লগইন করুন
আর ইসলামের পথ হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের একমাত্র তরীকা:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ
وَطَرِيقَتُهُمْ هِيَ دِينُ الإسْلاَمِ الَّذِي بَعَثَ اللهُ بِهِ مُحَمَّدًا صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ لَكِنْ لَمَّا أَخْبَرَ النَّبِيُّ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ أَنَّ أُمَّتَهُ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً؛ كُلُّهَا فِي النَّار؛ إلاَّ وَاحِدَةً، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ. وَفِي حَدِيثٍ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: "هُمْ مَنْ كَانَ عَلَى مِثْلِ مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَومَ وَأَصْحَابِي صَارَ الْمُتَمَسِّكُونَ بِالإسْلامِ الْمَحْضِ الْخَالِصِ عَنِ الشَّوْبِ هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَفِيهِمُ الصِّدِّيقُونَ، وَالشُّهَدَاءِ، وَالصَّالِحُونَ، وَمِنْهُمُ أَعْلامُ الْهُدَى، وَمَصَابِيحُ الدُّجَى أُولو الْمَنَاقِبِ الْمَأْثُورَةِ، وَالْفَضَائِلِ الْمَذْكُورَةِ وَفِيهِمُ الأَبْدَالُ وَفِيهِمُ أَئِمَّةُ الدِّينِ الَّذِينَ أَجْمَعَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى هِدَايَتِهِمْ وَدِرَايَتِهِمْ، وَهُمُ الطَّائِفَةُ الْمَنْصُورَةُ الَّذِينَ قَالَ فِيهِمُ النَّبِيُّ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ: "لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ مَنْصُورَةً، لاَ يَضُرُّهُم مَنْ خَالَفَهُمْ، وَلاَ مَنْ خَذَلَهُمْ؛ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ نَسْأَلُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنَا مِنْهُمْ وَأَنْ لاَ يُزِيغَ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا، وَأَنْ يَهَبَ لَنَا مِن لَّدُنْهُ رَحْمَةً إِنَّهُ هُوَ الوَهَّابُ وَاللهُ أَعْلَمُ وَصَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ تَسْلِيمًا كَثِيرًا
আর ইসলামের পথ হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের একমাত্র তরীকা, যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু তিনি যেহেতু সংবাদ দিয়েছেন, তাঁর উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সবগুলো দলই জাহান্নামে যাবে, আর সেটি হলো জামাআত এবং অন্য এক হাদীছে তিনি যেহেতু বলেছেনঃ «هم من كان على مثل مَا أَنَا عَلَيْهِ اليوم وَأَصْحَابِي» ‘‘আজ আমি এবং আমার সাহাবীগণ যেই তরীকার উপর রয়েছি, যারা সেই পথে চলবে তারাই হলো নাজাত প্রাপ্ত’’[1], তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরাই কেবল ভেজালমুক্ত খাঁটি ইসলামের ধারক বলে গণ্য হয়েছে।
তাদের মধ্যে রয়েছে সিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মশীলগণ। এই উম্মতের মধ্যে রয়েছে এমন সব ব্যক্তি, যারা হেদায়াতের নিদর্শন, আধাঁরের প্রদীপ, হাদীছে বর্ণিত কৃতিত্ব, মহৎগুণাবলী এবং প্রচুর ফযীলতের অধিকারী।
তাদের মধ্যে আরো রয়েছে আবদাল (অলী-আওলীয়া) এবং দ্বীনের এমনসব ইমাম, যাদের হেদায়াতের উপর মুসলিমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। তারাই হলো আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত সেই দল, যাদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ مَنْصُورَةً لاَ يَضُرُّهُم مَنْ خَالَفَهُمْ وَلاَ مَنْ خَذَلَهُمْ؛ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَة»ُ
