হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি উঁচু ও নিচু সনদ ইসলামহাউজ.কম
উঁচু ও নিচু সনদ

وَكُلُّ مَا قَلَّتْ رِجالُهُ عَلا |وَضِدُّهُ ذاكَ الذي قَدْ نَزَلا

“আর যেসব হাদিসের রাবি কম তাই উঁচু সনদ। আর তার বিপরীত ঐ সনদ, যা নিচে নেমেছে”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ধারাক্রমে হাদিসের ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ প্রকার ‘আলি ও নাযিল। হাদিসের এ দু’প্রকার সনদের সাথে সম্পৃক্ত।

عالي শব্দের আভিধানিক অর্থ উঁচু। সনদে রাবির সংখ্যা কম হলে লেখক থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত হাদিসের দূরত্ব কম হয়, ফলে সনদ উঁচু হয়। তাই কম রাবি বিশিষ্ট সনদকে ‘আলি’ বা উঁচু বলা হয়।

‘আলি’ সনদের পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যে হাদিসের সনদে রাবির সংখ্যা কম তাই উঁচু সনদ”।

মুহাদ্দিসগণ উঁচু সনদের জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা করতেন, কারণ এতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য হাসিল হয় এবং দ্রুত ও কম মাধ্যমে হাদিস শিখা যায়। তাই উঁচু সনদের জন্য প্রতিযোগিতা করা মুসলিম উম্মাহর অগ্রবর্তীদের সুন্নত। আমরা ‘মুয়াত্তা’ ইমাম মালিক-এ দেখি, ইমাম মালিক বলেন:

عن نافع، عن ابن عمر، عن النبي صلى الله عليه وسلم.

নাফে থেকে, তিনি ইব্‌ন ওমর থেকে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। এটা উঁচু সনদ। পক্ষান্তরে আমরা যদি ইব্‌ন আসাকের, অথবা ইমাম হাকেম, অথবা বায়হাকি প্রমুখদের সনদ দেখি, তাহলে রীতিমত ক্লান্ত হতে হয়। তাদের অনেক রাবির জীবনী পর্যন্ত জানা যায়নি, কারণ রাবির স্তর যত নিম্নে নেমেছে তাদের প্রতি মানুষের গুরুত্ব তত হ্রাস পেয়েছে। ইব্‌ন মা‘য়িন রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ‘কোন বস্তু আপনার নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বলেন: উঁচু সনদ ও নির্জন ঘর’।

‘আলি সনদ প্রধানত দু’প্রকার:

১. সংখ্যার বিবেচনায় উঁচু। ২. বিশেষণের বিবেচনায় উঁচু।

১. সংখ্যার বিবেচনায় উঁচু সনদ দু’প্রকার:

ক. সাধারণ উঁচু সনদ, খ. অপেক্ষাকৃত উঁচু সনদ।

ক. সাধারণ উঁচু সনদ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও গ্রন্থকারের মধ্যবর্তী রাবির সংখ্যা কম হলে সংখ্যার বিবেচনায় সাধারণ উঁচু সনদ বলা হয়। এ সনদ সহি হলে প্রকৃতপক্ষে এটাই উঁচু সনদ। এ সনদ দুর্বল হলেও উঁচু, যদি মাওদু‘ বা বানোয়াট না হয়, কারণ মাওদু‘ ও বানোয়াট হাদিস থাকা না-থাকা উভয় সমান।[1]

খ. অপেক্ষাকৃত উঁচু সনদ দু’প্রকার:

খ-১. কোনো ইমামের বিবেচনায় উঁচু, অর্থাৎ রাবি থেকে ইমামের দূরত্ব কম, যেমন শু‘বা অথবা মালিক অথবা সাওরি অথবা শাফে‘ঈ প্রমুখ ইমামগণ। এ ক্ষেত্রে বলা হয়: ইমাম যুহরি থেকে বুখারির সনদ উঁচু, ইমাম মালেক থেকে আহমদ ইব্‌ন হাম্বলের সনদ উঁচু ইত্যাদি। এতে সনদের শুরু থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত রাবির সংখ্যা কম বা বেশী দেখা হয় না, বরং ইমাম থেকে রাবির দূরত্ব দেখা হয়, ইমাম থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূরত্ব কম হোক বা বেশী হোক বিবেচ্য নয়। এতে উপরের ইমাম ও নিম্নের রাবি বা গ্রন্থকারের মধ্যবর্তী দূরত্বকে অনুরূপ অপর সনদের সাথে তুলনা করা হয়, অতঃপর অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যা বিশিষ্ট সনদকে ‘আলি বা উঁচু বলা হয়।

