শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ১৪- আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র বিশেষণ সাব্যস্ত করা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র বিশেষণ সাব্যস্ত করা

১৪- إثبات المكر والكيد لله تعالى على ما يليق به

১৪- আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র বিশেষণ সাব্যস্ত করা:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ﴾

‘‘রা’দ (মেঘের গর্জন) প্রশংসা সহকারে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতারাও তাঁর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে তাঁর তাস্বীহ পাঠ করে৷ তিনি বজ্র প্রেরণ করেন। অতঃপর যার উপর ইচ্ছা উহা নিক্ষেপ করেন৷

তারা আল্লাহর ব্যাপারে বাদানুবাদ করছে। আসলে তাঁর কৌশল বড়ই কঠোর। (সূরা রা’দঃ ১২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُالْمَاكِرِينَ﴾‘‘তারা (বনী ইসরাঈলের ইহুদী কাফেররা ঈসার বিরুদ্ধে) গোপন ষড়যন্ত্র করলো৷ জবাবে আল্লাহও তাঁর গোপন কৌশল খাটালেন৷ আর আল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৪) আল্লাহ তাআলা সালেহ (আঃ)এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলেনঃ

﴿وَكَانَ فِي الْمَدِينَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ قَالُوا تَقَاسَمُوا بِاللَّهِ لَنُبَيِّتَنَّهُ وَأَهْلَهُ ثُمَّ لَنَقُولَنَّ لِوَلِيِّهِ مَا شَهِدْنَا مَهْلِكَ أَهْلِهِ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾

‘‘সে শহরে ছিল নয়জন দলনেতা যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো এবং সংশোধনমূলক কোন কাজই করতোনা৷ তারা পরস্পর বললোঃ আল্লাহর কসম খেয়ে শপথ করে নাও, আমরা সালেহ ও তার পরিবার পরিজনদের উপর নৈশ আক্রমণ চালাবো। অতঃপর তার অভিভাবককে বলবোঃ আমরা তার পরিবারের হত্যাকান্ডের সময় উপস্থিত ছিলামনা। আমরা একদম সত্য কথা বলছি৷ তারা বড় ধরণের একটি ষড়যন্ত্র করলো এবং আমিও বিরাট একটি কৌশল অবলম্বন করলাম, যার কোন খবর তারা রাখতোনা’’। (সূরা নামলঃ ৫০) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

﴿إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا وَأَكِيدُ كَيْدًا فَمَهِّلِ الْكَافِرِينَ أَمْهِلْهُمْ رُوَيْدًا﴾

‘‘এরা একটি ষড়যন্ত্র করছে এবং তাদের মুকাবেলায় আমিও একটি কৌশল করছি। কাজেই ছেড়ে দাও এই কাফেরদেরকে। ছেড়ে দাও তাদেরকে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য’’। (সূরা তারিকঃ ১৫-১৭)


ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কৌশল ও ষড়যন্ত্র অত্যন্ত কঠোর। المحل শব্দের আভিধানিক অর্থ কঠোরতা। অর্থাৎ কঠোর ষড়যন্ত্র। ভাষাবিদ ইমাম যাজ্জায বলেনঃ আরবী ভাষায় বলা হয় ماحلته محالا إذا قاويته حتى يتبين أيكما أشد অর্থাৎ তুমি তার সাথে কঠোরতা প্রদর্শনে অবতীর্ণ হলে। এই কথা ঠিক ঐ সময় বলা হয়, যখন তুমি তার সাথে শক্তি ও কঠোরতা প্রদর্শনে অবতীর্ণ হও। যাতে করে সুস্পষ্ট হয়, কে অধিক কঠোর।

ইবনুল আরাবী (রঃ) বলেনঃ المحال অর্থ ষড়যন্ত্র করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অত্যন্ত কঠোর ষড়যন্ত্রকারী এবং মহাকৌশল অবলম্বনকারী। আল্লাহর পক্ষ হতে ষড়যন্ত্র করার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, তাকে এমনভাবে শাস্তি দেয়া, যাতে সে বুঝতে না পারে।

