লগইন করুন
৮- ذكر رضى الله رضى الله وغضبه وسخطه وكراهيته في القرأن الكريم وأنه متصف بذلك
৮- কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন, ক্রোধান্বিত হন, ঘৃণা করেন এবং তিনি অপছন্দ করেন। সুতরাং তিনি এ সব বিশেষণে বিশেষিত:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قَالَ اللَّهُ هَٰذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
‘‘তখন আল্লাহ বলবেন, এটি এমন একটি দিন যেদিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকার করবে৷ তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে৷ এখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট৷ এটিই মহান সাফল্য’’। (সূরা মায়িদাঃ ১১৯) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا﴾
‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তিত হলো জাহান্নাম, তথায় সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তার উপর লানত করেছেন এবং তার জন্য প্রস্ত্তত করেছেন কঠিন শাস্তি’’। (সূরা নিসাঃ ৯৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ﴾
‘‘এই শাস্তির কারণ হলো, তারা এমন পন্থা অবলম্বন করেছে, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ এবং তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে পছন্দ করেনি৷ এ কারণে তিনি তাদের সব কাজ-কর্ম নষ্ট করে দিয়েছেন’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿فَلَمَّا آسَفُونَا انتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
‘‘অবশেষে তারা যখন আমাকে ক্রোধান্বিত করলো তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম, তাদের সবাইকে একসাথে ডুবিয়ে মারলাম’’। (সূরা যুখরুফঃ ৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ﴾
‘‘সত্যিই যদি তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে সে জন্য তারা কিছু প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতো৷ কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের অংশগ্রহণ অপছন্দ করেছেন। তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে’’। (সূরা তাওবাঃ ৪৬) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴾ ﴿كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ ‘‘আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় যে, তোমরা এমন কথা বলো, যা তোমরা নিজেরাই করোনা’’। (সূরা সাফঃ ৩)
ব্যাখ্যা: وَرَضُوا عَنْهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টঃ অর্থাৎ খালেসভাবে আল্লাহর জন্য তারা যেই আমল করেছে, তাতে আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তাদের আমলের কারণে আললাহ তাআলা তাদেরকে যেই নেয়ামত দান করেছেন, তাতে তারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টিই হচ্ছে সর্বোচ্চ নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
‘‘আল্লাহ তাআলা মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদেরকে তিনি এমন সব জান্নাত দান করবেন, যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে। তাদের জন্য আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এমন সব পবিত্র বাসগৃহের, যা থাকবে চিরসবুজ বাগানসমূহের মধ্যে। আল্লাহর সন্তুষ্টিই হচ্ছে সর্বাধিক বড়। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য’’। (সূরা তাওবাঃ ৭২) আল্লাহর প্রতি মুমিনদের সন্তুষ্টির ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকেই স্বীয় মর্যাদা অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবে। এমনকি তাদের প্রত্যেকেই ধারণা করবে, তাকে যা দেয়া হয়েছে, অন্য কাউকে তা দেয়া হয়নি।
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবেঃ মুমিনকে হত্যাকারীর ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এই কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, কাফেরকে হত্যা করলে এ ধরণের শাস্তি হবেনা। ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, -এই কথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, ভুলবশতঃ কোন মুমিনকে হত্যা করা হলে উক্ত শাস্তির সম্মুখীন হবেনা।[1] ইচ্ছাকৃত হত্যাকারী তাকে বলা হয়, যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে নিরপরাধ জেনেও এমন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে, যার আঘাতে সাধারণত মৃত্য সংঘটিত হওয়ার ধারণা করা হয়।
فَجَزَاؤُهُ তার শাস্তিঃ অর্থাৎ আখেরাতে তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। জাহান্নাম হচ্ছে পরকালের আগুনের শাস্তির একটি স্তরের নাম।
خَالِدًا فِيهَا তথায় সে চিরকাল থাকবেঃ অর্থাৎ সে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে। এখানে চিরকাল বলতে দীর্ঘ সময় অবস্থান উদ্দেশ্য।
وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেনঃ এই বাক্যটিকে এমন আরেকটি বাক্যের উপর আতফ করা হয়েছে, যা আয়াতের পূর্বাপর বর্ণনাপ্রসঙ্গ থেকেই বুঝা যায়। মূল বাক্যটি এ রকম হতে পারে যে, جعل جزاءه جهنم وغضب عليه অর্থাৎ তার শাস্তি স্বরূপ জাহান্নাম নির্ধারণ করেছেন এবং তার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন।
لعنه তার উপর লানত করেছেনঃ অর্থাৎ তাকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছেন। আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া এবং বিতাড়িত করাকে লা’নত বলা হয়।
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُএই শাস্তির কারণ হলোঃ অর্থাৎ এই আয়াতের পূর্বের আয়াতে কঠোরভাবে কাফেরদের জান কবয করার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা তাদের রূহ কবয করবে এবং তাদের মুখ ও পিঠের উপর আঘাত করবে। তার কারণ তারা এমন পন্থা অবলম্বন করেছে যা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। তারা এমনসব পাপাচার এবং কুপ্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে লিপ্ত ছিল, যা আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন। সেই সাথে তারা যেই ঈমান ও সৎ আমল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম, তাকে অপছন্দ করেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَلَمَّا آسَفُونَا অর্থাৎ তারা যখন আমাকে ক্রোধান্বিত করলো তখন انتَقَمْنَا مِنْهُمْ তাদের নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম। অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দিলাম। কঠিন শাস্তি দেয়াকে এখানে ইনতিকাম হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের অংশগ্রহণ অপছন্দ করেছেনঃ অর্থাৎ তোমাদের সাথে যোগ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তাদের বের হওয়াকে তিনি অপছন্দ করেছেন।
فَثَبَّطَهُمْ তিনি তাদেরকে শিথিল করে দিয়েছেনঃ অর্থাৎ তোমার সাথে বের হওয়া থেকে তাদেরকে আটকিয়ে দিয়েছেন। এই আটকিয়ে দেয়া ছিল আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণগত। যদিও শরীয়তগত দিক থেকে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন এবং বাহ্যিকভাবে তাদেরকে এই জন্য সক্ষমও করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এমন এক হিকমতের কারণে বের হওয়ার তাওফীক দেন নি, যা কেবল তিনিই অবগত আছেন।[2] আর তা তিনি পরের আয়াতেই উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে,
﴿لَوْ خَرَجُوا فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ﴾
‘‘যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না৷ তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো৷ আর তোমাদের লোকদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা তাদের কথা কান পেতে শোনে৷ আল্লাহ এ যালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন’’। (সূরা তাওবাঃ ৪৭)
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যেঃ অর্থাৎ ঘৃণার দিক দিয়ে উহা অত্যন্ত ভয়াবহ। المقت অর্থ হচ্ছে البغض তথা ঘৃণা করা। مقتا শব্দটি تمييز হিসাবে মানসুব হয়েছে। আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য যে, তোমরা এমন কথা বলো যা তোমরা নিজেরাই করোনা। অর্থাৎ তোমরা নিজেদের নফস্ থেকে ভাল কাজের অঙ্গীকার প্রদান করে থাকো, কিন্তু তোমরা সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করোনা।
এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, এক প্রকার লোক জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বে বলতো যে, আমাদের ইচ্ছা হয় যে, আল্লাহ তাআলা যদি সর্বাধিক প্রিয় আমল সম্পর্কে আমাদেরকে সংবাদ দিতেন, তাহলে আমরা উহা সম্পাদন করতাম। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে সংবাদ দিলেন যে, সর্বোত্তম আমল হচ্ছে আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং ঐ সমস্ত পাপিষ্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, যারা ঈমানের পথ প্রত্যাখ্যান করেছে ও ঈমান আনয়ন করতে অস্বীকার করেছে। অতঃপর যখন জিহাদের আয়াত নাযিল হলো, তখন মুমিনদের কেউ কেউ জিহাদ করাকে অপছন্দ করলো এবং উহা তাদের কাছে খুব কঠিন মনে হলো। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত নাযিল করলেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা নিজেরাই করোনা? (সূরা সাফঃ ২)উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ক্রোধান্বিত হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, অভিশাপ করা, প্রতিশোধ নেয়া, অপছন্দ করা, ঘৃণা করা আল্লাহ তাআলার অন্যতম সিফাত (বিশেষণ)। এই সবগুলোই সিফাতে ফেলিয়া তথা কর্মগত বিশেষণ। এই বিশেষণগুলো আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা এবং যেভাবে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই এগুলোকে নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। আহলে সুন্নাতের লোকেরা সেভাবেই তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য সাব্যস্ত করেন।[3]
