লগইন করুন
৬- إثبات علو الله على خلقه واستوائه على عرشه
৬- আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টির উপরে রয়েছেন এবং তিনি তাঁর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় বলেছেন,
«رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِى فِى السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمْرُكَ فِى السَّمَاءِ وَالأَرْضِ كَمَا رَحْمَتُكَ فِى السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِى الأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِّبِينَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلَى هَذَا الْوَجَعِ»
‘‘তিনিই আমাদের প্রভু, যিনি আকাশে রয়েছেন। হে আমাদের প্রভু! তোমার নাম পবিত্র। তোমার হুকুম আসমানে ও যমীনে। আসমানে যেমন তোমার রহমত রয়েছে তেমনি যমীনেও তোমার রহমত নাযিল করো। আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করো। তুমি পবিত্রদের প্রতিপালক। তোমার নিকট হতে রহমত নাযিল করো এবং তোমার ‘শিফা’ হতে ‘শিফা’ নাযিল কর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে এই দুআ পাঠ করবে, আল্লাহর ইচ্ছায় সে সুস্থ হবে ইনশা-আল্লাহ্।[1] এই হাদীছটি হাসান বা বিশুদ্ধ। ইমাম আবু দাউদ এবং অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
«أَلا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً»
‘‘আমার উপর কি তোমাদের আস্থা নেই? অথচ আমি ঐ আল্লাহর একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি, যিনি আকাশে আছেন। আমার কাছে সকাল-বিকাল আকাশের খবর আসছে। আওআলের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃوالعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ ‘‘তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপর। তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন’’।[2] হাদীছটি হাসান। আবু দাউদ এবং অন্যান্য ইমামগণ এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। একটি দাসীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেছিলেন,
«أَيْنَ اللَّهُ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ قَالَ مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ قَالَ: أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ»
‘‘আল্লাহ কোথায়? সে জবাবে বলেছিলঃ আসমানের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি তখন দাসীর মনিবকে বললেনঃ তুমি একে আযাদ করে দাও। কারণ সে মুমিন।[3]
ব্যাখ্যাঃ রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত দুআ পাঠ করতেন। অর্থাৎ রোগীর জন্য সুস্থতা প্রার্থনা করে এই দুআ পাঠ করতেন। কুরআন ও হাদীছের দুআর মাধ্যমে রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ। আর শির্কী কথা ও কর্ম দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা নিষিদ্ধ।
رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِى فِى السَّمَاءِ আমাদের প্রভু রয়েছেন আসমানেঃ في السماء বলতে على السماء অর্থাৎ আকাশের উপরে উদ্দেশ্য। সুতরাং এখানে في হরফে জারটি على অর্থে ব্যবহৃত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَسِيحُوا فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ ‘‘কাজেই তোমরা দেশের মধ্যে আরো চার মাস চলাফেরা করো’’। (সূরা তাওবাঃ ২) এখানেও في হরফে জারটি على অর্থে ব্যবহৃত। في অক্ষরটি আসল অর্থে তথা যারফিয়া হিসাবেও ব্যবহৃত হওয়া বিশুদ্ধ। তখন السماء দ্বারা সাধারণভাবে উপর বুঝাবে।
تَقَدَّسَ اسْمُكَ তোমার নাম পবিত্রঃ অর্থাৎ তোমার অতি সুন্দর নামগুলো প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। اسم শব্দটি এখানে একবচন হলেও মুযাফ হওয়ার কারণে এর দ্বারা আল্লাহর সকল পবিত্র নামই উদ্দেশ্য হবে।
