লগইন করুন
বিতর সালাতসহ তারাবীর সংখ্যা কত হয় তা নিয়ে সালফে সালিহীনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
কেউ বলেন ৪১ রাকাত, কেউ ৩৯ রাকাত, কেউ ২৯, কেউ ২৩, আবার কেউ ১৩, এবং কেউ বলেন ১১ রাকাত। এসব মতামতের মধ্যে ১১ অথবা ১৩ রাকাতের মতামত অগ্রগণ্য।
* কারণ, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তাকে প্রশ্ন করা হল, রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কেমন (কত রাকাত) ছিল? তিনি বললেন,
«مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً »
‘রমযান এবং রমযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি ছিল না।’[1]
* অনুরূপ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَتْ صَلاَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً» يَعْنِي من اللَّيْلِ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত ১৩ রাকাত ছিল।’ অর্থাৎ রাতে[2]।
* অনুরূপ মুওয়াত্তায় সায়েব ইবন ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উবাই ইবন কা‘আব ও তামীমুদ্দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে লোকদের ১১ রাকাত সালাত পড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।’[3]
সালাফে সালেহীন তথা নেককার পূর্বসুরীরা তারাবীহ খুব লম্বা কেরাতে আদায় করতেন।
* যেমন সায়েব ইবন ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ، حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ.
‘ক্বারীগণ শত শত আয়াত পড়তেন। এমনকি আমরা দীর্ঘ রাকাতের কারণে লাঠির ওপর ভর দিয়ে সালাত আদায় করতাম।’[4]
কিন্তু আজকের দিনের মানুষ এর বিপরীত করে। তারা অনেক দ্রুতগতিতে তারাবীহ সালাত আদায় করে; যার ফলে শান্তি ও ধীর-স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করা যায় না। অথচ ধীর-স্থিরতা ও শান্তির সাথে সালাত আদায় করা সালাতের রোকনসমূহের একটি; যা ব্যতীত সালাত বিশুদ্ধ হয় না।
তারা এ গুরুত্বপূর্ণ রোকনটিকে নষ্ট করে এবং তারা তাদের পিছনের দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ বয়সী মুসল্লিদের কষ্ট দেয়। এতে নিজেদের উপর যুলুম করে এবং অন্যদের উপরও যুলুম করে থাকে।
উলামায়ে কেরাম রাহেমাহুমুল্লাহ বলেন, মুকতাদীগণ নামাযের সুন্নত আদায় করতে পারে না এমন দ্রুতগতিতে ইমামের সালাত পড়ানো মাকরূহ। তাহলে ওয়াজিব তরক করতে বাধ্য হয় এমন দ্রুততা অবলম্বন করলে কিরূপ হবে!? আমরা আল্লাহর কাছে এরূপ কাজ থেকে আশ্রয় চাই।
পুরুষদের জন্য তারাবীহর সালাতের জামাত উপেক্ষা করা উচিৎ নয়। যতক্ষণ ইমাম তারাবীহ ও বিতর শেষ না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রস্থান করবে না; যাতে সারারাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়।
যদি মহিলাদের দ্বারা বা মহিলাদের জন্য ফেৎনার আশংকা না থাকে, তাহলে মসজিদে তারাবীহর জামাতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়া জায়েয।
* কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ»
‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (নারীদের) মসজিদে আসতে বাধা দিও না।’[5]
* তাছাড়া এটা সালাফে সালিহীনের আমলও বটে। তবে শর্ত হলো: পর্দার সঙ্গে আসতে হবে। খোলামেলা, সুগদ্ধি ব্যবহার করে, উচ্চ আওয়াজ করে এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করে আসা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ ﴾ [النور: ٣١]
‘আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১)
অর্থাৎ বোরকা, লম্বা চাদর বা এ জাতীয় পোশাক ব্যবহারের পরও যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ তা লুকানো বা আবৃত করা সম্ভবও নয়।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ঈদের সালাতে অনুমতি দিলে উম্মে আতিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ إِحْدَانَا لَا يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ، قَالَ: «لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا»
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারও কারও তো বোরকা নেই। (তাহলে সে কী করবে?) তিনি বললেন, ‘তার কোনো বোন তাকে নিজ বোরকাসমূহ থেকে একটি বোরকা পরাবে।’[6]
নারীদের জন্য সুন্নত হলো: তারা পুরুষদের পেছনে কাতার বাঁধবে এবং তাদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করবে। সর্বশেষ কাতারগুলোয় দাঁড়াবে। কারণ তাদের বেলায় উত্তম কাতারের বিবেচনা পুরুষদের উল্টো।
* কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا»
‘পুরুষদের জন্য উত্তম হল প্রথম কাতার এবং মন্দ হল পেছনের কাতার। আর নারীদের জন্য উত্তম হল পেছনের কাতার এবং মন্দ হল প্রথম কাতার।’[7]
নারীগণ ইমামের সালাম ফিরানোর পরপরই ঘরে ফিরে যাবে। ওযর ছাড়া বিলম্ব করবে না।
* কারণ, উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ، وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ» ، قَالَ: نَرَى - وَاللَّهُ أَعْلَمُ - أَنَّ ذَلِكَ كَانَ لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ، قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الرِّجَالِ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন, তখন সালাম শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে নারীগণ দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি দাঁড়ানোর পূর্বে সামান্য কিছুক্ষণ বসে থাকতেন। বর্ণনাকারী ইবন শিহাব যুহরী বলেন, আমার মনে হয় (আল্লাহই ভালো জানেন) সেটা এজন্য করতেন, যাতে নারীরা পুরুষদের বের হওয়ার পূর্বে ফিরে যেতে পারে।’[8]হে আল্লাহ! ঐ সকল (পূর্ববর্তী) লোকদের যেভাবে আমল করার তাওফীক দিয়েছেন তেমনিভাবে আমাদেরও আমল করার তাওফীক দিন। হে দয়াময় প্রভু! আমাদের পিতা-মাতা এবং সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন। দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধর ও সকল সাহাবীর ওপর।
[2] বুখারী: ১১৩৮।
[3] মুয়াত্তা মালেক: ১/১৩৬, ১৩৭।
[4] পূর্ববর্তী হাদীসের অংশ।
[5] বুখারী: ৯০০; মুসলিম: ৪৪২। ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীসে বর্ণিত।
[6] বুখারী: ৩৫১; মুসলিম: ৮৯০।
[7] মুসলিম: ৪৪০।
[8] বুখারী: ৮৭০।