লগইন করুন
যেসব আমলের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করতে পারে, ছালাত তার অন্যতম। ছালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ বড় লাভবান হতে পারে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ- ‘নিশ্চয়ই ছালাত মানুষকে অশ্লীল ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ৪৫)।
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاَةُ فَإِنْ صَلُحَتْ صَلُحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ-
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে সর্বপ্রথম ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যদি তার ছালাত গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সমস্ত আমল গ্রহণীয় হবে। আর যদি ছালাত গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে সমস্ত আমলই বাতিল হবে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৯৮)। ছালাত এমন একটি ইবাদত যা আল্লাহর নিকট গৃহীত হলে বাকী আমলগুলিও গৃহীত হবে। অন্যথা সব আমল বাতিল হবে। কারণ সমস্ত ইবাদতের ভিত্তি ইবাদত হচ্ছে ছালাত।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ الصَّلاَةُ ثَلاَثَةُ أَثْلاَثٍ الطُّهُوْرُ ثُلُثٌ وَالرُّكُوْعُ ثُلُثٌ وَالسُّجُوْدُ ثُلُثٌ فَمَنْ أَدَّهَا بِحَقِّهَا قُبِلَتْ مِنْهُ وَقُبِلَ مِنْهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَمَنْ رُدَّتْ عَلَيْهِ صَلاَتُهُ رُدَّ عَلَيْهِ سَائِرُ عَمَلِهِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের ছওয়াব তিনভাগে বিভক্ত। একভাগ পবিত্রতার মাধ্যমে দ্বিতীয় ভাগ রুকূর মাধ্যমে তৃতীয়ভাগ সিজদার মাধ্যমে। যে এইগুলি পূর্ণ আদায় করল তার ছালাত গৃহীত হল এবং সমস্ত আমলও গৃহীত হল। আর যার ছালাত গ্রহণ করা হবে না, তার কোন আমলই গ্রহণ করা হবে না’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৩)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছালাত কবুল হওযার জন্য তিনটি কাজ সুন্দর হওয়া যরূরী- ১. ওযূ- ওযূ সুন্দর না হলে ছালাত কবুল হবে না। ২. রুকূ যথাযথ পূর্ণ না হলে ছালাত কবুল হবে না। ৩. সিজদা যথাযথ পূর্ণ না হলে ছালাত কবুল হবে না। আর ছালাত কবুল না হলে সমস্ত আমল বাতিল হবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّراتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হতে অপর জুম‘আ পর্যন্ত, এক রামাযান হতে অপর রামাযান পর্যন্ত কাফফারা হয় সে সমস্ত গুনাহের যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়। যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪; বাংলা মিশকাত হা/৫১৮)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, জুম‘আর ছালাত এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে ছগীরা গুনাহ মাফ হয়। কারণ কবীরা গুনাহ মাফের জন্য তওবা শর্ত। আর কোন দিন এমন গুনাহ করব না এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে মনে অনুশোচনা নিয়ে বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট তওবা করলে বড় গুনাহ মাফ হতে পারে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالُوا لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আচ্ছা বলতো যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার কিছু ময়লা বাকী থাকবে কি? ছাহাবীগণ বললেন, কোন ময়লা থাকবে না। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এইরূপ উদাহরণ হচ্ছে পাঁচওয়াক্ত ছালাতের। আল্লাহ এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মাধ্যমে গুনাহ সমূহ মুছে দেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৫; বাংলা মিশকাত হা/৫১৯)। হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা মনোযোগ সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে তাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা হয়ে যায়।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوْءَهُنَّ وَصَلاَّهُنَّ وَأَتَمَّ رُكُوْعَهُنَّ وَخُشُوْعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَّغْفِرَ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ-
ওবাদা ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি ছালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে ওযূ করবে এবং ঠিক সময়ে ছালাত আদায় করবে এবং পূর্ণ ভয়-ভীতি নিয়ে বিনয়ের সাথে তার রুকূ পূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি রয়েছে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে এভাবে আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর উপর কোন প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাকে মাফ করবেন, ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন’ (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৭০; বাংলা মিশকাত হা/৫২৪)।
ব্যাখ্যা : পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয। কোন ব্যক্তি যদি সুন্দর করে ওযূ করে ভয়-ভীতি সহকারে ঠিক সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে। এভাবে ছালাত আদায়কারীর গুনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন। যারা সুন্দর করে ওযূ করে না ছালাতের রুকন সমূহ ও খুশূকে পরিপূর্ণ করে না, তাদের গুনাহ ক্ষমা করার ব্যাপারে আল্লাহর কোন ওয়াদা নেই।