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করলো, আল্লাহ তাআলাও ষড়যন্ত্র করলেনঃ অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের লোকেরা ঈসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল। এখানে তাদের ঐসব লোক উদ্দেশ্য, যাদের নিকট থেকে ঈসা (আঃ) কুফুরী অনুভব করেছিলেন। তারা ছিল বনী ইসরাঈলের কাফের সম্প্রদায়। তারা ইসা (আঃ)কে হত্যা করতে এবং তাকে ক্রুশবিদ্ধ করতে চাইল। المكر (ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা) বলা হয় এমন কাজ করাকে, যার উদ্দেশ্য হয় সেই কাজের বাহ্যিক অবস্থার বিপরীত।

وَمَكَرَ اللَّهُ আল্লাহ তাআলাও ষড়যন্ত্র করলেনঃ এই কথার অর্থ হলো আল্লাহ তাআলা তাদেরকে প্রথমে অবকাশ দিয়ে পরবর্তীতে পাকড়াও করলেন এবং তাদেরকে ষড়যন্ত্রের শাস্তি দিলেন। ঈসা (আঃ)এর সাদৃশ্য ও আকৃতি অন্য এক ব্যক্তিকে প্রদান করলেন এবং ঈসাকে উপরে আল্লাহর দিকে উঠিয়ে নিলেন।[1]

وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম ষড়যন্ত্রকারীঃ অর্থাৎ তিনি শাস্তি ও কষ্টের যোগ্য ব্যক্তিকে কষ্ট ও শাস্তি প্রদান করতে সর্বাধিক শক্তিশালী ও সক্ষম। তিনি এমনভাবে তা করতে সক্ষম যে, ষড়যন্ত্রকারীরা তা বুঝতেই পারেনা।

وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا তারা বড় ধরণের একটি ষড়যন্ত্র করলো এবং আমিও বিরাট একটি কৌশল অবলম্বন করলামঃ এখানে সালেহ (আঃ)এর সম্প্রদায়ের কাফেরদের ষড়যন্ত্রের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।[2] তারা আল্লাহর নবী সালেহ (আঃ) এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে হত্যা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সালেহ (আঃ)এর ওয়ারিছ এবং আত্মীয়দের ভয়ে তারা এই ষড়যন্ত্র গোপনে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। যাতে তারা হত্যাকারীদের পরিচয় জানতে পেরে প্রতিশোধ নিতে না পারে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَكَرْنَا مَكْرًا ‘‘আমিও বিরাট একটি কৌশল অবলম্বন করলাম’’। অর্থাৎ তাদের এই কর্মের প্রতিফল দিলাম ও তাদেরকে ধ্বংস করলাম এবং আমার নবী সালেহকে নাজাত দিলাম। অথচ তারা আমার এই কৌশল ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতেই পারেনি।

إِنَّهُمْ يَكِيدُونَ كَيْدًا এরা একটি ষড়যন্ত্র করছেঃ এখানে মক্কার কুরাইশ কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলা হয়েছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ হতে যেই সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন, তারা প্রতিহত করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। শুধু তাই নয়; তারা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলাও তাদের সাথে কৌশল করেছেন এবং তাদের সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তিনি তাঁর রাসূলকে তাদের চোখের সামনে দিয়ে নিরাপদে বের করে নিয়েছেন। তারা তাঁকে দেখতেই পারেনি।

وَأَكِيدُ كَيْدًا তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় আমিও একটি কৌশল করছিঃ অর্থাৎ তাদেরকে ধীরে ধীরে পাকড়াও করি এবং তাদের ষড়যন্ত্রের সাজা দেই। অতঃপর তাদেরকে আকস্মিকভাবে ধরে ফেলি। আমার পাকড়াও সম্পর্কে তারা মোটেই টের পায়না।

