লগইন করুন
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা সেসব মানুষের অবশ্য কর্তব্য, যারা শারীরিক ও আর্থিকভাবে ঐ পথ অতিক্রমে সমর্থ এবং যদি অস্বীকার করে তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে মুখাপেক্ষিহীন (আলে ইমরান ৯৭)।
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ.
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত; অতএব কেউ যদি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজ্জের সংকল্প করে, তবে সে হজ্জের মধ্যে সহবাস, অশালীনকর্ম ও কলহ করতে পারবে না এবং তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন; আর তোমরা (নিজেদের) পাথেয় সঞ্চয় করে নাও; বস্তত নিশ্চিত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাভীতি এবং হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর (বাক্বারাহ ১৯৭)।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُّعْتِقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِيْ بِهِمْ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ-
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিনে অন্যদিনের চেয়ে বেশী মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি সেদিন তাদের অতি নিকটবর্তী হন এবং তাদের নিয়ে ফিরিশতাদের সামনে গর্ব করেন এবং বলেন এরা কি চায় বল? তারা যা চায় আমি তাই দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৯৪; বাংলা মিশকাত হা/২৪৭৮)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আরাফার দিন প্রচুর মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। সেদিন মানুষ আল্লাহর কাছে যা চাইবে তিনি তাই দান করবেন। সেদিন আল্লাহ মানুষকে দেয়ার জন্য খুব নিকটবর্তী হয়ে যান।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَزَلَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ-
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হাজারে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয় তখন দুধ অপেক্ষা অধিক সাদা ছিল। পরে আদম সন্তানের গুনাহ তাকে কাল করে দিয়েছে’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২৫৭৭; বাংলা মিশকাত হা/২৪৬২)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, লাঠি, হাত বা ইশারা করে যে কোনভাবে হাজারে আসওয়াদকে চুমা দিতে পারলে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। গোনাহর খারাপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার প্রমাণ এই পাথর।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَجَرِ وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ-
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে উঠাবেন, তখন তার দু’টি চোখ হবে যদ্দারা তা দেখবে এবং তার একটি জিহবা হবে যদ্দারা তা বলবে এবং যে তাকে ঈমানের সাথে চুম্বন করেছে তার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিবে’ (তিরমিযী, বাংলা মিশকাত হা/২৪৬৩)।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ: إِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ قِيْلَ: ثُمَّ مَاذَا قَالَ: الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ: ثُمَّ مَاذَا قَالَ: حَجٌّ مَبْرُوْرٌ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোন আমল শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করা। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল তারপর কি? রাসূল বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, তারপর কি? তিনি বললেন, কবুলকৃত হজ্জ’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৬)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সবচেয়ে উত্তম আমল হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস রাখা। দ্বিতীয় উত্তম আমল হল আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তৃতীয় উত্তম আমল হল কবুল হজ্জ, যার বিনিময় হল জান্নাত।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হজ্জ করল এবং এ হজ্জের মধ্যে কোন অশ্লীল কথা ও কর্মে লিপ্ত হল না, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৭; বাংলা মিশকাত হা/২৩৯৩)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, হজ্জ পাপ মোচনের এক শক্তিশালী মাধ্যম। হজ্জ কবুল হলে মানুষ সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর এ হজ্জের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ওমরা অপর ওমরা পর্যন্ত কাফফারা স্বরূপ এবং কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৮; বাংলা মিশকাত হা/২৩৯৪)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, একবার ওমরা করার পর আর একবার ওমরা করলে মধ্যবর্তী গুনাহ সমূহ মুছে যাবে। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত। হজ্জ কবুল হলে আল্লাহ তাকে নিঃসন্দেহে জান্নাত দান করবেন। কারণ এটাই তার চূড়ান্ত প্রতিদান।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ عُمْرَةً فِيْ رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً-
আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘রামাযান মাসের ওমরা হজ্জের সমান’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৯; বাংলা মিশকাত হা/২৩৯৫)। এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় যে, রামাযান মাসে ওমরা করলে কবুল হজ্জের সমান নেকী দেয়া হবে। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ-
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা একসাথে কর। কেননা হজ্জ ও ওমরা এমনভাবে দরিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে যেভাবে কামারের হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার মরিচা দূর করে। কবুল হজ্জের ছওয়াব জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছুই নয়’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২৫২৪; বাংলা মিশকাত হা/২৪১০)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল হজ্জ-ওমরা একসাথে করা ভাল। যার নাম কেরান। তবে ওমরা করার পরও হজ্জ করা, যার নাম তামাত্তু। কামারের হাঁপর যেভাবে আগুনের সাহায্যে লোহা এবং সোনা-রূপার মরিচা দূর করে দেয়, তেমন হজ্জ ও ওমরা মানুষের গুনাহ মুছে দেয়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, হজ্জের চূড়ান্ত প্রতিদান জান্নাত।