‘‘আমার উম্মতের একটি দল সবসময় হকের উপর বিজয়ী থাকবে। যেসব লোক তাদের বিরোধীতা করবে কিংবা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা কিয়ামত পর্যন্ত সেই দলটির কোন ক্ষতি করতে পারবেনা’’।আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন, আমাদেরকে হেদায়াত করার পর তিনি যেন আমাদের অন্তরকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে না দেন এবং আমাদেরকে যেন তাঁর বিশেষ রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। তিনিই মহান দাতা। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাথীদের উপর অগণিত সালাত ও সালাম
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বৈশিষ্টগুলো বর্ণনার শেষ পর্যায়ে এসে বলেনঃ তাদের সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট হলো, তারা দ্বীন ইসলামের পথেই চলে। এই ইসলামই তাদের মাজহাব এবং আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে পৌঁছার এটিই তাদের একমাত্র পথ। এই উম্মতের মধ্যে যেই মতভেদ ও দলাদলি হবে বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছে, সেই দলাদলির সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরাই সঠিক ইসলামের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই তারা দলাদলিরত ফির্কাগুলোর মধ্য হতে নাজাতপ্রাপ্ত ফির্কায় পরিণত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবী যেই তরীকার উপর ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা সেই তরীকার উপরই প্রতিষ্ঠিত। এ পথ নির্ভেজাল ও খাঁটি ইসলামের পথ ব্যতীত অন্য কিছু নয়। এই পথের অনুসরণ করার কারণেই তারা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’ নামক সম্মানজনক পদবী লাভ করেছে। তাদের মধ্যেই রয়েছে সিদ্দীকগণ অর্থাৎ অতিশয় সত্যবাদী ও সত্যের অনুসরণকারী, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে শহীদগণ এবং প্রচুর সৎকর্ম সম্পাদনকারী মহৎ ব্যক্তিবর্গ।
وَمِنْهُمُ أَعْلامُ الْهُدَى এমন সবব্যক্তি, যারা হেদায়াতের নিদর্শনঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের মধ্যে রয়েছে এমনসব আলেম, যারা ইলম ও আমলের প্রতিটি প্রশংসিত বৈশিষ্ট ও গুণাবলীর দ্বারা বিশেষিত। তাদের মধ্যে রয়েছে আবদাল। আবদাল বলতে অলীগণ এবং আবেদগণ উদ্দেশ্য। তাদেরকে আবদাল বলার কারণ সম্পর্কে একাধিক মত পাওয়া যায়। أبدال শব্দটি بدل শব্দের বহুবচন। এই উম্মতের একজন অলী ও আবেদ মারা গেলে তার বদলে আরেকজন আগমণ করে। অলীগণের একজন যেহেতু অন্যজনের বদলে আগমণ করে, তাই তাদেরকে আবদাল বলা হয়। ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল রাহিমাহুল্লাহ থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, মুহাদ্দিছগণ হলেন আবদাল।[2]
তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বীনের ইমামগণ। তারা ছিলেন ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। যেমন সুপ্রসিদ্ধ চার মাজহাবের চারজন সম্মানিত ইমাম এবং অন্যান্য ইমামগণ। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরাই সেই দল, যাদের কথা হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ مَنْصُورَةً لاَ يَضُرُّهُم مَنْ خَالَفَهُمْ وَلاَ مَنْ خَذَلَهُمْ؛ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَة»ُ
‘‘আমার উম্মতের একটি দল সবসময় হকের উপর বিজয়ী থাকবে। যারা তাদের বিরোধীতা করবে কিংবা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা কিয়ামত পর্যন্ত সেই দলটির ক্ষতি করতে পারবেনা’’। ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহর কাছে দু’আ করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পেশ করার মাধ্যমে এই বরকতময় কিতাবটি সমাপ্ত করেছেন। এইভাবে কোন কাজ শেষ করাকে সর্বোত্তম খাতেমা বা পরিসমাপ্তি বলা হয়।
والحمد لله رب العالمين وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم
[2] - সুতরাং আবদালের এই বিশ্লেষণ থেকে বুঝা যাচ্ছে, সুফীরা গাউছ, কুতুব ও আবদালের যেসব বিশেষণ বর্ণনা করে থাকে, তার সাথে প্রকৃত আবদালদের দূরতম সম্পর্কও নেই এবং আবদালদের প্রতি তারা যেসব কাজ-কর্ম সম্বন্ধিত করে, তা থেকে তারা সম্পূর্ণ মুক্ত।