লগইন করুন
যারা ইবাদত করে বড় নেকীর অধিকারী হয়, মুয়াযযিন তাদের একজন। আযান দেওয়ার বিনিময় জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জান্নাত লাভ। ক্বিয়ামতের ময়দানে বড় সম্মানের অধিকারী হবেন। মানুষ জিন ও পৃথিবীর সকল বস্ত্ত ক্বিয়ামতের দিন মুয়াযযিনের জন্য কল্যাণের সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তা‘আলা আযানের ব্যাপারে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে জুম‘আর দিন ছালাতের জন্য ডাকা হবে, তখন তোমরা আল্লাহকে ডাকার জন্য দৌড়ে আস। আর ক্রয়-বিক্রয় ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জান’ (জুম‘আহ ৯)।
عَنْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيَّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ، وَلاَ إنْسٌ، وَلاَ شَيْءٌ، إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ القِيَامَةِ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে কোন মানুষ ও জিন অথবা যে কোন বস্ত্ত মুয়াযযিনের কণ্ঠ শুনবে সে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬; বাংলা মিশকাত হা/৬০৫)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর সকল বস্ত্ত কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনের জন্য কল্যাণ চাইবে। জাহান্নাম হতে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নিকট দাবী জানাবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لِي الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِيْ إِلاَّ لِعَبْدٍ مِّنْ عِبَادِ اللهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ اللهَ لِي الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ-
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন তার জওয়াবে বল মুয়াযযিন যা বলে। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়। কেননা যে আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও। আর তা হচ্ছে জান্নাতের একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মাত্র একজন বান্দার জন্য উপযোগী। আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’ চাইবে তার জন্য আমার শাফা‘আত যরূরী হয়ে যাবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭; বাংলা মিশকাত হা/৬০৬)।
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمْ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ-
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন মুয়াযযিন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ যদি তোমাদের কেউ বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’, অতঃপর যখন মুয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, মুয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’, এরপর মুয়াযযিন বলে, ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ’ সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, পুনরায় যখন মুয়াযযিন বলে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, পরে যখন মুয়াযযিন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ সেও বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’। অতঃপর যখন মুয়াযযিন বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আর এই বাক্যগুলি মনে-প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে বলে তাহলে সে জান্নাতে যাবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮; বাংলা মিশকাত হা/৬০৭)।
অত্র হাদীছ দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুয়াযযিনের সাথে সাথে শ্রোতাকেও জওয়াব দিতে হবে। আর হাইয়্যা আলা দ্বয় ব্যতীত মুয়াযযিন ও শ্রোতার শব্দ একই হবে। আযান শেষে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পড়তে হবে। জান্নাতের মর্যাদাপূর্ণ সুউচ্চ স্থান রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য চাইতে হবে। মনে-প্রাণে আগ্রহ সহকারে আযানের জওয়াব দিতে হবে। যার বিনিময় জান্নাত।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الوَسِيْلَةَ، وَالفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَّحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِيْ يَوْمَ القِيَامَةِ-
জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে বলবে, اللهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الوَسِيْلَةَ، وَالفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَهُ ‘হে এই পূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের প্রতিপালক! আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে উচ্চ মর্যাদা দান করুন এবং প্রশংসনীয় স্থানে তাঁকে অধিষ্ঠিত করুন। যার ওয়াদা আপনি করেছেন। ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত যরূরী হয়ে যাবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯; বাংলা মিশকাত হা/৬০৮)।
প্রকাশ থাকে যে, কেউ কেউ অত্র হাদীছে দু’টি অংশ বৃদ্ধি করেছে- ১. اَلدَّرَجَةَ الرَّفِيْعَةَ ২. اِنَّكَ لاَتُخْلِفُ الْمِيْعَادَ এ দু’টি অংশের কোন ভিত্তি নেই (আলবানী, তাহকবীক্ব মিশকাত, টীকা নং ২)। অতএব উক্ত বাক্যাংশ দু’টি বলা থেকে সাবধান হতে হবে।