শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া সহীহ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার জন্য সাব্যস্ত গুণাবলীতে বিশ্বাস করা আবশ্যক ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
২- এই কথা সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা খুশী হন ও হাসেন

২- إثبات أن الله يفرح ويضحك

২- এই কথা সাব্যস্ত করা যে, আল্লাহ তাআলা খুশী হন ও হাসেন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ برَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

‘‘বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তখন তিনি তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশী হন, যে তার বাহনে আরোহন করে সফরে বের হল। বাহনের উপরেই ছিল তার খাদ্য-পানীয় ও সফর সামগ্রী। মরুভূমির উপর দিয়ে সফর করার সময় বিশ্রামার্থে সে একটি বৃক্ষের নীচে থামলো। অতঃপর মাটিতে মাথা রেখে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখল তার বাহন কোথায় যেন চলে গেছে। সে নিরাশ হয়ে একটি গাছের নীচে এসে আবার শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পেলো, তার হারানো বাহনটি সমুদয় খাদ্য-পানীয়সহ মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলো, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার প্রভু। অতি আনন্দের কারণেই সে এত বড় ভুল করে ফেলেছে।[1]


ব্যাখ্যা: الله শব্দের মধ্যে প্রথমে যেই লাম অক্ষরটি প্রবেশ করেছে, তাকে লামে ইবতেদা বলা হয়। আর أشد فرحا এর মধ্যে فرحا শব্দটি তামীয হিসাবে মানসুব হয়েছে। الفرح শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আনন্দিত ও খুশী হওয়া এবং অন্তরের মধ্যে ফুর্তি অনুভব হওয়া। পাপাচার ছেড়ে দিয়ে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়।

برَاحِلَتِهِ তার বাহনেঃ الراحلة বলা হয় ঐ উটনীকে, যা বোঝা বহন করার বয়সে উপনীত হয়েছে।

الحديثঃ ফেলে মুকাদ্দারের কারণে الحديث শব্দটি মানসুব হয়েছে। উহ্য বাক্যটি হচ্ছে أكمل الحديث হাদীছটি পূর্ণরূপে পড়ুন। কেননা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) হাদীছ থেকে শুধু দলীল গ্রহণের স্থানটুকু উল্লেখ করেছেন। (আর আমি পূর্ণ হাদীছটিই উল্লেখ করেছি)।

এই হাদীছ থেকে আল্লাহর আনন্দিত হওয়া ও খুশী হওয়া প্রমাণিত হলো। তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে খুশী হওয়া শোভনীয়, তিনি সেভাবেই খুশী হন। এটিও আল্লাহর সিফাতে কামালিয়ার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর খুশী হওয়া কোন মাখলুকের খুশী হওয়ার মত নয়। এটি তাঁর অন্যান্য সিফাতের মতই। আল্লাহর খুশী হওয়া তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার খুশী। আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবার কারণে এমন খুশী হন না যে, তাওবার প্রতি তাঁর প্রয়োজন ছিল এবং বান্দার তাওবার মাধ্যমে তিনি উপকৃত হবেন। কেননা আনুগত্যকারীর আনুগত্য আল্লাহর কোন উপকার করেনা এবং পাপাচারীর পাপাচারও আল্লাহর কোন ক্ষতি করেনা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

يَضْحَكُ اللَّهُ إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ

‘‘আল্লাহ তাআলা এমন দু’জন লোকের প্রতি হাসেন, যাদের একজন অন্যজনকে হত্যা করে। অতঃপর তারা উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করে।[2]


ব্যাখ্যা: হাদীছের শেষাংশে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কারণ উল্লেখ করেছেন।

«يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ عز وجل فَيُستشهد ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَى الْقَاتِلِ فيسلم فيقاتل في سبيل الله عز وجل فَيُسْتَشْهَدُ»

‘‘মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে গিয়ে অন্য কাফেরের হাতে শহীদ হয়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর প্রতি অনুগ্রহ করেন। ফলে সে তাওবা করে এবং ইসলাম কবুল করে নেয়। পরবর্তীতে সেও আল্লাহর পথে জেহাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়। এতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পূর্ণ অনুগ্রহ এবং সীমাহীন রহমতের প্রমাণ মিলে। কেননা মুসলিমগণ আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। কখনো এমন হয় যে, কাফেরদের কেউ তাদের কাউকে হত্যা করে ফেলে। এতে আল্লাহ তাআলা নিহত মুসলিমকে শাহাদাতের মাধ্যমে সম্মানিত করেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সেই হত্যাকারী কাফেরের উপরও অুনগ্রহ করেন এবং তাকে ইসলামের পথ দেখান। ফলে সেও জেহাদে গিয়ে শহীদ হয়। পরিণামে সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করে।

এটি আসলেই আশ্চর্যের বিষয়। হাসি সাধারণত ঐসব বিস্ময়কর বিষয় থেকেই হয়ে থাকে, যা সাধারণত খুব কমই সংঘটিত হয়। উপরের হাদীছের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার জন্য হাসা বিশেষণ সাব্যস্ত। হাসি তাঁর সিফাতে ফেলিয়ার মধ্যে শামিল। আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে হাসা শোভনীয়, আমরা তাঁর জন্য সেভাবেই হাসি সাব্যস্ত করি। তাঁর হাসি মানুষের হাসার মত নয়।[3]

[1] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিহাদ।

[3] - আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীর প্রতি খুশী হন এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি এবং হত্যাকারীর ক্রিয়া-কর্ম দেখে হাসেন। তবে আমাদেরকে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, খুশী হওয়া এবং হাসা আল্লাহর গুণাবলীর অন্যতম একটি গুণ। আমরা এতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন ব্যতীতই বিশ্বাস করি। আল্লাহর শানে যেমন হাসা মুনাসেব (শোভনীয়) হয় তিনি সেভাবেই হাসেন। তাঁর হাসা কোন মাখলুকের হাসার মত নয়।