লগইন করুন
ছোট সংসারে স্ত্রী অনেক বাধ্যবাধকতার ভিতর খেজুর বৃক্ষের শাখার মত স্বামীর সাথে অতি নিকটে অবস্থান করে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
«الدنيا كلها متاع، وخير متاع الدنيا الزوجة الصالحة».
দুনিয়ার পূর্ণটাই সম্পদ [স্বরূপ] তবে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হল: সতী স্ত্রী”।[1]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উত্তম আচরণ ও তিনি মনোরম দাম্পত্য জীবনের অধিকারী হওয়ার প্রমাণ বহন করে, উম্মুল মু‘মেনীন আয়েশার রাদিয়াল্লাহু আনহার নামকে আদরাচ্ছলে সংক্ষিপ্ত করে আহ্বান করা এবং তাকে এমন খবর পরিবেশন করা যাতে তার হৃদয় যেন তাঁর দিকে উড়ে যায়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يومًا: «يا عائش! هذا جبريل يقرئك السلام».
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বলেন: হে আয়েশ! [সংক্ষিপ্তাকারে] জিব্রাঈল [আলাইহিস সালাম] এই মাত্র তোমাকে সালাম দিয়ে গেল”।[2]
মুসলিম উম্মতের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিপূর্ণ চরিত্র, সর্বোত্তম আদর্শ ও সুমহান মর্যাদার অধিকারী। দাম্পত্য জীবনের সর্বোত্তম নমুনা এবং নরম প্রকৃতি স্ত্রীর প্রকৃত আবেগ, অনুভূতি ও চাহিদা সম্পর্কে সম্যক অভিহিত।
তিনি স্ত্রীদেরকে এমন অবস্থান প্রদান করেন যা প্রত্যেক নারীই পছন্দ করবে, যার ফলে স্বামীর নিকট সে তার অর্ধাঙ্গিনীতে পরিণত হতে পারে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«كنت أشرب وأنا حائض، فأناوله النبي - صلى الله عليه وسلم -، فيضع فاه على موضع في فيشرب، وأتعرق العرق فيتناوله ويضع فاه على موضع في».
আমি ঋতু স্রাবের অবস্থায় কিছু পান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম, আর তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রেখে পান করতেন এবং আমি হাড়ের মাংস খেয়ে শেষ করলে তিনি তা গ্রহণ করে আমার মুখ লাগানোর স্থানেই মুখ লাগাতেন”।[3]
তিনি কোন ক্রমেই তেমন ছিলেন না, যা মুনাফিকরা ধারণা পোষণ করে থাকে এবং প্রাচ্যবিদরা যে সমস্ত মিথ্যা, অলীক অপবাদ ও বাতিল দাবী করে থাকে। বরং তিনি দাম্পত্য জীবনে সর্বোত্তম ও সহজ-সরল পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
আয়েশ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«إن النبي - صلى الله عليه وسلم - قبل امرأة من نسائه ثم خرج إلى الصلاة ولم يتوضأ».
নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন এক স্ত্রীকে চুমু দিয়ে অজু না করেই নামাযের জন্য মসজিদের দিকে বের হয়ে যেতেন”।[4]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সুমহান মর্যাদা ও সসম্মান অনেক ক্ষেত্রেই প্রকাশ করেছেন। এই যে দেখুন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক প্রশ্নের উত্তর প্রদান করত: তাকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন: স্ত্রীর ভালবাসা, জ্ঞানী, ন্যায়পরায়ণ ও সম্মানিত ব্যক্তিকে কোন ক্রমেই অপমানিত করবে না।
আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
أنه قال لرسول الله - صلى الله عليه وسلم -: أي الناس أحب إليك؟ قال: «عائشة».
তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার নিকট কোন ব্যক্তি সব চেয়ে প্রিয়? তিনি উত্তরে বলেন: আয়েশা।[5]
যে ব্যক্তি দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে চায় সে যেন মুমিন জননী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর এ হাদিসটি ভাল করে ভেবে দেখে: তাতে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«كنت أغتسل أنا ورسول الله - صلى الله عليه وسلم - من إناء واحد».
আমি ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম।[6]
এ মুসলিম জাতির নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন ঘটনা অতিবাহিত হতে দেননি যার মাধ্যমে তিনি বৈধ পন্থায় তাঁর স্ত্রীর মধ্যে আনন্দ ও মজা জাগিয়ে তোলেননি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
خرجت مع رسول الله - صلى الله عليه وسلم - في بعض أسفاره، وأنا جارية لم أحمل اللحم ولم أبدن، فقال للناس: «تقدموا» فتقدموا ثم قال: «تعالي حتى أسابقك» فسابقته فسبقته، فسكت عني حتى حملت اللحم، وبدنت وسمنت وخرجت معه في بعض أسفاره فقال للناس «تقدموا» ثم قال: «تعالي أسابقك» فسبقني، فجعل يضحك ويقول: «هذه بتلك».
