লগইন করুন
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَفْدُ اللهِ ثَلاَثَةٌ الْغَازِيْ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যাত্রী। গাযী, হাজী ও ওমরা পালনকারী’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২৫৩৭; বাংলা মিশকাত হা/২৪২২)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যারা হজ্জ ও ওমরা পালন করে তারা আল্লাহর দল বা দূত কিংবা আল্লাহর পথের যাত্রী।
عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِّنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُهُ فَقُلْتُ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّكَ تُزَاحِمُ عَلَى الرُّكْنَيْنِ زِحَامًا مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِّنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَاحِمُ عَلَيْهِ فَقَالَ إِنْ أَفْعَلْ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ مَنْ طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ أُسْبُوْعًا فَأَحْصَاهُ كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ لَا يَضَعُ قَدَمًا وَلَا يَرْفَعُ أُخْرَى إِلَّا حَطَّ اللهُ عَنْهُ خَطِيْئَةً وَكَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً-
তাবেঈ ওবায়দ ইবনু ওমায়ের হতে বর্ণিত আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানীর প্রতি যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের অপর কাউকে তার প্রতি এরূপ ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখিনি। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি যদি এরূপ করি, তাতে দোষের কিছু নেই। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)কে বলতে শুনেছি, তাদের স্পর্শ করা গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসূল (ছাঃ)-কে আরো বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর চার দিকে সাত পাক ঘুরবে এবং তা পূর্ণ করবে, তার জন্য গোলাম আযাদের সমপরিমাণ নেকী হবে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি তাওয়াফের সময় যতবার পা উঠাবে বা নামাবে ততবার আল্লাহ একটি গুনাহ ক্ষমা করবেন ও একটি নেকী নির্ধারণ করবেন’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, আলবানী মিশকাত হা/২৫৮০; বাংলা মিশকাত হা/২৪৬৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, হাজারে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয়। তাওয়াফের সময় প্রত্যেক পদক্ষেপে একটি করে গুনাহ মাফ হয় এবং একটি করে নেকী লেখা হয়।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الحَاجُّ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابُوْهُ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوْهُ غَفَرَ لَهُمْ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘হজ্জ ও ওমরাকারীগণ হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতী যাত্রীদল। অতএব তারা যদি তাঁর কাছে দো‘আ করেন, তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর নিকট ক্ষমা চান, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন’ (ইবনু মাজাহ, বাংলা মিশকাত হা/২৪২১)।
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُهِلُّ مُلَبِّدًا يَقُوْلُ لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَا يَزِيْدُ عَلَى هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মাথার কেশ জড়ান অবস্থায় বলতে শুনেছি,لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ ‘প্রভু হে! আমি তোমার খেদমতে দন্ডায়মান আছি, আমি তোমার খেদমতে দন্ডায়মান আছি, আমি তোমার খেদমতে দন্ডায়মান আছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার খেদমতে দন্ডায়মান আছি, সমস্ত প্রশংসা ও সমস্ত নে‘মত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’। তিনি এই কয়টি কথার অধিক কিছু বলেননি (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/২৪২৬)।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّيْ إِلَّا لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِيْنِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الْأَرْضُ مِنْ هَاهُنَا وَهَاهُنَا-
