লগইন করুন
প্রথম শর্ত: সিয়াম ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
তাই যদি না জেনে উপরোক্ত বিষয়ের কোনো একটিতে লিপ্ত হয়, তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ,
* আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-বাকরায় বলেন:
﴿ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦]
‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা কোনো ভুল করে বসি।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬) তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, “অবশ্যই আমি তা কবুল করেছি”।[1]
* অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥ ﴾ [الاحزاب: ٥]
‘আর তোমরা ভুলে যা কর, তাতে কোনো অপরাধ নেই। অবশ্য ইচ্ছাপূর্বক তোমাদের হৃদয় যা করছে তার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।’ (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫)
না জানার কারণে সাওম না ভাঙ্গার বিষয়টি ব্যাপক, হতে পারে সে শরীয়তের হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, সে ধারণা করে যে এ জিনিসটা সাওম ভাঙ্গবে না, ফলে তা করে বসে। অথবা কাজ করা অবস্থায় বা সময়ে সেটি তার অজানা ছিল। যেমন, সে ধারণা করে যে, ফজর বা সুবহে সাদিক এখনও উদিত হয়নি, ফলে সে খাওয়া-পিনা চালিয়ে যায় অথচ ফজর উদিত হয়ে গেছে। কিংবা সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে মনে করে খেয়ে ফেলল অথচ সূর্য তখনও অস্ত যায় নি। এসব কারণে সাওম ভঙ্গ হবে না। কারণ,
* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
«لما نزلت هذه الآية ﴿حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ﴾ عمدت إلى عقالين أحدهما أسود والآخر أبيض فجعلتهما تحت وسادتي وجعلت أنظر إليهما فلما تبين لي الأبيض من الأسود أمسكت فلما أصبحتُ غدوتُ إلى رسول الله صلى الله عليهِ وسلم فأخبرتُهُ بالذي صنعتُ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: إن وسادك إذن لعريض إن كان الخيط الأبيض والأسود تحت وسادك، إنما ذلك بياض النهار وسواد الليل».
“যখন নাযিল হলো এই আয়াতটি,
﴿حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ﴾ [البقرة: 187]
“যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে দেখা যায় কালো রেখা থেকে শুভ্র রেখা” তখন আমি দু’টি সুতা নিলাম, একটা কালো অপরটি সাদা। উভয়টাকে আমার বালিশের নীচে রাখলাম এবং উভয়ের দিকে তাকাতাম। অতঃপর যখন আমার নিকট কালো সূতা থেকে শুভ্র সুতাটা পরিস্কার ভাবে দেখা গেল তখন আমি পানাহার থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা করলাম সে ঘটনা জানালাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার বালিশ তো বেশ বড় ও প্রশস্ত, যদি তোমার বালিশের নীচে থাকে শ্রভ্র ও কালো সুতা। এটা তো দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।”[2]
এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, ‘আদী রাদিয়াল্লাহু আনহু সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পরও খেয়েছেন। দুটো রেখা পরিস্কার দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তিনি পানাহার পরিত্যাগ করেন নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাওমটি কাযা করার নির্দেশও দেননি; কারণ তিনি এর হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন।
* অনুরূপ সহীহ বুখারীতে আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হাদীসে এসেছে। তিনি বলেন,
«أفطرنا في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يوم غيم ثم طلعت الشمس».
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইফতার করেছিলাম এক মেঘলা দিনে তারপর সূর্য দেখা গিয়েছিল।”[3]
এখানে তিনি উল্লেখ করেননি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সাওমটি কাযা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; কারণ তাদের সময় অজানা ছিল। আর কাযার নির্দেশ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েই থাকতেন তবে তা অবশ্যই বর্ণিত হতো; কেননা এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বর্ণনার ক্ষেত্রে মানুষের হিম্মতের অভাব হতো না।
বরং শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তার ‘হাকিকাতুস সিয়াম’ নামক রেসালায় বলেন,
«إنه نقلَ هِشَامُ بنُ عُرْوَةَ أحدُ رواة الحَدِيثِ عن أبيه عروة: أنهم لم يؤمروا بالقضاء».
এ হাদীস বর্ণনাকারীদের অন্যমত হিশাম ইবনে ‘উরওয়াহ তার পিতা ‘উরওয়াহ থেকে বর্ণনা করেন, “তাদেরকে কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয় নি।”[4]
কিন্তু যখনই জানতে পারবে যে, দিন এখনও বাকী রয়েছে এবং সূর্য অস্ত যায়নি, তখন থেকে (দিনের অবশিষ্টাংশ) সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর ভক্ষণ করে এ মনে করে যে সুবহে সাদিক এখনো উদিত হয় নি। অতঃপর তার নিকট স্পষ্ট হলো যে, সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেছে, তাহলে তার রোযা সহীহ হবে, তার উপর কাযা আবশ্যক হবে না। কারণ সে সময়ের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল। আর আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য পানাহার ও সহবাসকে সুবহে সাদিক স্পষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হালাল করেছেন। আর অনুমতি দেয়া বৈধ জিনিসের কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয় না।
[2] বুখারী: ১৯১৬; মুসলিম: ১০৯০।
[3] বুখারী: ১৯৫৯।
[4] হাকীকাতুস সিয়াম, পৃ. ৩৪, ৩৫।
বুখারীর পূর্বোক্ত বর্ণনায় এসেছে, হিশামকে বলা হলো, তাদেরকে কী কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, কাযার কী প্রয়োজন? আর মা‘মার বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, “আমি জানি না তারা তা কাযা করেছিল কি না?”