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোন ভ্রমণে বের হলাম, সে সময় আমি অল্প বয়সী ও শারীরিক গঠনের দিক দিয়েও পাতলা ছিলাম, তখনো মোটা তাজা হইনি। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। তারা যখন সামনের দিকে অগ্রসর হল, তখন তিনি আমাকে বললেন: “এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি, অত:পর আমি তাঁর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলাম ও আমি তার উপর বিজয় লাভ করলাম। তিনি সে দিন আমাকে কিছুই বললেন না। যখন আমি শারীরিক দিক দিয়ে মোটা হলাম ও ভারী হলাম, ও তাঁর সাথে কোন এক সফরে বের হলাম। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও। তারা যখন সামনে অগ্রসর হল: তখন তিনি আমাকে বললেন: এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি, এবারের প্রতিযোগিতায় তিনি আমার আগে চলে গিয়ে হাসতে হাসতে বললেন: আজকের জয় সেই দিনের প্রতিশোধ”।[7]
এ ছিল সুন্দর চিত্ত বিনোদন ও স্ত্রীর ব্যাপারে অসীম গুরুত্বারোপ। সাহাবিদেরকে আগে পাঠিয়ে স্বীয় স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করে তার হৃদয় আনন্দিত করা। তারপর পূর্বের বিনোদনের ইতিহাস টেনে আজকের বিজয়ের তুলনা করে বলেন: আজকের বিজয় পূর্বের প্রতিশোধ।
আল্লাহর এই প্রশস্ত জমিনে আজ যারা ভ্রমণ করে এবং জাতির সরদারের অবস্থার প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে; যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আচরণের দ্বারা আনন্দিত হয়। যিনি মহা সম্মানিত নবী, বিজয়ী নেতা, কুরাইশ ও বনি হাশেম সন্তান।
কোন এক বিজয়ের দিন, তিনি বিজয়ী বেশে এক মহা সেনা অভিযানের নেতৃত্ব প্রদান করত: প্রত্যাবর্তন করছেন। এমতাবস্থায়তেও তিনি ছিলেন স্বীয় স্ত্রী মু’মিন জননীদের সাথে মুহাব্বত ও নমনীয়তার মূর্ত প্রতীক। অভিযানের নেতৃত্ব, দীর্ঘ সফর, যুদ্ধের মহা বিজয় তাঁকে ভুলিয়ে দেয়নি যে, তাঁর সাথে রয়েছে দুর্বল স্ত্রী জাতি, যাদের তাঁর সুকোমল পরশ ও আন্তরিক ফিস ফি-সানির অধিকার ও প্রয়োজন রয়েছে। যা তাদের দীর্ঘ রাস্তার কষ্ট ও সফরের ক্লান্তি দূর করবে।
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বারের যুদ্ধ শেষে ফিরছিলেন তখন সাফিয়া বিনতে হুয়াই রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিবাহ করেন, এবার যে উটের পিঠে সাফিয়া আরোহণ করবেন তার চার দিকে ঘুরে পর্দার জন্য কাপড় লাগানোর পর তিনি উটের পার্শে বসে তাঁর হাটুকে খাড়া করে দিলেন। অত:পর সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় পা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুতে রেখে উঠে আরোহণ করেন।
সে আকৃষ্ট-কারী দৃশ্যটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিনয়ের বহি:প্রকাশ।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বিজয়ী কমান্ডার, ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দূত বা রাসূল, তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, স্ত্রীকে সাহায্য করা, তার সাথে বিনয়ী হওয়া, তাদের কাজে সহায়তা এবং তাদেরকে সুখ ও মজা প্রদানে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার কোন কমতি হবে না।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতদেরকে যে সব অসীয়ত করেন তন্মধ্যে একটি হল:
«ألا واستوصوا بالنساء خيرًا».
ওহে আমার উম্মত! তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে”।[8]
[2] বুখারী, হাদিস: ৩৭৬৮; মুসলিম, হাদিস: ৮৯৭৫
[3] মুসলিম, হাদিস: ৩০০
[4] আবু দাউদ, হাদিস: ১৭৯; আহমদ, হাদিস: ২৫৭৩২
[5] বুখারী, হাদিস: ৩৬৬২; মুসলিম, হাদিস: ২৩৮৪
[6] বুখারী, হাদিস: ২৬৩
[7] আহমাদ, হাদিস: ২৬২৭৭
[8] বুখারি, হাদিস: ৫১৮৬; মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৮