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘যে কোন মুসলমান তালবিয়া বলে, তার সাথে তালবিয়া বলে যা তার ডানে-বামে আছে, পূর্ব-পশ্চিমের সীমা পর্যন্ত-পাথর, গাছ বা মাটির ঢেলা’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বাংলা মিশকাত হা/২৪৩৫)।
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় নয় বছর অতিবাহিত করলেন হজ্জ না করে, অতঃপর দশম বছর লোকের মধ্যে ঘোষণা করা হল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ বছর হজ্জে যাবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোক আগমন করল। অতঃপর আমরা তাঁর সাথে হজ্জে রওয়ানা হলাম এবং যখন যুলহুলায়ফা পর্যন্ত পৌঁছলাম, তখন (আবু বকরের স্ত্রী) আসমা বিনতু উমাইস মুহাম্মাদ ইবনু আবু বকরকে প্রসব করলেন। অতএব আসমা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন যে, এখন আমি কি করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি গোসল কর এবং কাপড়ের নেকড়া দ্বারা কষে লেঙ্গুট পর, তৎপর এহরাম বাঁধ। জাবের (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে (দুই রাক‘আত) ছালাত পড়লেন, অতঃপর কাছওয়া উটনীতে সওয়ার হলেন। অবশেষে যখন বায়দা নামক স্থানে উটনী তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত তালবিয়া পড়িলেন- لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ
জাবের (রাঃ) বলেন, তখন আমরা হজ্জ ছাড়া কিছুর নিয়ত করিনি, আমরা ওমরের কথা জানতাম না। অবশেষে যখন আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহর হেরেমে পৌঁছলাম, তিনি ‘হাজারে আসওয়াদে’ হাতে স্পর্শ করে চুমা দিলেন, অতঃপর সাত পাক বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণ করলেন; তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করলেন এবং চার পাক স্বাভাবিকভাবে চললেন। অতঃপর ‘মাকামে ইবরাহীম’-এর দিকে অগ্রসর হলেন এবং কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘এবং মাকামে ইবরাহীমকে ছালাতের স্থানে পরিণত কর’। এ সময় রাসূল (ছাঃ) দু’রাক‘আত ছালাত পড়লেন মাকামে ইবরাহীমকে নিজের ও বায়তুল্লাহর মধ্যখানে রেখে। অপর বর্ণনায় আছে, ঐ দুই রাক‘আতে রাসূল (ছাঃ) সূরা ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ও ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ পড়েছিলেন। অতঃপর হাজারে আসওয়াদের দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাকে স্পর্শ করে চুমা দিলেন। তৎপর দরজা দিয়ে সাফা পর্বতের দিকে বের হলেন এবং যখন সাফার নিকটে পৌঁছলেন। তিনি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত’। আর বললেন, আমি সেটা থেকে শুরু করব, যেখান থেকে আল্লাহ শুরু করেছেন। সুতরাং তিনি সাফা হতে আরম্ভ করলেন এবং তার উপরে চড়লেন, যাতে তিনি আল্লাহর ঘর দেখতে পেলেন। তখন তিনি ক্বিবলা অর্থাৎ আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে আল্লাহর তাওহীদের ঘোষণা করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই শাসন এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা, তিনি হচ্ছেন সর্বশক্তিমান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাকী সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন। এটা তিনি তিনবার বললেন এবং এদের মধ্যখানে কিছু দো‘আ করলেন। অতঃপর সাফা হতে অবতরণ করলেন এবং ত্বরিতে মারওয়া অভিমুখে হেঁটে চললেন, যতক্ষণ না তাঁর পা উপত্যকা সমতলে গিয়ে ঠেকল। অতঃপর তিনি দৌড়িয়ে চললেন, যতক্ষণ না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। যখন চড়াইতে উঠলেন স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চললেন, যতক্ষণ না মারওয়া পৌঁছলেন। তথায় তিনি ঐরূপই করলেন, যেরূপ সাফার উপর করেছিলেন। এমনকি যখন মারওয়ার শেষ চলা সমাপ্ত হল, মারওয়ার উপর দাঁড়িয়ে লোকদের সম্বোধন করলেন, আর লোকেরা ছিল তখন নীচে। তিনি বললেন, যদি