উপরের আয়াতগুলো হতে প্রমাণিত হলো, আল্লাহ তাআলার المكر والكيد ষড়যন্ত্র ও কৌশল রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য প্রকৃতভাবেই ষড়যন্ত্র ও কৌশল সাব্যস্ত করা হয়েছে। গোপনে কারো কাছে কোনো জিনিষ পৌছিয়ে দেয়াকে المكر বলা হয়। الكيد এবং المخادعة শব্দদ্বয় ষড়যন্ত্র ও কৌশল অর্থেই ব্যবহৃত হয়।

ষড়যন্ত্র ও কৌশল দুই প্রকার। একটি হচ্ছে অন্যায় ষড়যন্ত্র। আরেকটি হচ্ছে ভাল ও ন্যায় ষড়যন্ত্র। যার সাথে ষড়যন্ত্র করা অনুচিৎ এবং যে ব্যক্তি অসদাচরণের উপযুক্ত নয়, তার সাথে ষড়যন্ত্র করাকে অন্যায় ও অসৎ ষড়যন্ত্র বলা হয়। আর ষড়যন্ত্রের শাস্তি স্বরূপ যে ব্যক্তি অসদাচরণ পাওয়ার হকদার তার সাথে ষড়যন্ত্র করা ন্যায়সঙ্গত। প্রথম প্রকার ষড়যন্ত্র হচ্ছে ঘৃণ্য এবং দ্বিতীয় প্রকার ষড়যন্ত্র হলো প্রশংসাযোগ্য। আল্লাহ তাআলা নিজের পক্ষ হতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং বিশেষ হিকমতের কারণে যেই প্রকার ষড়যন্ত্র প্রশংসনীয়, শুধু তাই করেন। তিনি যালেম ও পাপিষ্ঠদেরকে এমন অবস্থায় পাকড়াও করেন, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনা। যালেমরা আল্লাহর বান্দাদের সাথে যেরূপ আচরণ করে থাকে, আল্লাহ তাআলা যালেমদেরকে সেভাবে পাকড়াও করেন না; বরং আল্লাহর পাকড়াও হয় ভিন্ন ধরণের এবং অত্যন্ত কঠোর।

যারা অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করে, তাদের শাস্তি স্বরূপই কেবল আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের পবিত্র সত্তার জন্য ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং ধোঁকা সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ যারা অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করে তাদের অপকর্মের মোকাবেলায় আল্লাহও তাদের সাথে ষড়যন্ত্র করেন ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে শাস্তি দেন এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। ইহা জানা কথা যে, মন্দ, যুলুম এবং অন্যায়ের বিনিময়ে শাস্তি দেয়া সকল মানুষের নিকটেই প্রশংসনীয়। সুতরাং মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার জন্য অন্যায় ও ষড়যন্ত্রমূলক কাজের শাস্তি দেয়া কেন প্রশংসনীয় হবেনা?[3]