أَمْرُكَ فِى السَّمَاءِ وَالأَرْضِ তোমার হুকুম আসমানে ও যমীনেঃ অর্থাৎ আসমান ও যমীনে তোমার ঐসব সৃষ্টি ও নির্ধারণগত আদেশ কার্যকর হয়, যার মাধ্যমে সবকিছুই সৃষ্টি ও সংঘটিত হয়। এই অর্থেই আল্লাহ তাআলার নিম্নের বাণীটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ﴾
‘‘আল্লাহ তাআলা যখন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তিনি শুধু তাকে বলেন যে, হয়ে যাও। সাথে সাথেই তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২)[4] এমনি আল্লাহর আরেক প্রকার আদেশ রয়েছে, যা শরীয়তের ঐসব আদেশকে অন্তর্ভূক্ত করেছে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।
كَمَا رَحْمَتُكَ فِى السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِى الأَرْضِ আসমানে যেমন তোমার রহমত রয়েছে, তেমনি যমীনেও তোমার রহমত নাযিল করোঃ এখানে আল্লাহ তাআলার যেই রহমত আসমানের সকল বাসিন্দাকে নিজের মধ্যে শামিল করে নিয়েছে ঐ রহমতের উসীলায় আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়েছে যে, তিনি যেন যমীনবাসীর জন্যও তার রহমতের একটি অংশ নির্ধারণ করেন।
اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করোঃ এখানে আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে। المغفرة অর্থ হচ্ছে ঢেকে রাখা এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। মাথাকে ঢেকে রাখার জন্য এবং শত্রুর আঘাত থেকে মাথাকে হেফাযত করার জন্য মাথায় যেই হেলমেট (المِغْفَر পরিধান করা হয়, তা এই المغفرة শব্দ থেকেই নেয়া হয়েছে। এখানে الحوب হচ্ছে الإثم (অপরাধ)। আর الخطايا এবং الذنوب একই অর্থে ব্যবহৃত। উহা হচ্ছে গুনাহ ও পাপসমূহ।
أنت رب الطيبين তুমি পবিত্রদের প্রতিপালকঃ এই বাক্যের মাধ্যমেও উসীলা দেয়া হয়েছে। طيب শব্দের বহুবচন الطيبون। তারা হচ্ছেন নবী এবং তাদের অনুসারীগণ। আল্লাহর রুবুবীয়াতকে উক্ত শ্রেণীর লোকদের প্রতি সম্বন্ধিত করার দ্বারা তাদের সম্মান, মর্যাদা ও তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বুঝানো হয়েছে। অন্যথায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবকিছুরই প্রভু ও মালিক।
أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ তোমার নিকট হতে রহমত নাযিল করোঃ অর্থাৎ যেই রহমতটি তুমি সৃষ্টি করেছো, তা তুমি আমাদের উপর নাযিল করো। আল্লাহর রহমত দুই প্রকার। (১) আল্লাহর যেই রহমত তাঁর অন্যতম সিফাত অর্থে ব্যবহৃত,[5] সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍّ ‘‘আর আমার রহমত প্রতিটি জিনিষকেই পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে’’। (সূরা আরাফঃ ১৫৬)
(২) আবার রহমতকে কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দিকে তাঁর ক্রিয়া হিসাবে সম্বন্ধিত করা হয়। তখন উহা ঐসব মাখলুকের অন্তর্ভূক্ত হয়, যা সৃষ্টিকর্তার দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। যেমন এই হাদীছে রহমত শব্দটি তাঁর দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নের এই হাদীছে বলেছেনঃ
«خَلَقَ اللَّهُ مِائَةَ رَحْمَةٍ فَوَضَعَ وَاحِدَةً بَيْنَ خَلْقِهِ وَخَبَأَ عِنْدَهُ مِائَةً إِلاَّ وَاحِدَةً»
‘‘আল্লাহ তাআলা একশটি রহমত সৃষ্টি করেছেন। তার সৃষ্টির মধ্যে তা থেকে মাত্র একটি রহমত ছেড়েছেন। আর ৯৯টি রহমত তাঁর নিকট রেখে দিয়েছেন। রোগী যেহেতু আল্লাহর রহমতের প্রতি মুহতাজ, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রবের কাছে রোগীর উপর রহমত নাযিল করার আবেদন করেছেন, যাতে তিনি এর মাধ্যমে রোগীকে শিফা দান করেন।