আমি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝতে পারতাম, যা আমি পরে বুঝতে পেরেছি, তাহলে কখনও আমি কুরবানীর পশু সঙ্গে আনতাম না এবং একে ওমরার রূপ দান করতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন এহরাম খুলে ফেলে এবং একে ওমরার রূপ দান করে। এসময় সুরাকা ইবনু মালেক ইবনে জুশুম দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এটা কি আমাদের এ বছরের জন্যই, না চিরকালের জন্য? তখন রাসূল (ছাঃ) স্বীয় হাতের আঙ্গুল সমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে দু’বার বললেন, ওমরা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করল। না, বরং চিরকালের জন্য, চিরকালের জন্য।
এ সময় আলী (রাঃ) ইয়ামন হতে (তিনি তথায় বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন) নবী করীম (ছাঃ)-এর কুরবানীর পশু নিয়ে আসলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এহরাম বেঁধেছিলে কিসের? তিনি বললেন, আমি এরূপ বলেছি, হে আল্লাহ! এহরাম বাঁধছি যেভাবে এহরাম বেঁধেছেন তোমার রাসূল। তখন রাসূল বললেন, তবে তুমি এহরাম খুল না। কেননা আমার সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে। জাবের বলেন, যে সকল পশু আলী ইয়ামন হতে এনেছিলেন, আর যা নবী করীম (ছাঃ) নিজে সাথে এনেছিলেন তা একত্রে হল একশত। জাবের বলেন, সুতরাং নবী করীম (ছাঃ) এবং যাদের সাথে তাঁর ন্যায় কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত সবাই এহরাম খুলে ফেলল এবং মাথা ছাঁটাল। অতঃপর যখন (৮ যিলহজ্জ) তারবিয়ার দিন আসল, (যারা এহরাম খুলে ফেলেছিলেন তারা) সবাই নতুনভাবে এহরাম বাঁধলেন এবং মিনার দিকে রওয়ানা হলেন এবং নবী করীম (ছাঃ)ও সওয়ার হয়ে গেলেন এবং তথায় যোহর-আছর, মাগরিব-এশা ও ফজরের ছালাত পড়লেন। অতঃপর তথায় সামান্য সময় অপেক্ষা করলেন, যাতে সূর্য উঠল। এসময় তিনি হুকুম করলেন, কেউ গিয়ে যেন নামিরায় তাঁর জন্য একটি পশমের তাঁবু টানায় এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেদিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তখন কুরাইশরা জাহেলিয়াতে করত (এবং সাধারণের সাথে আরাফাতে অবস্থান করবেন না, যাতে তাদের মান হানি হয়); কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকলেন, যতক্ষণ না আরাফার নিকটে গিয়ে পৌঁছলেন এবং দেখলেন, তথায় নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটান হয়েছে। সুতরাং তিনি সেখানে অবতরণ করলেন (ও অবস্থান গ্রহণ করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে পড়ল তিনি তাঁর কাছওয়া উটনী সাজাতে আদেশ দিলেন, আর তা সাজানো হল এবং তিনি ‘বাতনে ওয়াদী’ বা আরানা উপত্যকায় পৌঁছলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন-
‘তোমাদের একের জান ও মাল তোমাদের অপরের প্রতি (সকল দিনে, সকল মাসে, সকল স্থানে) হারাম, যেভাবে এদিনে, এ মাসে, এ শহরে হারাম। শুন, মূর্খতার যুগের সকল অপকর্ম রহিত হল এবং মূর্খতার যুগের রক্তের দাবীসমূহও রহিত হল, আর আমাদের রক্তের দাবীসমূহের যে দাবী আমি প্রথমে রহিত করলাম, তা হল (আমার নিজ বংশের আয়াশ) ইবনু রবী‘আ ইবনে হারেছের রক্তের দাবী। সে বনী সা‘দ গোত্রে দুধপান অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় হুযাইল ইবনু হারেছের লোকেরা তাকে হত্য করে। এভাবে মূর্খতার যুগের সুদ রহিত হল, আর আমাদের সুদসমূহের যে সুদ আমি প্রথমে রহিত করলাম, তা হল (আমার চাচা) আববাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবের সুদ। তা সমস্ত রহিত হল।
দ্বিতীয় কথা হল, ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ আল্লাহর জামানতে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাদের গুপ্ত অঙ্গকে হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের হক হল, তারা যেন তোমাদের জেনান মহলে অপর কাউকেও যেতে না দেয়, যা তোমরা অপছন্দ করে থাক। যদি তারা তা করে, তবে তাদেরকে মারবে অকঠোর মার আর তোমাদের উপর তাদের হক হল, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে (বাসস্থানসহ)।
