রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের] গৃহে একদিন বিষয়সূচী এবং বিস্তারিত ইসলামহাউজ.কম
গৃহ অভ্যন্তর

 আমাদেরকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, এখন আমরা মুসলিম উম্মাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীর ভিতর অবস্থান নিয়েছি, ভাল করে সব কিছু অবলোকন করার জন্য।

এখন আমাদের সামনে সাহাবায়ে কিরাম তাঁর বাড়ীর বিছানা, আসবাব পত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র সম্পর্কে অবহিত করবেন।

আমরা সাধারণত জানি যে, কারো ঘর ও কক্ষের দিকে তাকানো বাঞ্ছনীয় নয়, তবে আদর্শ শিক্ষার জন্য এ সম্মানিত ঘরের কিছু আমরা অবলোকন করব। এ ঘর যার ভিত্তি তো বিনয় এবং মূলধন হল ঈমান, আপনি কি দেখছেন না যে, এ ঘরের দেয়ালে কোন প্রকার জীবের ছবি নেই, যা আজকের দিনে অনেক লোক লটকিয়ে থাকে। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন:

«لا تدخل الملائكة بيتًا فيه كلب ولا تصاوير»،

“যে বাড়ীতে কোন প্রকার জীবের ছবি ও কুকুর থাকে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না”।[1]

এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কিছুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন।

সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন:

أخرج إلينا أنس بن مالك قدح خشب، غليظًا مضببًا بحديد فقال: يا ثابت هذا قدح رسول الله - صلى الله عليه وسلم -. وكان - صلى الله عليه وسلم - يشرب فيه الماء والنبيذ والعسل واللبن.

“একদা আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সামনে লোহার পাত দিয়ে বাঁধাই করা কাঠের তৈরি এক পাত্র নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললেন: হে সাবেত! এ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পাত্র”। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পাত্রে পানি, খেজুর সরবত, মধু ও দুধ পান করতেন[2]।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - كان يتنفس في الشراب ثلاثًا». يعني: يتنفس خارج الإناء.


“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার সময় পাত্রের বাইরে তিনবার শাস ফেলতেন”।[3]

ونهى عليه الصلاة والسلام «أن يتنفس في الإناء أو ينفخ فيه».

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার সময় পাত্রের ভিতর শাস ফেলতে ও ফু দিতে নিষেধ করেন।[4]

আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে লৌহ-বর্মটি জিহাদের ময়দানে, যুদ্ধাভিযান ও অন্যান্য কঠিন মূহুর্তে ব্যবহার করতেন তা হয়তো বর্তমানে তার ঘরে নেই। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ‘সা’ জবের বিনিময় এক ইয়াহুদীর নিকট সেটি বন্ধক রেখেছিলেন। যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন:

ومات الرسول - صلى الله عليه وسلم - والدرع عند اليهودي.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু বরণ করেন তখন তার লৌহ-বর্মটি ইয়াহুদীর নিকট বন্দক ছিল।[5]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারকে আতঙ্কে ফেলার জন্য কখনো হঠাৎ করে ঘরে প্রবেশ করতেন না। বরং তিনি পরিবারকে পূর্বে অবহিত করেই ঘরে প্রবেশ করতেন এবং প্রবেশ করার সময় তাদের প্রতি সালাম দিতেন।[6]

উজ্জ্বল দৃষ্টি ও উদার হৃদয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদিসটি অনুধাবন করুন তিনি বলেন,

«طوبى لمن هدي إلى الإسلام، وكان عيشه كفافًا وقنع»،

“সৌভাগ্য তো ইসলামের পথে হিদায়েত প্রাপ্তদের জন্য, এমতাবস্থায় তার জীবনোপকরণও যথেষ্ট ও তুষ্টি পূর্ণ”।[7]

আরও একটি মহান হাদিসের দিকে কর্ণপাত করুন, যাতে তিনি বলেন:

«من أصبح آمنًا في سربه معافى في جسده، عنده قوت يومه، فكأنما حيزت له الدنيا بحذافيرها».

“যে ব্যক্তি স্বীয় গোত্রে নিরাপদে বসবাস করেছে, শারীরিক ভাবেও সে সুস্থ ও তার নিকট রয়েছে সে দিনটির পরিপূর্ণ খাবার, তাহলে লোকটি এমন যেন, সারা দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও তার মুঠোই রয়েছে”।[8]

[1] বুখারী, হাদিস: ৫৯৪৯
[2] তিরমিযী
[3] বুখারী, হাদিস: ৬৫৩১  মুসলিম, হাদিসি: ২০২৮
[4] তিরমিযী, হাদিস: ১৯০৭
[5] বুখারী ও মুসলিম
[6] যাদুল মা’আদ ২/৩৮১
[7] তিরমিযী, হাদিস: ২৩৪৯
[8] তিরমিযী, হাদিস: ২৩৪৬