একটি সতর্কতাঃ ষড়যন্ত্র করা, কৌশল অবলম্বন করা এবং ধোঁকা দেয়া এই বিষয়গুলোর নিসবত (সম্বন্ধ) যখন আল্লাহর দিকে করা হবে, তখন বুঝতে হবে এগুলো আল্লাহ তাআলার কর্ম বা কর্মগত সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর নামগুলোর তুলনায় তাঁর কর্মের পরিধি অনেক বিশাল। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সত্তার জন্য এমনসব أفعال (কর্ম) সাব্যস্ত করেছেন, যেগুলো থেকে তাঁর নিজের জন্য কোন নাম নির্ণয় করেন নি। উদাহরণ স্বরূপ أراد الله (আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন) شاء الله(আল্লাহ চেয়েছেন), - এই দু’টি ক্রিয়ার কথা বলা যেতে পারে। এই দু’টি ক্রিয়া থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য নাম বের করে এভাবে বলা যাবেনা যে, المريد (ইচ্ছাকারী) এবং الشائي (ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকারী)। مكر (ষড়যন্ত্র করা), كيد (কৌশল করা) الخداع (ধোঁকা দেয়া) الاستهزاء (ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা) ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই কথা। এগুলো থেকে আল্লাহর জন্য যথাক্রমে ماكر (ষড়যন্ত্রকারী), كائد (চক্রান্তকারী), مخادع (প্রতারণাকারী) এবং مستهزئ (বিদ্রুপকারী) নাম নির্ধারণ করা এবং সেগুলো আল্লাহর পবিত্র সত্তার জন্য ব্যবহার করা যাবেনা। কেননা এই নামগুলো যেই অর্থ বহন করে তা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী প্রশংসনীয় এবং অন্য শ্রেণী নিন্দনীয়। এই দুই শ্রেণী হতে কেবল আল্লাহর জন্য প্রশংসনীয়টাই সাব্যস্ত হবে। যেমনটি ইতিপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণভাবে এবং বিনা পার্থক্যে এই কর্মগুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হলে এবং এগুলো থেকে তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য নাম গ্রহণ করা হলে এর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কামালিয়াত (পূর্ণতা) সাব্যস্ত হবেনা।[4]


[1] - ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, বনী ইসরাঈলের ইহুদী কাফেররা ঈসা (আঃ)কে হত্যা করার জন্য আগমণ করল। তাদের সাথে ছদ্মবেশী একজন নিকৃষ্ট লোক ছিল। এই লোকটি বাহ্যিকভাবে ঈসা (আঃ)এর আনুগত্য প্রকাশ করলেও সে ছিল কুচক্রী ও খেয়ানতকারী কাফের। সে এসেছিল ঈসা (আঃ)কে দেখিয়ে দিতে। যাতে করে ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করতে পারে। ঈসা (আঃ) তখন এমন একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন, যাতে একটি ছিদ্র ছিল। ছদ্মবেশী খেয়ানতকারী লোকটি সেই ঘরে প্রবেশ করল। তার পিছ ধরে ইহুদীরাও ক্রোধান্বিত ও হিংসার আগুনসহ অগ্রসর হল। ঐদিকে আল্লাহ তাআলা জিবরীল ফেরেশতাকে পাঠিয়ে ঈসা (আঃ)কে ঘরের সেই ছিদ্র দিয়ে নিজের দিকে উঠিয়ে নিলেন এবং এই কুচক্রী ও খেয়ানতকারীকেই ঈসা (আঃ)এর মত আকৃতি প্রদান করলেন। ছদ্মবেশী ঘরে প্রবেশ করে ঈসাকে পেলনা। সে ঘর থেকে বের হয়ে এসে ইহুদীদেরকে বললঃ আমি তো ঈসাকে ঘরে দেখতে পাইনি। ইহুদীরা ক্রোধান্বিত হয়ে বললঃ তুমিই তো ঈসা। এই বলে তারা তাকেই ঈসা মনে করে হত্যা করল এবং ক্রুশবিদ্ধ করল। এই ছিল আল্লাহর কৌশল ও ষড়যন্ত্র। তিনি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। কুচক্রী লোকটি ষড়যন্ত্র করেছিল। আল্লাহ তাআলাও তার সাথে ষড়যন্ত্র করলেন অর্থাৎ তার শরীরে ঈসা (আঃ)এর ছাপ লাগিয়ে দিলেন। সে তার উপযুক্ত শাস্তি পেল। আল্লাহ তার সাথে এমন ষড়যন্ত্র করলেন যে, সে বুঝতেই পারলনা। ইহুদীরা তাকে হত্যা করল এবং ক্রুশবিদ্ধ করল। এই হচ্ছে আল্লাহর রীতি। তিনি এক ষড়যন্ত্রকে আরেক ষড়যন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। এই লোকটি ষড়যন্ত্র করল। ইহুদীরাও ষড়যন্ত্র করল। আল্লাহ তার ষড়যন্ত্রকে তার উপরই ফিরিয়ে দিলেন। যারা নবী-রাসূল এবং আল্লাহর অলীদেরকে কষ্ট দেয় ও তাদের উপর যুলুম-নির্যাতন চালায়, তিনি সেই যালেম ও কুচক্রীদেরকে এভাবেই শাস্তি দেন।