তৃতীয় কথা হল, ‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা ধরে থাক, তবে তোমরা আমার পর কখনও বিপথগামী হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত’।
হে লোকসকল! তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, তখন কি বলবে? তারা উত্তরে বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি নিশ্চয়ই আমাদেরকে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, স্বীয় কর্তব্য সম্পাদন করেছেন এবং আমাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। তখন তিনি আপন শাহাদত অঙ্গুলী আকাশের দিকে উঠিয়ে এবং তা দ্বারা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক, আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক।
অতঃপর বেলাল আযান দিলেন ও একামত বললেন এবং রাসূল (ছাঃ) যোহর পড়লেন। বেলাল পুনরায় একামত বললেন এবং রাসূল (ছাঃ) আছর পড়লেন এবং তাদের মধ্যখানে অপর কোন নফল পড়লেন না। তৎপর তিনি কাছওয়া উঠনীতে সওয়ার হয়ে মাওকেফে (অবস্থানস্থলে) পৌঁছলেন এবং তার পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মাশাতকে আপন সম্মুখে করে ক্বিবলার দিকে হলেন। এভাবে তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ না সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল এবং পিত্তাভ বর্ণ কিছুটা চলে গেল। অবশেষে সূর্য গোলক সম্পূর্ণ নীচে অদৃশ্য হয়ে গেল। অতঃপর তিনি উসামাকে স্বীয় সওয়ারীর পিছনে বসালেন এবং সওয়ারী চালাতে লাগলেন যতক্ষণ না মুযদালিফায় পৌঁছলেন। তথায় তিনি এক আযান ও দুই একামতের সাথে মাগরিব ও এশা পড়লেন এবং তাদের মধ্যখানে কোন নফল পড়লেন না। অতঃপর শুয়ে থাকলেন, যতক্ষণ না উষা উদয় হল। তৎপর যখন উষা পরিষ্কার হয়ে গেল আযান ও একামতের সাথে ফজরের ছালাত পড়লেন। অতঃপর তিনি কাছওয়ায় সওয়ার হলেন, যাতে তিনি মাশ‘আরুল হারাম নামক স্থানে পৌঁছলেন। তথায় তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ করলেন, তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করলেন, কালেমায়ে তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। তিনি তথায় দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন, যতক্ষণ না আকাশ খুব ফর্সা হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই সওয়ারী চালিয়ে দিলেন এবং (স্বীয় চাচাত ভাই) ফযল ইবনু আববাসকে সওয়ারীর পিছনে বসালেন, যাতে তিনি ‘বাতনে মুহাসসির’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সওয়ারীকে কিছু উত্তেজিত করলেন। অতঃপর তিনি মধ্যম পথ ধরলেন যা বড় জামরার দিকে গিয়েছে। সুতরাং তিনি ঐ জামরার নিকট পৌঁছলেন, যা গাছের নিকটে আছে (অর্থাৎ বড় জামরা) এবং বাতনে ওয়াদী অর্থাৎ নীচের খালি জায়গা হতে তার উপর সাতটি কাঁকর মারলেন, মর্মর দানার মত কাঁকর এবং প্রত্যেক কাঁকরের সাথে আল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর সেখান হতে ফিরলেন কুরবানীর স্থানের দিকে এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কুরবানী করলেন, আর যা বাকী থাকল তা আলীকে দিলেন। তিনি তা কুরবানী করলেন। তিনি স্বীয় পশুতে আলীকেও শরীক করলেন। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যাতে প্রত্যেক পশু হতে কিছু অংশ নেওয়া হয় এবং একত্রে পাকনো হয়। তদানুযায়ী একটি ডেগে তা পাকানো হল এবং তাঁরা উভয়ে তার মাংস খেলেন ও শুরুয়া পান করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সওয়ার হলেন এবং বায়তুল্লাহর দিকে রওয়ানা হলেন এবং মক্কায় গিয়ে যোহর পড়লেন। অতঃপর তিনি (আপন গোত্র) বনী আব্দুল মুত্তালিবের নিকট পৌঁছলেন, যারা যমযমের পাড়ে দাঁড়িয়ে লোকদের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন, হে বনী আব্দুল মুত্তালিব! টান, টান, যদি আমি আশংকা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোক তোমাদেরকে পরাভূত করে দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি টানতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি দিলেন এবং তা হতে তিনি কিছু পান করলেন’ (মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/২৪৪০)।