লগইন করুন
নবী করীম (ছাঃ) মানুষকে বিদায় দেওয়ার সময় বলতেন,
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وآخِرَ عَمَلِكَ وَزَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ-
‘আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত ও তোমার শেষ কর্মকে আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখলাম। আল্লাহ তোমাকে পরহেযগারিতা দান করুন। আল্লাহ তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন তুমি যেখানেই থাক’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩২৪)। এ হাদীছে বিদায় জানানোর সুন্নাতী তরীকা বর্ণিত হয়েছে। যা অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য যরূরী। কিন্তু বর্তমানে মানুষ বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে ওকে, টাটা, বাই, বাই ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে বিদায় নেয় ও অন্যকে বিদায় জানায়। এসব পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। এগুলির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বরং এসবের কারণে ক্বিয়ামতের মাঠে বিধর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখমণ্ডল ও অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে আদর্শ পুরুষের চারটি গুণ তুলে ধরা হয়েছে। (১) তাকওয়া বা আল্লাহভীতি (২) উত্তম চরিত্র (৩) মুখ নিয়ন্ত্রণ (৪) লজ্জাস্থানের হেফাযত। এসব বিষয় কেউ অবলম্বন করতে পারলে সে আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। তার দ্বারা দেশ ও সমাজ উপকৃত হবে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে এবং সবাই তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হলে তাদের দ্বারা অন্যরা নির্যাতিত হবে না। সবাই শান্তি-নিরাপত্তা লাভ করবে এবং তাক্বওয়াশীল ব্যক্তি হবে জান্নাতী।
عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى-
হাসান বাছারী সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মান-মর্যাদা হল ধন-সম্পদ। আর ভদ্রতা-নম্রতা হল তাক্বওয়া অবলম্বন করা’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৪৮)। মানুষ কিভাবে ভদ্র-নম্র হতে পারে এ হাদীছে তার স্পষ্ট বিবরণ পেশ করা হয়েছে। পরহেযগারিতা ছাড়া মানুষ ভদ্র হতে পারে না। আর পরহেযগার মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে ভদ্র বলা যায় না। মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে তাকে বিচার করা যায় না। প্রকৃত পক্ষে তাকওয়াই মানুষকে শালীন-ভদ্র করে গড়ে তোলে।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَنْسَابَكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمُسَّبَةٍٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنِيْ آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تَمْلَئُوهُ لَيْسَ لِأَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِالدِّينِ وَالتَّقْوَى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلاً-
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের বংশ পরিচয় এমন কোন বস্ত্ত নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। দাড়িপাল্লার উভয় দিক যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দ্বীন ও তাক্বওয়া ছাড়া একজনের উপর আর একজনের কোন মর্যাদা নেই। তবে কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাকচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৯৩)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, বংশের নিন্দা করা যাবে না। আর পাল্লার উভয় দিক যেমন সমান, তেমনি আদম সন্তান হিসাবে সকল বংশের মানুষই সমান। সুতরাং একমাত্র তাক্বওয়াই হল উচু-নীচু মান নির্ধারণের মাধ্যম। এ হাদীছে উল্লেখিত দু’টি দোষ মানুষের অভদ্র হওয়ার মাধ্যম। (১) অশ্লীল বাকচারী (২) কৃপণ। যাকে তাকে যখন তখন যথেচ্ছা গালিগালাজ করা, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা অভদ্রতা। এগুলি পরিহার করা যেমন প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য, তেমনি কৃপণতা ত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য।