এরপর ইহুদীরা সন্দেহে পড়ে গেল। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলঃ আমরা যদি ঈসাকেই হত্যা করে থাকি, তাহলে আমাদের সেই লোকটি কোথায়? আর যদি আমাদের লোকটিকে হত্যা করে থাকি, তাহলে ঈসা (আঃ) গেলেন কোথায়? এই সন্দেহে তারা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। আসল কথা হচ্ছে, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেনঃ

﴿وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ ۚ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا﴾

‘‘প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে৷ তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি৷ নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি; বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন৷ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা নিসাঃ ১৫৭-১৫৮)

[2] - হিজর (বর্তমান নাম মাদায়েন সালেহ) অঞ্চলে সালেহ (আঃ)এর সম্প্রদায় ছামুদ জাতি বসবাস করতো। বর্তমান সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলে এটি অবস্থিত। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে প্রচুর নেয়ামত দিয়েছিলেন। বাগ-বাগিচা, শষ্যক্ষেত্র, গবাদি পশু ইত্যাদি সকল প্রকার সম্পদই আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছিলেন। তারা সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতো এবং পাহাড়েও খোদাই করে সুন্দর সুন্দর ঘর নির্মাণ করতো। তাদের শরীরের গঠনও ছিল অত্যন্ত মজবুত এবং তারা ছিল খুবই শক্তিশালী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ الْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ﴾

‘‘স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ আদ জাতির পর তোমাদেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন যার ফলে আজ তোমরা তাদের সমতলভূমিতে বিপুলায়তন প্রাসাদ ও তার পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছো৷ কাজেই তাঁর সর্বময় ক্ষমতার স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যেয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা’’। (সূরা আরাফঃ ৭৪)

কিন্তু তারা আল্লাহর নেয়ামতের কুফুরী করেছিল। সেই সাথে তারা মূর্তি পূজাও করত। আল্লাহ তাআলা তাদের নিকট সালেহ (আঃ)কে পাঠালেন। তিনি তাদেরকে তাওহীদের প্রতি আহবান জানালেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾

‘‘আর আমি সামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠালাম৷ সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর এবাদত করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য ইলাহ নেই৷ তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুষ্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে৷ আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন৷ কাজেই তাকে আল্লাহর যমীনে চরে খাবার জন্য ছেড়ে দাও৷ কোন অসদুদ্দেশ্যে এর গায়ে হাত দিয়োনা৷ অন্যথায় একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে’’। (সূরা আরাফঃ ৭৩)

কিন্তু তারা সালেহ (আঃ)এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল এবং বিদ্রোহ করলো। আল্লাহর নির্দশন স্বরূপ আগত উটনীকেও তারা হত্যা করে ফেলল। শুধু তাই নয়; তারা সালেহ (আঃ) এবং তাঁর পরিবারের লোকদেরকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করারও গোপন ষড়যন্ত্র করল। তাদের ষড়যন্ত্র এই ছিল যে, তারা বললঃ আমরা সালেহ (আঃ) এবং তাঁর পরিবারকে হত্যা করবো। অতঃপর সকালে যখন সে বিষয়ে কথা উঠবে, তখন শপথ করে আমরা বলবোঃ আমরা এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানিনা। তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার আগেই আল্লাহর কৌশল ও ষড়যন্ত্র সামনে চলে আসল। তারা আল্লাহর নবী ও তাঁর পরিবারের ব্যাপারে এক জঘন্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করেছিল। আল্লাহ তাদের এই মন্দ পরিকল্পনাকে শুধু ব্যর্থই করে দেন নি; বরং সালেহ (আঃ)এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার পূর্বেই তাদেরকে এমনভাবে পাকড়াও করলেন যে, তারা বুঝতেই পারলনা। যেই রাতে তারা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে হত্যা করতে চেয়েছিল, তার আগেই এক বিকট আওয়াজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সকল পাপিষ্ঠ কাফেরকে ধ্বংস করে দিলেন। জিবরীল (আঃ)এর মাত্র একটি বিকট চিৎকারের আওয়াজে তাদের দেহের ভিতরেই কলিজা ও অন্তর ফেটে গেল। তারা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে রইল। এই ভয়াবহ আযাব থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী সালেহ (আঃ) এবং মুমিনদেরকে রক্ষা করলেন। বিকট আওয়াজের এই শাস্তিকে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ (66) وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ (67) كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ أَلَا بُعْدًا لِثَمُود﴾

