লগইন করুন
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُغِيْرُ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ وَكَانَ يَسْتَمِعُ الْأَذَانَ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا أَمْسَكَ وَإِلاَّ أَغَارَ فَسَمِعَ رَجُلاً يَقُوْلُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْفِطْرَةِ ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجْتَ مِنَ النَّارِ فَنَظَرُوْا فَإِذَا هُوَ رَاعِيْ مِعْزًى-
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ফজরের সময় শত্রুদের প্রতি আক্রমণ চালাতেন এবং আযান শুনার জন্য কান পেতে থাকতেন। যদি আযান শুনতেন তাহলে আক্রমণ হতে বিরত থাকতেন। অন্যথা আক্রমণ চালাতেন। একদা এক ব্যক্তিকে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলতে শুনলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি ইসলামের উপর আছ। অতঃপর লোকটি বলল, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করলে। অতঃপর ছাহাবীগণ সেই মুয়াযযিনের দিকে লক্ষ্য করলেন, দেখলেন সে একজন রাখাল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬০; বাংলা মিশকাত হা/৬০৯)।
মোটকথা একা হলেও আযান দেয়া সুন্নাত। মাঠে-ঘাটে যে কোন স্থানে আযান দিয়ে ছালাত আদায় করা সুন্নাত। আযানের প্রতিদান জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ।
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ المُؤَذِّنَ أشْهَدُ أنْ لاَ إلَه إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ رَبّاً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً، وَبِالإسْلامِ دِيْناً، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ-
সা‘দ ইবনু আবু ওয়াককাছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, أشْهَدُ أنْ لاَ إلَه إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ رَبّاً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً، وَبِالإسْلامِ دِيْناً، ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে প্রতিপালকরূপে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে রাসূলরূপে এবং ইসলামকে দ্বীনরূপে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬১; বাংলা মিশকাত হা/৬১০)। অর্থাৎ আযান শেষে উক্ত দো‘আ পড়লে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْجَبُ رَبُّكَ مِنْ رَاعِى غَنَمٍ فِىْ رَأْسِ شَظِيَّةٍ لِلْجَبَلِ، يُؤَذِّنُ بِالصَّلاَةِ وَيُصَلِّى، فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : انْظُرُوْا إِلَى عَبْدِىْ هَذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ لِلصَّلاَةِ يَخَافُ مِنِّىْ قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ-
ওক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূর (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমার প্রতিপালক খুশি হন সেই ছাগলের রাখালের প্রতি যে একা পর্বতশিখরে দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। তখন আল্লাহ ফিরিশতাগণকে ডেকে বলেন, তোমরা আমার এই বান্দাকে দেখ? সে আযান দেয় ও ছালাত ক্বায়েম করে এবং আমাকে ভয় করে। (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/৬৬৫; বাংলা মিশকাত হা/৬১৪)।
আল্লাহ মুয়াযযিনের প্রতি খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতবাসী করেন। আর ফিরিশতাগণকে তা জানান।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ مَدَّ صَوْتِهِ وَيَشْهَدُ لَهُ كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ وَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ صَلَّى وَشَاهِدُ الصَّلَاةِ يُكْتَبُ لَهُ خَمْسٌ وَّعِشْرُوْنَ صَلَاةً وَيُكَفَّرُ عَنْهُ مَا بَيْنَهُمَا-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুয়াযযিনের কণ্ঠের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হবে এবং (ক্বিয়ামতের দিন) তার কল্যাণের জন্য প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত সাক্ষ্য দিবে এবং এই আযান শুনে যত লোক ছালাত আদায় করবে সবার সমপরিমাণ নেকী মুয়াযযিনের হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হবে তার জন্য পঁচিশ ছালাতের নেকী লেখা হবে এবং তার দুই ছালাতের মদ্যকার গুনাহ ক্ষমা করা হবে’ (নাসাঈ, হা/৬৬৭)।
হাদীছের মর্মকথা : মুয়াযযিনকে ক্ষমা করা হবে প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। এই ছালাতে যত লোক উপস্থিত হবে সমস্ত লোকের সমপরিমাণ নেকী মুয়াযযিনকে দেয়া হবে। তার দুই ওয়াক্তের ছালাতের মধ্যকার গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং আযান শেষে যা চাইবে তা দেয়া হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ الْمُؤَذِّنِيْنَ يَفْضُلُوْنَنَا بِأَذَانِهِمْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْ كَمَا يَقُوْلُوْنَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَ-
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মুয়াযযিনগণ আমাদের চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করছেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমিও বল যেরূপ তারা বলে এবং যখন আযানের জওয়াব দেয়া শেষ হবে তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, তাহলে তোমাকেও প্রদান করা হবে’ (আবদাঊদ, হাদছি ছাহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্বে মিশকাত হা/৬৭৩; বাংলা মিশকাত হা/৬২২)। অত্র হাদীছে মুছল্লীর চেয়ে মুয়াযযিনের মর্যাদা বেশী বলা হয়েছে। তবে শ্রোতা আযানের জওয়াব দিলে শ্রোতাকেও তাই দেয়া হবে যা মুয়াযযিনকে দেয়া হবে এবং আযানের পর যা কিছু চাইবে, তা প্রদান করা হবে।
عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ بِلاَلٌ يُنَادِيْ فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا يَقِيْنًا دَخَلَ الْجَنَّةَ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম তখন বেলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। যখন বেলাল (রাঃ) আযান শেষ করলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে এর অনুরূপ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্বে মিশকাত হা/৬৭৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, যে কোন ব্যক্তি মনে-প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযান দিলে অথবা আযানের উত্তর দিলে সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ بِلاَلٌ يُنَادِيْ فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا يَقِينًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، ورواه أبو يعلى عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم عَرَّسَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَأَذَّنَ بِلاَلٌ، فَقَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم: مَنْ قَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ، وَشَهِدَ مِثْلَ شَهَادَتِهِ فَلَهُ الْجَنَّةُ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম তখন বেলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। যখন বেলাল (রাঃ) আযান শেষ করলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে এর অনুরূপ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (নাসাঈ হাদীছ ছহীহ)। আবু ইয়া‘লা আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন রাসূল (ছাঃ) এক রাত্রি যাপন করলেন। তখন বেলাল আযান দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার (বেলালের) কথার অনুরূপ বলবে এবং তার সাক্ষ্য দানের মত সাক্ষ্য দিবে তার জন্য জান্নাত’ (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান)।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَذَّنَ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِيْنِهِ فِيْ كُلِّ مَرَّةٍ سِتُّوْنَ حَسَنَةً وَبِإِقَامَتِهِ ثَلاَثُوْنَ حَسَنَةً-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে বার বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে ষাট নেকী এবং এক্বামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকী অতিরিক্ত লেখা হয়’ (ইবনু মাজাহ, হাদীছ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭২৭)। প্রকাশ থাকে যে, সাত বছর আযান দিলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৬৬৪)।