদি একবচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, এ সকল মুনাজাত তিনি একান্তভাবে একাকীই করেছেন।
এক্ষেত্রে মূল বিষয় মুনাজাত বা যিকর ও দু‘আ। আর মুনাজাতের প্রাণ মনোযোগ ও আবেগ। হাত উঠানো বা না উঠানো, জোরে বা আস্তে, সমবেত বা একাকী ইত্যাদি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আমরা অনেকেই গতানুগতিকভাবে সবার সাথে দু’হাত উঠাই এবং নামাই, হয়ত কিছুই বলি না, অথবা না বুঝে কিছু আউড়াই, অথবা ইমাম তার নিজের জন্য দু‘আ চান এবং আমার আমিন বলি। এগুলি সবই যিকর ও মুনাজাতের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা অপ্রয়োজনীয় বা অত্যন্ত কম প্রয়োজনীয় গুরুত্বহীন অসার আনুষ্ঠানিকতাকে গুরুত্ব প্রদান করি, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে অবহেলা করি।
[2] সহীহ। সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/১১০৪, নং ৬৪৭২।
[3] সুনানু আবী দাউদ ২/৮৩, নং ১৫০৮, নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি: আস-সুনানুল কুবরা ৬/৩০-৩১, জামিউল উসূল ৪/২২৪।
[4] মুসনাদু আবী ইয়ালা ৩/৩৬৩, নং ১১১৮, তাবারানী, আল-মু’জামুল কাবীর ৫/২১১, ১১/১১৫, মুসান্নাফু ইবনু আবী শাইবা ১/২৬৯-২৭০, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৪৭-১৪৮, ১০১০৩, আত-তারগীব ২/৪৪৯, নাবাবী, আযকার, পৃ. ১১৩।
[5] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ৩/২৮৯, নং ৩১৭৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১১০, নাবাবী, আল-আযকার, পৃ. ১১৩।
[6] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ৯/১৫৭, ১৭২, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১১০, নাবাবী, আল-আযকার, পৃ. ১১৩, যাকারিয়্যা, আল-ইখবার ফীমা লা ইয়াসিহহু মিনাল আযকার, পৃ. ৫৭।
[7] মুসনাদু আবী ইয়ালা ৭/৩১৩, নং ৪৩৫২, তাবারানী, কিতাবুদ দু’আ, পৃ. ২০৯, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১১০, যাকারিয়্যা, আল-ইখবার ফীমা লা ইয়াসিহহু মিনাল আযকার, পৃ. ৬৪।
[8] মুসন্নাফু ইবনি আবী শাইবা ৬/৩৪।
[9] আব্দুর রাজ্জাক সান’আনী, আল- মুসন্নাফ ২/২৩৭-২৩৮।
[10] মুসন্নাফু ইবনি আবী শাইবা ১/২৬৯, বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর ৩/৬।
[11] মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মাবসূত ১/১৭-১৮।
[12] হাশিয়াতুত তাহতাবী, পৃ. ৩১২।
[13] সহীহ বুখারী ১/২৮৮, নং ৮০৫, ৮০৬, সহীহ মুসলিম ১/৪১০, নং ৫৮৩।
[14] মুসন্নাফু ইবনি আবী শাইবা ১/২৭০।
[15] তিরমিযী, আস-সুনান ২/১৮৯। তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
[16] আহমাদ, আল-মুসনাদ ৫/২৬১: হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৭৫। সনদের একজন রাবী কিছুটা দুর্বল।