‘‘শেষ পর্যন্ত যখন আমার ফায়সালার সময় এসে গেলো তখন আমি নিজ অনুগ্রহে সালেহ ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম এবং সেই দিনের লাঞ্ছনা থেকে তাদেরকে বাঁচালাম৷ নিঃসন্দেহে তোমার রবই শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী৷ আর যারা যুলুম করেছিল একটি বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করলো এবং তারা নিজেদের বাড়ীঘরে এমন অসার ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে রইলো, যেন তারা সেখানে কখনো বসবাসই করেনি৷ শোনো! সামূদ জাতির লোকেরা তাদের রবের সাথে কুফরী করলো৷ শোনো! ছামুদ জাতিকে অনেক দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছে (তারা আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়েছে)’’। (সূরা হুদঃ ৬৬-৬৮) তাদের ষড়যন্ত্রের শাস্তি ও প্রতিফল হিসাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যেই শাস্তি দিলেন, এটিকে আল্লাহর ষড়যন্ত্র ও কৌশল হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর নবী-রাসূল ও অলীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। মূলতঃ আল্লাহর ষড়যন্ত্র অত্যন্ত কঠোর ও কঠিন।

[3] - শত্রুর নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য যে গোপন কৌশল প্রয়োগ করা হয়, তাকে مكر, كيد , خداع তথা কৌশল, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বলা হয়। এই বিশেষণগুলো সাধারণত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সিফাতে কামালীয়া তথা পূর্ণতার গুণাবলী হিসাবে পরিগণিত নয়। কিন্তু শত্রুর মোকাবেলায় এগুলো প্রয়োগ করলে দোষণীয় হয়না, বরং প্রশংসনীয় হয়। সেই সাথে আল্লাহর পূর্ণ ইলম এবং অসীম ক্ষমতাও প্রকাশিত হয়।

[4] - আল্লাহর নামসমূহ তিন প্রকার। (১) আল্লাহ্ তাআলার এমন অনেক নাম রয়েছে, যেগুলো এককভাবেই এবং সরাসরি আল্লাহর কামালীয়াত (পূর্ণতা) ও প্রশংসা বুঝায়। যেমন আর্ রাহমান, আর রাহীম, আলআলীম, আলহাকীম, আলআযীয আর রায্যাক, আস্ সামীউ, আলবাসীর ইত্যাদি। (২) আল্লাহর আরো এমন অনেক নাম রয়েছে, যেগুলো অন্যান্য বিষয়ের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন فعال لما يريد (যা ইচ্ছা সম্পাদনকারী)। শুধু فعال (কর্মসম্পাদনকারী) বললে আল্লাহর পরিপূর্ণতা ও প্রশংসা বুঝায়না। (৩) আরো রয়েছে আল্লাহর এমন কতিপয় নাম, যেগুলোর সাথে রয়েছে আরেকটি বিপরীত অর্থবোধক নাম। এ সমস্ত নাম তার বিপরীত অর্থবোধক নাম উল্লেখ ছাড়া আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা শোভা পায়না। সেগুলো যদি এককভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে পূর্ণতার স্থলে অপূর্ণতা ও ত্রুটি বুঝায়। যেমন الضَّار النّاَفِع (ক্ষতিকারক ও কল্যাণকারী), الخَافِض الرَّافِع (নিচুকারী ও উত্তোলনকারী), الْمَانِع الْمُعْطِي (দানকারী ও বারণকারী), المُعِزُّ المُذِلُّّ (সম্মানদাতা ও অপমানকারী), القابض الباسط(সংকীর্ণকারী ও সম্প্রসারণকারী), الأَوَّلُ والآخِرُ তিনিই প্রথম এবং তিনিই সর্বশেষ, الظاهر والباطن (তিনিই প্রকাশমান এবং তিনিই অপ্রকাশমান ইত্যাদি।