খ-২. লিখিত কোনো কিতাবে বর্ণিত হাদিসের বিবেচনায় উঁচু, যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিমের সহি; আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি ও ইব্‌ন মাজার সুনান এবং ইমাম আহমদ প্রমুখদের মুসনাদসমূহ। এখানে গ্রন্থকার থেকে পরবর্তী মুহাদ্দিসের দূরত্ব দেখা হয়, যেমন ইমাম বুখারি ও বায়হাকি। ইমাম বায়হাকি পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিস হয়ে কখনো বুখারির সমপর্যায়ের, কখনো তার উস্তাদের সমপর্যায়ের হয় হিসেবে কয়েক প্রকার উঁচু সনদ হয়। এগুলোকে সংখ্যার বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত উঁচু সনদের দ্বিতীয় প্রকার বলা হয়।[2]

২. বিশেষণের বিবেচনায় উঁচু সনদ দু’প্রকার:

ক. মৃত্যুর বিবেচনায় উঁচু, যদিও উভয়ের সনদে রাবির সংখ্যা সমান। যেমন একজন রাবি দু’জন শায়খ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, প্রথম শায়খের মৃত্যু (১৫০হি.), দ্বিতীয় শায়খের মৃত্যু (১৯০হি.), এখানে প্রথম শায়খের সনদ উঁচু ও দ্বিতীয় শায়খের সনদ নিচু। অনুরূপ দু’জন রাবি যদি দু’জন শায়খ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তাহলে যে শায়খের মৃত্যু আগে তার ছাত্রের সনদ উঁচু এবং যে শায়খের মৃত্যু পরে তার ছাত্রের সনদ নিচু।

খ. শ্রবণ করার বিবেচনায় উঁচু, যেমন সুফিয়ান সাওরি রাহিমাহুল্লাহ্ থেকে দু’জন রাবি হাদিস শ্রবণ করেছে, একজন শ্রবণ করেছে (১২০হি.) ও অপরজন শ্রবণ করেছে (১৫০হি.), এতে প্রথম রাবির সনদ উঁচু, কারণ তিনি আগে শ্রবণ করেছেন। দ্বিতীয় রাবির সনদ নিচু, কারণ তিনি পরে শ্রবণ করেছেন।

বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ বিশেষণের কারণে উঁচু সনদ দু’প্রকার:

১. বাহ্যিক বিশেষণের কারণে উঁচু সনদ, যেমন রাবি ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে রাবির সংখ্যা কম। সাধারণত উঁচু সনদ বলে এ প্রকারকে বুঝানো হয়। এ প্রকারের আলোচনা আমরা উপরে করেছি।

২. আভ্যন্তরীণ বিশেষণের কারণে উঁচু সনদ, যেমন রাবির আদালত ও দ্বাবতের সাথে সনদ মুত্তাসিল হলে সনদের মান বৃদ্ধি পায়। এ জাতীয় সনদ অভ্যন্তরীণ বিশেষণের কারণে উঁচু, যদিও এতে রাবির সংখ্যা বেশী। আদালত ও দ্বাবতের সাথে রাবির মধ্যে অন্যান্য বিশেষণ যেমন ফিকহ ইত্যাদি থাকলে সনদের মান আরো বৃদ্ধি পায় ও সনদ উঁচু হয়। এটাই শ্রেষ্ঠ ও উত্তম সনদ।

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মুবারক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “ছোট সনদ উঁচু নয়, বরং শ্রেষ্ঠ সনদই উঁচু”। অর্থাৎ সেকাহ রাবিদের নিচু সনদ, দুর্বল রাবিদের উঁচু সনদ থেকে উত্তম।[3]

আবু তাহের সিলাফি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আলেমদের থেকে হাদিস গ্রহণ করাই নিয়ম। আলেমদের নিচু সনদ জাহেলদের উঁচু সনদ থেকে উত্তম”।[4]

ইব্‌নুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “মুহাদ্দিসদের নিকট উঁচু সনদ প্রকৃত অর্থে উঁচু সনদ নয়, বরং বিশেষণের দিক থেকে উঁচু সনদ প্রকৃত অর্থে উঁচু”।[5]

লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ এখানে শুধু সংখ্যার বিবেচনায় ‘আলি ও নিচু সনদ উল্লেখ করেছেন। কারণ গ্রন্থকার ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত রাবির সংখ্যা কম হলে ভুলের স্থান কম হয়। আর সংখ্যা বাড়লে ভুলের স্থান বৃদ্ধি পায়। উদাহরণত একটি ঘটনা যায়েদ থেকে আমর, তার থেকে খালেদ বর্ণনা করল। এখানে ভুলের স্থান তিনটি অর্থাৎ যায়েদ, আমর ও খালেদ। তাদের কারো থেকে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই ঘটনা যায়েদ থেকে আমর, তার থেকে খালেদ, তার থেকে নাসির বর্ণনা করল। এখানে ভুলের স্থান চারটি অর্থাৎ যায়েদ, আমর, খালেদ ও নাসির। অনুরূপভাবে কোনো সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুহাদ্দিসের মধ্যবর্তী রাবির সংখ্যা তিন হলে ভুলের স্থান তিনটি, রাবির সংখ্যা চার হলে ভুলের স্থান চারটি। এ হিসেবে প্রথমটি ‘আলি বা উঁচু সনদ, কারণ এখানে ভুলের সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয়টি নাযিল বা নিচু সনদ, কারণ এখানে ভুলের সম্ভাবনা বেশী।

সংখ্যার বিবেচনায় সনদ ‘আলি হলে হাদিস সহি হওয়া জরুরি নয়, কারণ কম রাবির মধ্যে কেউ দুর্বল থাকতে পারে, আবার রাবির সংখ্যা অধিক হলে দ্বা‘ঈফ হওয়া জরুরি নয়, কারণ তাদের সবাই সেকাহ হতে পারে। অতএব রাবির সংখ্যা মূল বিষয় নয়, বরং রাবিদের গুণাগুণ মূল বিষয়।

উঁচু সনদ হাসিল করা সুন্নত:

ইমাম হাকেম প্রমুখ বলেছেন: “উঁচু সনদ হাসিল করা মোস্তাহাব। তিনি দলিল হিসেবে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে দিমাম ইব্‌ন সা‘লাবাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ঘটনা সম্বলিত হাদিস পেশ করেছেন। দিমাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেছিল: আপনার দূত আমাদের বলেছে, আল্লাহ আমাদের উপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন, আল্লাহ কি আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন: ‘হ্যাঁ’। এ হাদিস প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসগণ বলেন: যদি উঁচু সনদ তলব করা মোস্তাহাব না হত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই দিমামের প্রশ্ন করা অপছন্দ করতেন এবং তাদেরকে প্রেরিত দূতের সংবাদে সন্তুষ্ট থাকার নির্দেশ দিতেন”।[6]

সাহাবি তামিম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি ঘটনা বলেছিল, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে তা বলছিলেন, দেখেন তামিম মসজিদের কর্নারে বসে আছে, তিনি বললেন:

«يا تميم، حدث الناس بما حدثتني...»

“হে তামিম, তুমি আমাকে যা বলেছ, মানুষদের তা বল”। সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: তামিমকে সরাসরি ঘটনা বর্ণনার নির্দেশ দেওয়া উঁচু সনদ মোস্তাহাবের পক্ষে একটি দলিল।[7] এ থেকে প্রমাণ হয়, বিনা মাধ্যম কিংবা কম মাধ্যমে হাদিস শ্রবণ করা উত্তম।

হাকেম রাহিমাহুল্লাহ্ উচু সনদ মোস্তাহাবের পক্ষে সাহাবি ও তাবে‘ঈদের সফরকে পেশ করেছেন, যেমন আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি হাদিসের জন্য ‘উকবা ইব্‌ন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট মিসরে যান, যে হাদিস ‘উকবা ও তিনি ব্যতীত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি শ্রবণকারী কেউ অবশিষ্ট ছিল না। তিনি ‘উকবাকে বলেন: “তুমি একটি হাদিস শ্রবণ করেছ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সে হাদিস শ্রবণকারী কেউ বেচে নেই, অতঃপর তিনি তাকে হাদিসটি শুনান”। এ হাদিস উদ্ধৃত করে ইমাম হাকেম রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ সাথীত্ব ও তার থেকে অধিক হাদিস শ্রবণ করা সত্যেও সমবয়সী এক সাথীর নিকট হাদিস শ্রবণ করার জন্য দীর্ঘ সফর করেছেন, অথচ তিনি সফর না করে তার কোনো ছাত্র থেকে শ্রবণ করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ছিল। অনুরূপ সায়িদ ইব্‌ন মুসাইয়্যেব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি একটি হাদিসের জন্য কয়েক দিন ও কয়েক রাত সফর করি”।[8]