অধিকাংশ আলেমের মতে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করা ভয়াবহ অপরাধ হলেও তা যেহেতু শির্ক নয়, সে হিসাবে ক্ষমা পেতে পারে। একশত মানুষকে হত্যাকারীর হাদীছকে তারা দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। (আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন)
[2] - সম্মানিত শাইখ এখানে খুব সংক্ষেপে আকীদাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তা ভাল করে বুঝার জন্য বলা যেতে পারে যে, সৃষ্টিজগতে যা আছে, তার সবই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ভাল বা মন্দ যেসব কাজ-কর্ম সম্পাদন করে, তারও স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। সে হিসাবে ভাল-মন্দ আল্লাহর ইচ্ছাতেই সৃষ্টি হয়েছে। কেননা আল্লাহর রাজ্যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু হয় বলে বিশ্বাস করা এবং আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আরো কোন সৃষ্টিকর্তা আছে বলে বিশ্বাস করা শির্ক। ভাল-মন্দ সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ভালটা গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন এবং খারাপ ও মন্দ পথ থেকে বিরত থাকার হুকুম করেছেন। মানুষ ঈমান আনয়ন করুক এবং সৎ আমল করুক,- আল্লাহ তাআলা এটাই পছন্দ করেন। মন্দ কাজের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা হলেও মানুষ তাতে লিপ্ত হোক,- এটি তিনি পছন্দ করেন না। সেই জন্যই নবী-রাসূলদের মাধ্যমে তিনি মানুষের জন্য হেদায়াত ও কল্যাণের পথ বাতলে দিয়েছেন এবং সেই পথে চলে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের আদেশ করেছেন। সেই সাথে নবী-রাসূলগণ যেসব রাস্তা মানুষকে গোমরাহী ও অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায় এবং যা তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা থেকেও সতর্ক করেছেন।
শুধু ভাল ও মন্দের পথ দেখিয়ে দিয়ে এবং নবী-রাসূল পাঠিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি; বরং আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় ভাল বা মন্দ নির্বাচন করার ইচ্ছা, শক্তি ও স্বাধীনতাও সৃষ্টি করেছেন। সে ইচ্ছা করলে নিজের জন্য হেদায়াতের পথ বেছে নিতে পারে আবার ইচ্ছা করলে স্বেচ্ছায় অকল্যাণের পথও বেছে নেয়। যে ব্যক্তি ভাল পথে তার ইচ্ছাকে পরিচালিত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে তাওফীক দেন এবং ভাল পথে চলতে সাহায্যও করেন। কিন্তু যে তা না করে নিজের ইচ্ছা ও স্বাধীনতার অপব্যবহার করে এবং মন্দ পথে নিজের ইচ্ছা ও শক্তিকে ধাবিত করে, আল্লাহ তাকে সেদিকেই ছেড়ে দেন এবং তাকে বাধ্য করে ভালোর দিকে নিয়ে আসেন না। বিষয়টি মানুষের বোধশক্তি ও বিবেক দ্বারা সমর্থিত ও বাস্তব। তবে মানুষের এই ইচ্ছা সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়; বরং আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তিনি ইচ্ছা করলেই মানুষের এই স্বাধীনতা খর্ব করতে পারেন। কারণ আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির উপর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যদি মানুষের এই স্বাধীনতাকে খর্ব করেন, তাতে সৃষ্টির উপর তার পরিপূর্ণ কুদরত (ক্ষমতা) তথা একচ্ছত্র আধিপত্য পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলেও তাঁর আরেকটি বিশেষণ আদল (ন্যায়বিচার) বাদ পড়ে যায়। তাই তিনি মানুষের কর্মে মানুষকে কিছুটা স্বাধীনতা দিয়েছেন। যাতে স্বেচ্ছায় ভাল আমল করলে তাকে বিনিময় দেয়া এবং নিজের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে মন্দ কাজে লিপ্ত হলে শাস্তি দেয়া যায়। এতে করে দু’টি সিফাতই তথা কুদরত ও আদল উভয়ই ঠিক থাকে এবং ভালর ফলস্বরূপ পুরস্কার দেয়া এবং মন্দ কাজের শাস্তি দেয়া আল্লাহর জন্য ইনসাফপূর্ণ হয়। (আল্লাহই ভাল জানেন)
[3]- উপরোক্ত আয়াতগুলো এবং আরো অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায় যে, আল্লাহর অন্যতম গুণ হচ্ছে তিনি মুমিন ও মুত্তাকীদের প্রতি সন্তষ্ট হন এবং যারা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাদের উপর রাগান্বিত হন। এগুলো আল্লাহর কর্মগত সিফাত তথা বিশেষণের অন্তর্ভূক্ত। তিনি যখন এবং যার উপর ইচ্ছা সন্তুষ্ট হন এবং যার উপর ইচ্ছা অসন্তষ্ট হন। তবে তাঁর সন্তষ্ট হওয়া এবং রাগান্বিত হওয়া মানুষের সন্তষ্ট হওয়া বা রাগান্বিত হওয়ার মত নয়, যেমনটি ধারণা করে থাকে কতিপয় বাতিল ফির্কার লোকেরা।