সুতরাং এককভাবে শুধু الضَّار,الخَافِض , الآخر, الْمَانِع, الأول الظاهر, الباطن,, المُعِزُّ ইত্যাদি ব্যবহার করা জায়েয নেই। কুরআন বা হাদীছের কোথাও এগুলোর কোন একটিও এককভাবে ব্যবহৃত হয়নি। অনুরূপ আল্লাহ্ তা’আলার مُنْتَفِم তথা প্রতিশোধগ্রহণকারী নামটিও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত বর্ণিত হয়নি। যেমন আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ إِنَّا مِنْ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ‘‘নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা সিজদাঃ ২২) অথবা তা থেকে নির্গত সিফাতের দিকে ذو (যূ) শব্দ সম্বোধন ব্যতীত ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ আর আল্লাহ্ পরাক্রান্ত ও প্রতিশোধগ্রহণকারী।

কিন্তু আল্লাহর أفعال (কর্মসমূহ) দুই প্রকার। (১) এমন কর্ম, যা থেকে নাম নির্ণয় করা বৈধ। যেমন خلقَ يَخْلقُ (সৃষ্টি করা)। এ থেকে আল্লাহর الخالق (সৃষ্টিকর্তা) নাম বের করা হয়েছে। علم يعلم (জানা), এখান থেকেই العليم (সর্বজ্ঞ) নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। سمع يسمع (শ্রবণ করা)। এ থেকেই السميع (সর্বশ্রোতা) নাম গ্রহণ করা হয়েছে। এমনি আল্লাহর আরো অনেক ফেল বা কাজ রয়েছে, যা থেকে নামও গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকার ফেল থেকে সরাসরি এককভাবে নাম নির্ধারণ করা হলে আল্লাহর পূর্ণতা ও প্রশংসা বুঝায়।

(২) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আরেক প্রকার কাজ রয়েছে, যা থেকে সরাসরি আল্লাহর জন্য নাম গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন উদাহরণ স্বরূপ أراد الله (আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন) شاء الله(আল্লাহ চেয়েছেন), - এই দু’টি কাজের কথা বলা যেতে পারে। এই দু’টি ফেল থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য নাম গ্রহণ করে এভাবে বলা যাবেনা যে, المريد (ইচ্ছাকারী) এবং الشائي (ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকারী)। مكر (ষড়যন্ত্র করা), كيد (কৌশল করা) الخداع (ধোঁকা দেয়া) الاستهزاء (ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা) النسيان (ভুলে যাওয়া) ইত্যাদি ক্ষেত্রেও একই কথা। এগুলো থেকে আল্লাহর জন্য যথাক্রমে ماكر (ষড়যন্ত্রকারী), كائد (চক্রান্তকারী), مخادع (প্রতারক) এবং مستهزئ (বিদ্রুপকারী) নাম নির্ধারণ করা এবং সেগুলো আল্লাহর পবিত্র সত্তার জন্য ব্যবহার করা যাবেনা। এমনি আরো অনেক কাজ রয়েছে, যা থেকে নাম বের করা এবং তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা জায়েয নয়।