এই হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ‘উলু’ তথা উপরে হওয়া সাব্যস্ত। আরো সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর। পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, উলু তথা উপরে হওয়া আল্লাহ তাআলার সত্তাগত সিফাত। সেই সাথে আরো জানা গেল যে, আল্লাহ তাআলার রুবুবীয়াত, তাঁর ইলাহীয়াত, তাঁর পবিত্রতা, সকল সৃষ্টির উপরে হওয়া, তাঁর সকল আদেশ, তাঁর রহমত ইত্যাদি সিফাত তুলে ধরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করা মুস্তাহাব।
أَلا تَأْمَنُونِي তোমাদের কি আমার উপর আস্থা নেই? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ হতে ঐ ব্যক্তিকে সম্বোধন করে এই কথা বলা হয়েছে, যে তাঁর কতক মাল বণ্টনে আপত্তি উত্থাপন করেছিল।[6] এখানে যেই ألا অব্যয়টি এসেছে, তা বাক্যের শুরুতে ব্যবহৃত হয় এবং তা দ্বারা সতর্ক করা উদ্দেশ্য হয়। আর تأمنون শব্দটি الأمانة থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে পক্ষপাতিত্ব ও খেয়ানত না করা। অর্থাৎ তোমরা কি মাল বণ্টনের ক্ষেত্রে আমার উপর আস্থাশীল নও?
وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاء অথচ আমি ঐ সত্তার একজন আস্থা ভাজন ব্যক্তি, যিনি আসমানের উপর রয়েছেনঃ আসমানে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা। তিনি আমাকে তাঁর অহী, রেসালাত এবং শরীয়তের তাবলীগ করার উপর আমানতদার বানিয়েছেন। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমানতদারী এবং সত্যবাদীতার সাক্ষ্যদাতা হিসাবে আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট।
উপরোক্ত হাদীছ থেকে দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, আল্লাহর জন্য উলু (উপরে হওয়া বিশেষণ) সাব্যস্ত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, من في السماء যিনি রয়েছেন আসমানের উপর। একটু পূর্বে এই বাক্যের ব্যাখ্যা অতিক্রান্ত হয়েছে।
والعرش فوق ذلك উহার উপর আল্লাহর আরশঃ এই বাক্যের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ঐসব সৃষ্টির উপর, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীর জন্য হাদীছে বর্ণনা করেছেন। তাতে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে এক আসমান থেকে অন্য আসমান পর্যন্ত দূরত্ব, প্রত্যেক আসমানের পূরত্ব, সপ্তম আসমানের উপরস্থ সাগর, সেই সাগরের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত দূরত্ব এবং ঐ সাগরের উপর সাতটি বিশাল আকারের ওয়াল (বিশেষ আকৃতির আট ফেরেশতা) থাকার কথা বর্ণনা করা রয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে যে, উহার উপর আল্লাহ তাআলার আরশ।
والله فوق العرش আর আল্লাহ্ আরশের উপরেঃ অর্থাৎ তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে আরশের উপর সমুন্নত হওয়া শোভনীয়, তিনি সেভাবেই আরশের উপর সমুন্নত রয়েছেন।
وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেনঃ অর্থাৎ তিনি তাঁর ইলমের মাধ্যমে তোমাদের সকল অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন, যা থেকে কোন বস্ত্তই গোপনীয় নয়।
উপরের হাদীছ থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ তাআলার জন্য আরশের উপর সমুন্নত হওয়া সুসাব্যস্ত। আর আল্লাহ তাআলার আরশ সমস্ত মাখলুকের উপরে এবং তিনি স্বীয় ইলমের মাধ্যমে বান্দাদের সমস্ত আমলকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপনীয় নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে সম্বোধন করে বলেছেন, আল্লাহ কোথায়? সে ছিল মুআবীয়া ইবনুল হাকামের দাসী। দাসীর মনিব মুআবীয়া দাসীর উপর ক্রোধান্বিত হলেন। ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি তাঁর দাসীকে চপেটাঘাত করলেন। অতঃপর তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষয়টি জানালেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরো জানালেন যে, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো না? তিনি বললেনঃ আমার কাছে ওকে নিয়ে এসো। তিনি দাসীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ أين الله আল্লাহ কোথায়? এতে দলীল পাওয়া যায় যে, আল্লাহ কোথায়? এই প্রশ্ন করা জায়েয আছে।