মুদ্দাকথা: পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ইমামের নিকট উঁচু সনদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “উঁচু সনদ তলব করা পূর্ববর্তীদের সুন্নত, কারণ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদের সাথীগণ কুফা থেকে মদিনায় গিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে শিখতেন ও তার থেকে হাদিস শুনতেন”। মুহাম্মদ ইব্‌ন আসলাম আত-তুসী বলেন: “সনদের নৈকট্য আল্লাহর নৈকট্য”। ইব্‌ন মাদিনি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সনদের দূরত্ব অশুভ লক্ষণ”।[9] ইয়াহইয়া ইব্‌ন মা‘য়িন বলেন: “নিচু সনদ চেহারায় খতের ন্যায়”।[10]

জ্ঞাতব্য: সর্বাবস্থায় উঁচু সনদ অন্বেষণ করা প্রশংসনীয় নয়, উঁচু সনদ সহি হলে প্রশংসনীয়, নচেৎ দুর্বল ও মিথ্যাবাদী রাবির উঁচু সনদ অপেক্ষা সেকাহ রাবির নিচু সনদ অধিক উত্তম। ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যখন দেখ কোনো মুহাদ্দিস এ জাতীয় [দুর্বল] রাবিদের উঁচু সনদের কারণে খুশি হয়, মনে রেখ সে তখনো মূর্খ”। ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ্ দুর্বলতা সত্যেও উঁচু সনদের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে তিরস্কার করেছেন। ইয়াহইয়া ইব্‌ন মা‘য়িন রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “দুর্বল রাবির উঁচু সনদ অপেক্ষা সেকাহ রাবির নিচু সনদ অধিক উত্তম”। শু‘বা ও মি‘সআর বলেন: “নিশ্চয় [দুর্বল রাবির উঁচু সনদ বিশিষ্ট] এসব হাদিস তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও সালাত থেকে বিরত রাখে, তবুও তোমরা বিরত হবে না”।[11]

তাদের এসব বাণীর অর্থ মূর্খ মুহাদ্দিসদের নিন্দা করা, যারা দুর্বল রাবিদের উঁচু সনদ অন্বেষণ করে। দুর্বল সনদের জন্য দীর্ঘপথের সফর মূলত ব্যক্তিকে আল্লাহর যিকির ও সালাত থেকে বঞ্চিত করে, কারণ সফর শাস্তির একটি অংশ। সফরে অনেক নফল ছুটে যায়, সফরের কারণে কখনো অধীনদের হক বিনষ্ট হয়, কখনো অনুত্তম বস্তুর জন্য উত্তম বস্তু হাত ছাড়া হয়। তাই নিচু সনদ হলেই দোষণীয় নয়, বরং সেকাহ রাবির নিচু সনদ দুর্বল রাবির উঁচু সনদ অপেক্ষা উত্তম।

>
[1] ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “মাওদু থাকা না-থাকা উভয় সমান। দেখুন: নুযহাহ: (পৃ.১৫৬)

[2] হাদিসের এ প্রকার চার ভাগে ভাগ হয়: মুওয়াফাকাহ, বদল বা ইবদাল, মুসাওয়াত ও মুসাফাহাহ। প্রাথমিক গ্রন্থ হিসেবে এসব প্রকারের সংজ্ঞা পরিত্যাগ করলাম।

[3] আল-ইকতিরাহ:(১৭০)

[4] আল-তাদরিব:(২/১৭২)

[5] দেখুন: মুকাদ্দামাহ: (পৃ.২৬২)

[6] মারেফাতু উলুমিল হাদিস: (পৃ.৫-৬)

[7] দেখুন: ফাতহুল মুগিস: (৩/৩৩৩)

[8] দেখুন: “আল-মারেফা” গ্রন্থে: (পৃ.৭-৮) হাকেম রহ. আলোচনা।

[9] এসব বাণীর জন্য দেখুন: “আল-জামে” লিল খতিব: (১/১৮৪-১৮৯)

[10] “আল-জামে” লিল খতিব: (১/১৮৫)

[11] দেখুন আল-জাওয়াহিরুস সুলাইমানিয়্যাহ: (১৯৯-২০০)