লগইন করুন
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ-
‘হে আমার বান্দাগণ যারা অপরাধ করেছ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু’ (যুমার ৫৩)।
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ.
আর (স্মরণ কর) আইয়ুব (আঃ)-এর কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিলেন, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু (আম্বিয়া ৮৩)
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
বল, হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই দয়ালু (মুমিনূন ১১৮)।
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ও আমাদের উপর দয়া করুন, আপনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু (মুমিনূন ১০৯)।
رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا.
হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন (কাহাফ ১০)।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ كِتَبًا فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ عَرْشِهِ إِنَّ رَحْمَتِيْ سَبَقَتْ غَضَبِيْ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, একটি লিপি লিখলেন যা তাঁর নিকট তাঁর আরশের উপর আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধ অতিক্রম করেছে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৪; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ অন্যায়ের জন্য শাস্তি দিতে চান না; বরং সব সময় ক্ষমা করতে চান।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِلَّهِ مِائَةَ رَحْمَةٍ أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالْبَهَائِمِ وَالْهَوَامِّ فَبِهَا يَتَعَاطَفُوْنَ وَبِهَا يَتَرَاحَمُونَ وَبِهَا تَعْطِفُ الْوَحْشُ عَلَى وَلَدِهَا وَأَخَّرَ اللهُ تِسْعًا وَتِسْعِيْنَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর একশত রহমত রয়েছে যা হতে একটি মাত্র রহমত তিনি জিন, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে নাযিল করেছেন। এ দ্বারাই তারা একে অন্যকে মায়া করে। এর মাধ্যমেই একে অন্যকে দয়া করে এবং এর মাধ্যমেই ইতর প্রাণীরা তাদের সন্তানদেরকে ভালবাসে। বাকী নিরানববইটি রহমত ক্বিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দ্বারা তিনি ক্বিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের প্রতি রহমত করবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৫; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৬)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহ একটি রহমত সমস্ত প্রাণীর মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। যার কারণে সকল প্রাণী নিজ নিজ সন্তানকে আদর করে। মানুষ সন্তানকে আববু-আম্মু বলে ডেকে আদর করে চুমু খায়। গাভী তার বাচ্চাকে আদর করে জিহবা দিয়ে চাটে, মুরগী তার বাচ্চাকে আদর করে ডাকে। একটি দয়ার প্রতিক্রিয়া যদি এত হয়, তাহলে নিরানববইটি দযা আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য ক্বিয়ামতের মাঠে নিয়ে আসবেন, তার প্রতিক্রিয়া কত হতে পারে। অতএব ক্বিয়ামতের মাঠে দয়া ও রহমত পাব বলে পূর্ণ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِنْدَ اللهِ مِنْ الْعُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللهِ مِنْ الرَّحْمَةِ مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أَحَدٌ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি মুমিন জানত আল্লাহর নিকট কি শাস্তি রয়েছে, তাহলে তাঁর জান্নাতের আশা কেউ করত না। আর যদি কাফের জানত আল্লাহর নিকট কি পরিমাণ দয়া রয়েছে, তবে কেউ তার জান্নাত হতে নিরাশ হত না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৭; বাংলা মিশকাত হা/২২৫৭)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, আল্লাহর রহমত ও শাস্তির অবস্থা যখন এই তখন মানুষের পক্ষে আশা ও নিরাশার মধ্যাবস্থায় থাকাই উচিত। জীবদ্দশায় ভয় ও মরণকালে আশা পোষণ করাই বাঞ্ছনীয়। নির্ভীক হওয়া এবং নিরাশ হওয়া কুফরী।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اَللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ لِأَهْلِهِ وَفِيْ رِوَايَةٍ أَسْرَفَ رَجُلٌ عَلَى نَفْسِهِ فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ أَوْصَى بَنِيْهِ فَإِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ ثُمَّ اذْرُوا نِصْفَهُ فِي الْبَرِّ وَنِصْفَهُ فِي الْبَحْرِ فَوَاللهِ لَئِنْ قَدَرَ اللهُ عَلَيْهِ لَيُعَذِّبَنَّهُ عَذَابًا لاَ يُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِنْ الْعَالَمِيْنَ، فَلَمَّا مَاتَ فَعَلُوْا مَا أَمَرَهُمْ فَأَمَرَ اللهُ الْبَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيْهِ وَأَمَرَ الْبَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيْهِ ثُمَّ قَالَ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا؟ قَالَ مِنْ خَشْيَتِكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ فَغَفَرَ لَهُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি কখনো কোন ভাল কাজ করেনি। তার পরিবার-পরিজনকে বলল, অন্য বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি নিজের প্রতি অবিচার করল, বড় অপরাধ করল। কিন্তু যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল, তখন সে তার সন্তানদের অছিয়ত করল, যখন সে মারা যাবে তখন তাকে যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। অতঃপর অর্ধেক স্থলে ও অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর কসম! যদি তিনি তাকে ধরতে সক্ষম হন, তবে এমন শাস্তি দিবেন যা জগতের কাউকে কখনো দেননি। যখন সে মারা গেল তার নির্দেশ মত সন্তানরা কাজ করল। আল্লাহ সমুদ্রকে হুকুম দিলেন, সমুদ্র তার মধ্যে যা ছিল তা একত্র করে দিল। এভাবে স্থল ভাগকে নির্দেশ দিলেন, স্থলভাগ তার মধ্যে যা ছিল তা একত্র করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এরূপ করেছিলে? সে বলল, হে প্রতিপালক! তোমার ভয়ে এরূপ করেছি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৯)।
ব্যাখ্যা : লোকটি অজ্ঞ ছিল। আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা ছিল না। কিন্তু অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল। লোকটির ধারণা সে এত বড় পাপী যে আল্লাহ তাকে এত কঠিন শাস্তি দিবেন যে শাস্তি পৃথিবীর আর কোন মানুষকে দিবেন না। এরপরও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অতএব যে কোন বড় অপরাধী ক্ষমা পেতে পারে ইনশাআল্লাহ।