দাসী তখন বললঃ في السماء আসমানের উপরঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আসমানের উপর। এই বাক্যের ব্যাখ্যা পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসীকে আরো প্রশ্ন করলেন যে, আমি কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে দাসীর বিশ্বাস কী ছিল, তা জানার জন্য তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে।
দাসী তখন বললঃ أنت رسول الله ‘‘আপনি আল্লাহর রাসূল’’। এই বাক্যের মাধ্যমে দাসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রেসালাতের সাক্ষ্য দিল। তিনি তখন দাসীর মনিব মুআবীয়াকে বললেনঃ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ তুমি একে আযাদ করে দাও, কারণ সে মুমিন। এতে প্রমাণ পাওয়া গেল, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে আল্লাহ তাআলা উপরে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সে মুমিন হিসাবে গণ্য হবে। আরো জানা গেল যে, দাসমুক্তির জন্য ঈমান পূর্বশর্ত।এই হাদীছে সমস্ত সৃষ্টির উপরে অবস্থিত সাত আসমানের উপর আল্লাহ তাআলার সমুন্নত হওয়ার দলীল পাওয়া গেল। এতে আরো প্রমাণ পাওয়া গেল যে, আল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করার সময় আঙ্গুল বা শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দিয়ে উপরের দিকে ইঙ্গিত করা বৈধ।
[2] - আওআলের হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটি কী? আমরা বললামঃ এটি মেঘ। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কত? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ। এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি পাহাড়ী পাঠা (পাঠার আকৃতিতে ফেরেশতা)। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছে। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা রয়েছেন আরশের উপরে। তবে এই হাদীছটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে যে প্রধান দু’টি বিষয়কে কেন্দ্র করে হাদীছটি এসেছে যথা আল্লাহর বড়ত্ব এবং তাঁর আরশে সমুন্নত হওয়া সে বিষয়টি সুসাব্যস্ত ও সর্বজন স্বীকৃত বিধায় হাদীছের মর্মার্থ সঠিক।
[3] - সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ১২২৭।
[4] - আল্লাহ তাআলার আমর বা আদেশ দুই প্রকার। (১) আমরে কাওনী। আল্লাহ যেই আদেশ দ্বারা আসমান-যমীনের সকল বিষয় সৃষ্টি, তাদবীর ও পরিচালনা করেন, তা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিগত আদেশ। (২) আল্লাহ তাআলার আরেক প্রকার আদেশ রয়েছে, যা দ্বারা শরীয়তের আদেশ উদ্দেশ্য। যেমন নামাযের আদেশ, যাকাতের আদেশ, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণের আদেশ ইত্যাদি আরো অনেক আদেশ রয়েছে। তদ্রুপ অন্যান্য পাপাচার থেকেও নিষেধ করা হয়েছে। এগুলো শরঈ ও দ্বীনী আদেশ-নিষেধের অন্তর্ভূক্ত।
[5] - আর এই কথাটি সর্বদাই স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহর কোনো সিফাতই সৃষ্টি নয়।
[6] - সহীহ বুখারীতে এই হাদীছটি বিস্তারিত উল্লেখিত হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَعَثَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رضي الله عنه إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْيَمَنِ بِذُهَيْبَةٍ فِي أَدِيمٍ مَقْرُوظٍ، لَمْ تُحَصَّلْ مِنْ تُرَابِهَا، قَالَ: فَقَسَمَهَا بَيْنَ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ بَيْنَ عُيَيْنَةَ بْنِ بَدْرٍ، وَأَقْرَعَ بْنِ حابِسٍ، وَزَيْدِ الْخَيْلِ، وَالرَّابِعُ: إِمَّا عَلْقَمَةُ، وَإِمَّا عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلاءِ، قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: «أَلا تَأْمَنُونِي وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً». قَالَ: فَقَامَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ، مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ، نَاشِزُ الْجَبْهَةِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، مَحْلُوقُ الرَّأْسِ، مُشَمَّرُ الأزَارِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اتَّقِ اللَّهَ، قَالَ: «وَيْلَكَ أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الأرْضِ أَنْ يَتَّقِيَ اللَّهَ»؟ قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ قَالَ: «لاَ، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ يُصَلِّي». فَقَالَ خَالِدٌ: وَكَمْ مِنْ مُصَلٍّ يَقُولُ بِلِسَانِهِ مَا لَيْسَ فِي قَلْبِهِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنِّي لَمْ أُومَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوبِ النَّاسِ وَلا أَشُقَّ بُطُونَهُمْ». قَالَ: ثُمَّ نَظَرَ إِلَيْهِ وَهُوَ مُقَفٍّ، فَقَالَ: «إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ رَطْبًا لا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ». وَأَظُنُّهُ قَالَ: «لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُودَ» (بخارى:4351)
‘‘আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য পরিচ্ছন্ন চামড়ার থলের মধ্যে সামান্য স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন, যা ধুলাবালি থেকে তখনো আলাদা করা হয়নি। তিনি চারজনের মধ্যে সোনাটি বন্টন করে দিলেন। এরা হচ্ছেনঃ উয়াইনা ইবনে বদর, আকরা বিন হাবেস, যায়েদুল খাইল আর চতুর্থ জন হচ্ছেন আলকামাহ বা আমের ইবনে তুফাইল। তার সাথীদের একজন বললঃ এ লোকগুলোর চেয়ে আমরা এর বেশী হকদার। বর্ণনাকারী বলেনঃ কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কানে পৌঁছল। তিনি বললেনঃ তোমাদের কি আমার উপর আস্থা নেই? অথচ আমি ঐ আল্লাহর একজন আস্থা ভাজন ব্যক্তি, যিনি আকাশে আছেন। আমার কাছে দিন-রাত আকাশের খবর আসছে। এ সময় এমন এক ব্যক্তি দাঁড়াল, যার চোখ দু’টি ছিল ব্রুর মধ্যে লুকায়িত, গাল ছিল ফোলা, কপাল ছিল উঁচু, দাড়ি ছিল ঘন, মাথা ছিল ন্যাড়া এবং লুঙ্গি ছিল অনেক উপরে। সে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। তিনি বললেনঃ তুমি ধ্বংস হয়ে যাও, সারা দুনিয়ার মাঝে আমি কি আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভয় করার হকদার নই? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি চলে গেল। খালেদ বিন ওয়ালীদ আরজ করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাঁকে হত্যা করব না? তিনি জবাবে বললেনঃ না, হয়তবা সে নামায পড়ে। খালেদ বিন ওয়ালীদ বললেনঃ এমন অনেক নামাযী আছে যারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের মনের মধ্যে নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমাকে লোকদের দিল চিরে ফেলার ও তাদের পেট ফেঁড়ে ফেলার আদেশ দেয়া হয় নি। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারপর তিনি ঐ লোকটির দিকে চোখ তুলে তাকালেন। তখনো সে পিঠ ফিরে চলে যাচ্ছিল। তিনি তার দিকে দৃষ্টি রেখে বললেনঃ ঐ ব্যক্তির বংশে এমন এক প্রজন্মের উদ্ভব হবে, যারা সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের গলার নীচে যাবে না। দ্বীন তাদের কাছ থেকে এমনভাবে ছিটকে পড়বে, যেমনভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে পড়ছে যে, তিনি একথাও বলেছেনঃ আমি যদি সেই জাতিকে পাই, তাহলে সামুদ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করবো’’।