লগইন করুন
কুরআন তিলাওয়াতে তাড়াহুড়া ঠিক নয়। বরং মহান আল্লাহর বাণী বড় আদবের সাথে একটা একটা গোটা গোটা স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে, প্রত্যেক অক্ষরকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করে, যেখানে টানতে হয় সেখানে টেনে এবং যেখানে টানতে হয় না সেখানে না টেনে পাঠ করুন।
মহান আল্লাহ অনুরূপভাবে কুরআন পড়তে আদেশ দিয়ে বলেন,
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
অর্থাৎ, ---তুমি ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে কুরআন আবৃত্তি কর।[1]
তাড়াতাড়ি কুরআন পড়লে কুরআন পড়ার আসল উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। সঠিক উচ্চারণ না হওয়ার ফলে অর্থ উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা, তার দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া, উপদেশ গ্রহণ করা ইত্যাদি মহান উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। সুতরাং বেশী সওয়াব লাভের আশায় অল্প সময়ে তাড়াহুড়া করে বেশী বেশী করে আয়াত পাঠ করার চাইতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে অল্প করে পড়াতেই বেশী উপকার ও সওয়াব আছে।
একজন কুরআনের মানে জানে ও তা বুঝে পড়ে, দ্বিতীয়জন মানে জানে কিন্তু না বুঝে পড়ে এবং তৃতীয়জন মানেই জানে না - এই তিনজনের পড়া এবং তাদের সওয়াব অবশ্যই সমান নয়।
রাসুল (ﷺ) আল্লাহর আদেশ অনুসারে ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে কুরআন পাঠ করতেন; তাড়াহুড়ো করে শীঘ্রতার সাথে নয়। বরং এক একটা হরফ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে পাঠ করতেন।[2]
আবৃত্তি করতে। যেহেতু যা তুমি পাঠ করতে তার সর্বশেষ আয়াতের নিকট তোমার স্থান হবে।’’[3]
তিনি বলতেন, ‘‘সে ব্যক্তি কুরআন বুঝে না, যে তিন দিনের কম সময়ে তা খতম করে।’’[4]
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি বলল, ‘আমি এক রাকআতে মুফাস্স্বাল (সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত অংশ) পাঠ করি।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘কবিতা আওড়ানোর মত পড়? কিছু সম্প্রদায় আছে যারা কুরআন পড়ে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠের নিচে নামে না। আসলে সেই কুরআন পাঠ কাজে দেবে, যা হৃদয়ে এসে গেঁথে যাবে এবং তা পাঠকারীকে উপকৃত করবে---।’[5]
একদা আবূ জামরাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আমি খুব তাড়াতাড়ি কুরআন পড়তে পারি। আমি তিন দিনে তা খতম করি। ইবনে আব্বাস বললেন, তুমি যা বলছ তার থেকে আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় এই যে, আমি এক রাতে সূরা বাক্বারাহ পড়ব এবং তার অর্থ বুঝে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে ধীরে ধীরে পাঠ করব।[6]
শুদ্ধভাবে তাড়াতাড়ি পড়ায় দোষ নেই। তবুও ধীরে ধীরে সুন্দরভাবে পড়াই উত্তম। আসলে যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে অনেক আয়াত পাঠ করে, সে ব্যক্তি হল তার মত যে ছোট ছোট অনেক মোতি বা অলঙ্কার দান করে। আর যে ব্যক্তি সুন্দর করে ধীরে ধীরে অল্প আয়াত পাঠ করে, সে ব্যক্তি হল তার মত যে বড় আকারের সমমূল্যের অথবা অপেক্ষাকৃত বেশী মূল্যের একটি মাত্র মোতি বা অলঙ্কার দান করে। অবশ্য এর বিপরীতও হতে পারে।[7]
[2]. ইবনুল মুবারক, যুহ্দ, আদাঃ, আঃ সিসানঃ ১২৪পৃঃ
[3]. আবূ দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, সহীহুল জা’মে হা/৮১২২
[4]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ প্রমুখ, সহীহুল জা’মে হা/৭৭৪৩
[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৭৭৫, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৮২২
[6]. ফাযায়েলুল কুরআন, ইবনে কাসীর ২৩৬পৃঃ, কিতাবুল আদাব ২৩পৃঃ
[7]. ফাতহুল বারী ৮/৭০৭